প্রথম সিকোয়েন্সেই বিরক্তি ধরিয়ে দেয় ‘ট্র্যাপ’
সম্ভবত জয় চৌধুরী শিল্পী সমিতিতে সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় হঠাৎ কুখ্যাত হয়ে যাওয়ায় ‘ট্র্যাপ’ নামের ছবিটি আচমকা ছাড়া হলো দি অভি কথাচিত্রের ইউটিউব চ্যানেলে। যারা এই অভিনেতার নাম শোনেননি কখনও, তারাও এখন তার নাম জানেন। তার কাজ দেখার আগ্রহ থেকে কেউ ছবিটিতে ক্লিক করলে ইউটিউব চ্যানেলের পোয়াবারো।
জয়ের জন্য নেতিবাচক দিক হচ্ছে, কেউ একবার এই ছবিতে তার অভিনয় দেখলে জীবনে দ্বিতীয়বার আর তার কাজ দেখবেন না। অবশ্য শুধু জয় একা কেন, অপু বিশ্বাসও যে অভিনয় করেছেন, তাতে তার ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠবেন দর্শক। জয়ের সিনেমায় ১৪ বছর হয়েছে, অপুর অভিনয় জীবন ১৮ বছরের।
দুজনের কেউই অনভিজ্ঞ নন। তারপরও কেন এত বাজে স্ক্রিপ্টের ছবিতে কাজ করতে গেলেন? স্ক্রিপ্ট পড়লেই তো বোঝার কথা, এটা থেকে ছবির নামে আবর্জনা পয়দা হবে মাত্র। সংলাপগুলো এত কাঁচা যে মনে হতে পারে ক্লাস নাইনের কোনো ছাত্র-ছাত্রী লিখেছেন। এই সংলাপ পড়ামাত্রই পালিয়ে যাওয়ার কথা ছিল জয় ও অপুর। তারা ধৈর্য ধরে সেসব সংলাপ শুটিংস্পটে বলেছেন, তারপর আবার ডাবিংয়ে ঠোঁট মিলিয়েছেন।
দুজনের ধৈর্য আমাকে যারপরনাই অবাক করেছে। টাকা পয়সা বোধহয় বেশি পেয়েছেন তারা। ফলে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়নি।আমার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙেনি, কারণ আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম দুনিয়া উল্টে গেলেও, পেটের খাবার উল্টে এলেও আমি ছবি শেষ না করে উঠব না।
প্রথম সিকোয়েন্সেই এই ছবি বিরক্তি ধরিয়ে দেয়, ধীরে ধীরে এই বিরক্তি পেটের ভেতর বিবমিষায় পরিণত হয়। গল্পটা দুই লাইনে বলে তারপর বিরক্তির কারণগুলো জানাই। অপু ও জয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দম্পতি। একজন হ্যাকার তাদের দুজনের সেলফোন হ্যাক করে। জয় ও অপুর ঘনিষ্ঠ দৃশ্য ফাঁস করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে। কীভাবে হ্যাকার ওদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে, সেটাই দুই ঘণ্টার কাহিনী।
এবার বিরক্তির কারণ বলি। একটা গল্প কীভাবে লিখতে হয়, সংলাপ কীভাবে লিখতে হয় তার কিছুই এই ছবির লেখক জানেন না। চরিত্র কীভাবে লিখতে হয় তাও জানেন না। কিন্ত তিনি আস্ত একটা ছবি লিখে ফেলেছেন। এর গল্পটা যে কিছু হয়নি সেটা বোঝার ক্ষমতা নেই পরিচালকের। তিনি লাইট ক্যামেরা নিয়ে শুটিংয়ে নেমে পড়েছেন।
প্রযোজক সম্ভবত তিনি নিজেই। তাকে আর বাধা দেবে কে? আরও ভয়ঙ্কর হচ্ছে, তিনি নিজেই ছবির তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ অভিনেতা, অর্থাৎ হ্যাকার চরিত্রের অভিনেতা। তার ধ্বংস আর ঠেকায় কে?
দীন ইসলাম নামে এই ভদ্রলোক, যিনি আবার পর্দায় নাম ধারণ করেছেন দীনভাই, তাকে সকাল বিকাল পড়াতে পারবেন অনন্ত জলিল। এবার বুঝুন, তার অভিনয় কতটা উচ্চমার্গের! তাকে নিয়ে আর শব্দখরচ করতে চাই না, ইতিমধ্যে তার ছবির পেছনে দুই ঘণ্টা খরচ করে ফেলেছি, আফসোস আর বাড়াতে চাই না।
তবে জয় ও অপুকে বলতে চাই, আপনাদের শিল্পীসত্তা কি একবারও বাধা দেয়নি এই অভিনয়মূর্খের সঙ্গে একফ্রেমে আসতে? একটা লোক স্রেফ নিজের খায়েশ মেটাতে হয়ে গেলেন নির্মাতা ও অভিনেতা, আর বাকি সবাই যার যার পাওনা বুঝে নিয়ে তার খায়েশ মেটানোর পার্টনার হয়ে গেলেন?
সিনেমাটা এখন নানা ধরনের লোকের সখ আহলাদ পূরণের জায়গা হয়ে গেছে। পেশাদারত্ব বলতে রয়ে গেছে নিজের পারিশ্রমিকটা পকেটে পুরে নিয়ে চোখকান বন্ধ করে কাজ করে যাওয়া। যা করেছেন জয় ও অপু। তারা এটাও বুঝতে পারেননি কিংবা জেনেও কাজ করেছেন একটা নকল ছবিতে। এই ‘ট্রাপ’ ছবিটা ‘তিরুত্তু পায়েলে ২’ নামে একটি তামিল ছবির নকল। ইউটিউবে হিন্দি ডাবকরা ভার্সন পাওয়া যায়। গল্পটি হবহু চুরি করলে উৎকৃষ্ট নকল ছবি হতে পারত। কিন্তু যেহেতু গল্পের ওপর মাতবরি করেছেন নির্মাতা এবং নিজেই খলচরিত্রে পারফর্ম করেছেন, তাই ছবির নামে তৈরি হয়েছে একটি গার্বেজ।
এই ছবি নিয়ে যথেষ্ট বকেছি, আর বকতে চাই না। দর্শকদের বলব, আপনারা চাইলে উল্লিখিত তামিল ছবিটির হিন্দি ভার্সন দেখে নিতে পারেন, খুব ভাল না লাগলেও একবারে খারাপ লাগবে না।