প্রথম সিনেমা মুক্তির ৪৩ বছর পার করলেন অঞ্জনা
অঞ্জনা সুলতানার প্রথম সিনেমা মুক্তির ৪৩ বছর পার হয়ে গেল। তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিলো রোমেনা আফাজের বিখ্যাত উপন্যাস ‘দস্যু বনহুর’ অবলম্বনে একই নামে নির্মিত সিনেমা। শামসুদ্দিন টগর পরিচালিত ছবিটি ১৯৭৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায়।
তবে বাবুল চৌধুরীর ‘সেতু’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়ে প্রথম ক্যামেরার সামনে আসেন অঞ্জনা। সেই স্মৃতি হাতড়ে তিনি সম্প্রতি বলেন, ছবিটির শুটিং চলছিল এফডিসির এক নম্বর ফ্লোরে। ক্যামেরাম্যান আবদুল লতিফ বাচ্চু। খুব রাগী মানুষ ছিলেন। আমি ভয় পাচ্ছিলাম। বিষয়টা বাচ্চু ভাই জানার পর আমাকে বললেন, ‘তুমি নাচের মেয়ে। নৃত্য থেকে সিনেমায় এসেছো, আমরা এমনিতেই খুশি। অতএব, তুমি তোমার ইচ্ছেমতো কাজ করো। আমরা কেউ তোমাকে বকব না।’
বাচ্চু ভাইয়ের এই উদারতা আমার সামনের চলার পথকে আরও সুন্দর ও সুগম করেছিল। কিন্তু সেদিন শুটিং স্পটে ঘটল আরেক বিপত্তি। আমার তৈলাক্ত লাইট স্কিনের জন্য মুখে মেকআপ শুট করছে না। কেটে যাচ্ছে। শেষে সিদ্ধান্ত হলো মেকআপ ছাড়াই শট নেওয়া হবে। আমার সঙ্গে ছিলেন রাজ্জাক ভাই, শাবানা ম্যাডাম ও বুলবুল আহমেদ।
এর আগে নৃত্যশিল্পী হিসেবে পেয়েছেন স্বীকৃতি। অঞ্জনার প্রথম ছবিটিই সুপারহিট হয়। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিন শতাধিক ছায়াছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আন্তর্জাতিক পুরস্কার, একাধিকবার জাতীয় স্বর্ণপদক, বাচসাস পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার।
অঞ্জনা বলেন, ‘এই জার্নি আসলেই মুগ্ধতায় ভরা। সিনেমার নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম ছোটবেলা থেকেই। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। দেশের বড় বড় পরিচালক, প্রযোজক ও নায়কের সঙ্গে সিনেমা করেছি। অসংখ্য সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছি। সামাজিক, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক, সাহিত্যনির্ভর, অ্যাকশন, পোশাকি, ফ্যান্টাসি, গ্রামবাংলার লোকগাথা, কাল্পনিক সব ধরনের সিনেমাই করেছি। দেশ-বিদেশের মানুষের প্রশংসা ও ভালোবাসা পেয়েছি। বলতে গেলে সবকিছু প্রাপ্তি হয়েছে। না পাওয়ার কিছুই নেই।’
সিনেমা জগতে জীবনের ৪৩ বছর পার করেছেন। এখনও এফডিসিতে সিনেমার কোন অনুষ্ঠান হলেই ছুটে আসেন অঞ্জনা।
ক্যারিয়ারের চার দশক পার করায় অঞ্জনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন অনেকেই। এরই মধ্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকেও শুভেচ্ছা জানানো হয়েছেন তাকে। শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান অঞ্জনার বাসায় গিয়ে তার হাতে ফুল ও সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।
অঞ্জনার উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমা হলো মাটির মায়া (খান আতাউর রহমান), অশিক্ষিত (আজিজুর রহমান), চোখের মণি ও সুখের সংসার (নারায়ণ ঘোষ মিতা), জিঞ্জির, অংশীদার ও আনারকলি (দিলীপ বিশ্বাস), বিচারপতি (গাজী মাজহারুল আনোয়ার), আলাদীন আলীবাবা সিন্দাবাদ (শফি বিক্রমপুরী), অভিযান (নায়করাজ রাজ্জাক), মহান ও রাজার রাজা (আলমগীর কুমকুম), বিস্ফোরণ (এফ আই মানিক), ফুলেশ্বরী (আজিজুর রহমান), রাম রহিম জন (সত্য সাহা), নাগিনা (মতিউর রহমান বাদল), পরীণিতা (আলমগীর কবির) ইত্যাদি।