পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী: একটি দর্শক পর্যালোচনা
একটি গতানুগতিক বাংলা প্রেমের সিনেমা কেমন হওয়া উচিত? থাক, আমাকে বলতে হবে না। আপনি মনে মনে যে চিত্র দাড় করিয়েছেন , এই সিনেমা তার থেকে কোন দিকেই কম হবে না। সিনেমাটিতে ব্যবহার করা রাজ্জাক-আনোয়ার নাম আমার মনে নাই, তাদের দুই নাতি-নাতনীর (শাকিব খান-মিমো) বিয়ে দিতে চান। দুই জন অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হয়। বাগদান অনুষ্ঠানে মিমোকে কনের সাজে দেখে রাজ্জাক সাহেবের মেয়ে নিশাতের (দিতি) কথা মনে হয়ে যায় এবং তিনি স্ট্রোক করেন। প্রিয় পাঠক, আপনারা সবাই জানেন সিনেমার শুরুতেই উনার কিছু হবেনা, হলোও না কিন্তু ………ডাক্তার বলে দিলেন উনাকে আর মানসিক চাপে রাখা যাবেনা। কিসের জন্য দাদুর এত মনসিক চাপ জানতে শাকিব দিদাকে জিজ্ঞেস করেন। দিদা বলে দেন ২০ বছর আগের কথা। তাদের মেয়ে নিশাতের প্রেম করে এক লজিং মাস্টারের হাত ধরে বাড়ি ছাড়ার কথা।
শাকিবের বয়স সিনেমায় ২০ এর কম বলে আমার মনে হল না। সে কেন তার এক ফুফুর খবর জানল না তার কোন উল্লেখ সিনেমাতে নেই। যাই হোক বাদ দিলাম এটা। বিয়ের সময় লজিং মাস্টার (সুব্রত) কোথায় পড়ে তার কোন ইংগিত নেই। কিন্তু ২০ বছর পরে মালয়েশিয়াতে দেখা গেল উনি ডাক্তার। মানলাম এটাও, কিন্তু ২০ বছরে জারার মত (জয়া) মেয়ে যে কিনা কাজ করে জাতিসংঘের একটা শিশুদের নিয়ে প্রকল্পে বানানো কেমনে সম্ভব বুজলাম না। বিয়ের দিন বাচ্চা পেটে আসলেও তো বয়স উনিশের বেশি হওয়ার কথা না!!
যাই হোক আগের লাইনে আসি, জয় (শাকিব খান) সিদ্ধান্ত নিল ফুফুকে ফিরিয়ে এনে দাদুর কষ্ট দূর করবে। এই জন্য ফেসবুক ব্যবহার করে জেনে নিল নিশাত শিকদার আছেন মালয়েশিয়া। ভাল, জয় চলে গেল সেখানে গিয়ে নায়িকাকে বলছে ,আমি লন্ডন প্রথম আসলাম তাই কিছু চিনি না। (যদি আমি ভুল শুনে না থাকি)।
জারার সাথে দেখা হওয়ার পর চুলায় উঠলো খোজা খুজি। নায়িকার সাথে দুস্টামি করতে করতে কয়েক দিন কাটিয়ে নায়ক আবার সাজু খাদেমকে বলে, আমি আজ প্রথম আসলাম। আমি পুরাই থ!
সংলাপ এর কথা বলে লাভ নেই, বিশেষ করে আনোয়ারার মুড়ি খাওয়ানো, জয়ার সাথে শাকিবের সম্পর্কের কথা জানার পর সুব্রতর মুখে ২০ বছর আগের রাজ্জাকের হুবহু সংলাপ খুব বিরক্তি সৃষ্টি করেছে। তখন হল ভর্তি মানুষ খুজ মজা পেয়েছে অবশ্য।
অভিনয়ের কথা বলতে গেলে শাকিব, জয়া ভাল অভিনয় করেছে। জয়া বয়সের ছাপ একটু বেশি প্রকট হয়ে দেখা গেছে যদিও। মিমো ফালতু অভিনয় করেছে। গেস্ট উপস্থিতিতে ববিতা জঘন্য করেছে। রাজ্জাক– আনোয়ারা সো সো। আর আরিফিন শুভ কোন কারন ছাড়াই হঠাৎ হঠাৎ পর্দায় উপস্থিত হয়েছে ।
গানগুলো হয়তো ভালোই ছিল কিন্তু বিরতির আগেই ৫ টা গান যথেষ্ট বিরক্তি উৎপাদন করেছে।
গাটের টাকা খরচ করে আরাম আয়েসের কথা বাদ দিয়ে (আমাদের সিনেমা হল গুলোর কথা সবাই জানেন) সন্তুষ্ট হয়ে ফিরা যায়, যদি ভাল কাহিনী, সংলাপ আর চিত্রনাট্যের কিছু দেখানো হয়। পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনীর মত দীর্ঘ সময় পূর্ন মাত্রায় বিরক্ত হয়ে থাকার অনুভূতি উপভোগ্য কিছু নয়।
অবশেষে আমার মনে হয়েছে পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনীকে কোন মতেই বদলে যাওয়া বাংলা চলচিত্রের প্রতিনিধি বলা চলে না।
অফিস পালিয়ে দেখতে যাওয়া পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনীটি নানা কারনে চিরায়ত পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি হয়ে উঠেছে। সাকিব খানের ছ্যাবলামির সাথে সাথে নির্মাতাদের অত্যন্ত পছন্দের মুখের রঙ, মাথার খুলির উপর পড়া কুৎসিত পরচুলা ছবিকে করেছে দর্শননিন্দিত। আলেয়া বুড়ি আনোয়ারার মাথায় কচি কচি বাল!!!!!!! শুভ যদি কোন কারনে চলচ্চিত্রে থিতু হতে পারে, তবে এই ছবি তার ক্যারিয়ারের কালো তালিকায় থাকবে, জয়াকে ভাল লেগেছে। হাতির ঝিল হয়ে গেল মালয়েশিয়া এতবড় গাজাখুরি করার আগে নির্মাতাদের চিন্তা করা উচিত দর্শকরা সচেতন হয়েছে। ছবিতে ব্যবহৃত মালয়েশিয়ার অফিসে শুভর ল্যাপটপটিতে যে জুম আল্ট্রা মডেম ব্যবহৃত হয় তাও নজর এড়ায় না। ভূল ধরলে ছবি দেখার স্বাদ নষ্ট হয় কিন্তু চিরায়ত বাংলা ছবির হার্ট এ্যাটাকের মত বেমানান দৃশ্যসহ অতি সাধারন ভুলগুলো এ ছবিতে থাকবে না এরকম একটা ক্ষীণ প্রত্যাশা ছিল। বিশেষ করে যখন এ ছবির কাহিনীকার যথাক্রমে বলিউড হাঙ্গামা, হিন্দুস্থান টাইমস, জিং টিভি ও ইন্টারনেট অবলম্বনে রুম্মান রশিদ খান…
আমিও আশা নিয়ে ছিলাম………
একটু ইতিবাচক পর্যালোচনা করলে কি হত…
মুখ থুবড়ে পড়া বাংলা ছবির যে হাল…সেই তুলনায়…এই ছবি অনেক ভালো…
আমার দৃষ্টিতে এই ছবির কয়েকটা ভালো দিক।
গান ও করিওগ্রাফী সুন্দর।
সংলাপ গুলো খুব ভালো ভাবে লেখা হয়েছে।
ছবি তো ছবি এটাকে বাস্তবতার সাথে মিলানোর কোন যৌক্তিকতা খোজাঁর কি দরকার।
এগিয়ে যাক আমাদের চলচিত্র।
ইতিবাচক পর্যালোচনা করার জন্যই কাজ কর্ম বাদ দিয়ে মাঝে মাঝে সিনেমা হলে যাই। কিন্তু অনেক ঢাক-ডোল পিটিয়ে যে আশ্বডিম্ব প্রসব করা হয় তা নিয়ে মনে হয় পরিচালকেরা আত্নতুষ্টিতে ভোগে। নইলে এত দিনে গল্প, সংলাপ আর আর চিত্রনাট্যতে কিছু পরিবর্তন আসার কথা।
সত্যি কথা বলতে ,লেখক কি রকম দর্শক সেটা খুজেঁ দেখতে হবে ।কারন তিনি এই মুভিটি দেখার সময় সবর্দা দোষ ধরায় ব্যাস্ত ছিল তাই দোষ আর গুনগুলোকে একসাথে গুলিয়ে ফেলেছে ।এখন আমাদের সিনেমা পরিবর্তন হচ্ছে যুগের তাল মেলাচ্ছে ।এখন একটু প্রশংসা করে নির্মাতাদের উত্সাহ দিবেন তা না করে দর্শকদের মনে বিষ ঢালছেন ।পারলে এমন একটা মুভি করে দেখান ।পারলে চ্যালেন্জ গ্রহন করুন ।গল্প লাগলে আমার কাছ থেকে নিতে পারেন ।
আপনার গল্প দরকার নেই, আপনার গল্প এর চেয়ে ভাল কিছু হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না। আর হা এর ছেয়ে ভাল ছবি আমি বানাতে পারি, বাজেট নিয়ে আমাকে মেইল করেন । আমি আপনার চ্যালেঞ্জ নিলাম। আর বাজে বকবেন না, এর চেয়ে ভাল অতি সাম্প্রতিক দুটি ছবি আমি দেখেছি, পোড়ামন আর ঊধাও, আরো অনেক নিশ্চয় আছে ,আমার দেখা হয় নি। …… আর হা , সব কিছুর পরেও আপনার মেইলের অপেক্ষায় রইলাম। গল্প নিয়ে চিন্তা করবেন না । পারলে এই ছবিটার সমান বাজেট নিয়ে আসুন। এর চেয়ে অনেক ভাল সিনেমা করে দেখাবো।
[বাংলা সিনেমার পরিবর্তনের জন্য এখন উতসাহও দরকার ,এটা আপনার আগে আরেক জন উপরে বলেছে, তার উত্তর আমারে এভাবে দিতে হয় নি। আরএই সিনেমাকে বারবার দেখে মন ভরবে না বলে বেশি প্রশংসা করলে মনে হয় ,মাস্টারপিছ সিনেমা হয়েছে অথবা যিনি বলেছেন উনার রুচি এরকম ই। ]
ভাই আপনি কি বাস্তব জীবন কি সেটা কখনো দেখছেন বা বুঝেন? এইটা কি অভিনয় ছিল না সিকোয়েন্সের সামঞ্জস্যতা ছিল, না বাস্তব সম্যত ছিল? বাস্তবতার বাইরে গিয়ে কৌতুক করা যেতে পারে অভিনয় নয়। আর চ্যালেঞ্জ দিছেন, আর বললেন কাহিনী আছে , আপনি যদি নেই ছবির প্রশংসা করেন তাহলে বোঝা গেছে আপনার ঝুলিতে কি কাহিনী থাকতে পারে। এই কাহিনী কোন রেডিও চ্যানেলে নিয়ে যান তাঁরা ১০ মিনিটে গল্পটা স্রোতাদের শোনাক , হয়ত তা তাঁরা এই দশটা মিনিট সহ্য করতে পারবে কিন্তু পাঁচটা গান দিয়ে তিন ঘণ্টার ছবি বানানোর চেষ্টা কইরেন না। দোহাই আপনার
ছবিটি এখনও দেখিনাই , তাই মন্তব্য করবো না। তবে সিনেমার সাথে বাস্তবতার মিল নাও থাকলে এখানে দর্শকের সাথে ছল চাতুরী করার কোন অপশন নাই। হলিউডের ফিল্ম এর বিশাল বাজেট আমরা করতে পারবনা, সেরকম আশাও অদুর ভবিষ্যতে আমরা করবনা , কিন্তু তাদের একটা কথা আমদের মানা উচিত ” In film you can not cheat ,even a little”. স্ক্রিপ্ট লেখক দের এই শিক্ষাটা আগে দেওয়া হয়। এবং এই শিক্ষাটা মানতে আমদের বাজেট বাড়ানোর দরকার নাই। তবে আমদের এখন কার ছবিগুলো অনেক ভাল হচ্ছে , হলে গিয়ে পুরো ছবি দেখতে পারি। চিত্রনাট্যে একটু সচেতন হলেই আমরা আমদের ছবি নিয়ে অনেকদুর যেতে পারবো ।
ছবির গল্প অনেক ক্ষেত্রে অড হতে পারে কিন্তু তা দর্শকের চোখে পড়ে না যদি অভিনয় দিয়ে তা ঢেকে দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে এ ছবিতে মনে হয়েছে কাহিনী যতই স্ট্রং হোক না কেন তা অনায়েসে হাস্যকর এবং অবাস্তবসম্মত করা সাকিবের পক্ষে কিছুই না। সে আসলেই তা শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে যচ্ছেন তাঁর অদ্ভূত সব মেক আপ নিয়ে ।শরীরের সাথে পাল্লা দিয়ে যেন তাঁর ঠোঁট লাল হচ্ছে। আর অভিনয়ের মান যতদিন তিনি খান হয়ে ওঠেন নি ততদিন পর্যন্ত মোটামুটি একটা পর্যায়ে ছিল, এখন আর সহ্য করা যায় না। অন্যান্য দেশে প্রতিষ্ঠিত শিল্পিরা যেখানে গল্পের মানকে গুরুত্ব দেন সেখানে সাকিব আছে তাঁর নাম নিয়ে। এসব শিল্পিরা অবসরের সাথে সাথে ভাগাড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।