Select Page

প্রমিজিং হয়েও কী হাল ‘মায়াবতী’র!

প্রমিজিং হয়েও কী হাল ‘মায়াবতী’র!

খুবই ইম্প্রেসিভ শট দিয়ে শুরু হয় ‘মায়াবতী’। ট্রেনের দৃশ্য পর্দায় দেখতেই কল্পনাপ্রবণ মন ভালো লাগায় আবেশিত হয়ে ওঠে। ডিসেন্ট সিনেমাটাগ্রাফী আর ন্যাচারাল রঙে শটটি বেশ ভালো লেগেছে। এরপর আরো কিছু ট্রেনের শট ছবিতে পেয়েছি। রাস্তায় ট্রাকের শটও পেয়েছি। গ্রামীণ নদী-নালা, ক্ষেত-খামারের কিছু শটও ভালো লেগেছে।

তবে মায়াবতী নিয়ে খুব ডিটেইলস্‌ রিভিউ অনর্থক। সিনেমার ক্ষেত্রে হয় কিছু বিনোদনমূল্য থাকা চাই, নয়তো নূন্যতম শিল্পমূল্য থাকা আবশ্যক। কিন্তু বাংলাদেশের বেশীর ভাগ ছবিতে কিছুই থাকে না। ‘মায়বতী’ এর মত ছবি খুব প্রমিজিং হওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত যেন সেই ‘কিছুই নেই’ এর দলে গিয়ে ভিড়ে।

অনর্থক বড় বড় দৃশ্য, বোরিং সংলাপ, মেলোড্রামাটিক অভিনয় যেন বাংলাদেশের সিনেমার ট্রেডমার্ক। এ থেকে কেউ বেরিয়ে আসতে পারছে না, কিংবা হয়তো চাইছেই না।

ফলে সিনেমা দিন দিন কেবল আকর্ষণই হারাচ্ছে। দর্শকদের হতাশা বাড়ানো ছাড়া একটি ‘মায়বতী’ দ্বারা আর কোন লাভই হচ্ছে না। তাই আমি বুঝতে পারছি না, কী ভেবে, কিংবা কিসের তাগিদে এমন অনর্থক সিনেমা তৈরী হয়, এবং সে সিনেমা নিয়ে প্রচারণা হয়, বড় বড় সিনেমা হলে সে সিনেমা মুক্তিও পায়। এমন সিনেমা আমি বড় পর্দায় তো দূরের কথা ‘ইউটিউব’ এও দেখতে চাইবো না।

অন্তত কোন একটা কারণ থাকা চাই এ ধরনের সিনেমা তৈরী হওয়ার, বড় পর্দায় মুক্তি পাওয়ার কিংবা প্রমোশনের নামে দর্শকদের হলে ডেকে নিয়ে আসার। আর ২০০-৩০০ টাকা খরচ করে, ৩-৪ ঘন্টা নষ্ট করে এ ধরনের একটা সিনেমা দর্শক কেন দেখবে তার কোন ব্যাখ্যা কারো কাছে থাকলে আমাকে জানাবেন, আমি জেনে নিবো। আপাতত আমার কাছে কোন ব্যাখ্যা নেই। কোন দর্শক সিনেমা দেখার নামে ‘চ্যারিটি’ করতে চাইলে আলাদা কথা। তবে এ ধরনের অনর্থক ছবির জন্য চ্যারিটি করাটাও আমার কাছে অনর্থকই মনে হয়।

ছবিতে অভিনয় শিল্পী আছেন অনেক। নুসরাত ইমরোজ তিশা, ফজলুর রহমান বাবুসহ্‌ আরো অনেক অভিনয় শিল্পী। তারা ভালো অভিনেতা। তাদের অভিনয় হরহামেশাই দেখা যায়। মায়াবতীতে এমন বিশেষ কিছু নেই যে তাদের অভিনয় দেখার জন্য সিনেমা হলে যেতে হবে। একটা ভালো চিত্রনাট্য, কিছু শক্তিশালী সংলাপ, কিছু সিনেম্যাটিক মূহূর্ত বা দৃশ্যের গভীরতা থাকলেই কেবল অভিনয় শিল্পীদের অভিনয় দর্শকদের আকর্ষণ করতে পারে। ‘মায়াবতী’ এ এসবের কিছুই নেই। অরুণ চৌধুরীর ‘আলতা বানু’ স্বল্প বাজেটের দুর্বল ছবি হলেও ছবির চিত্রনাট্যটি ভালো ছিল, ছবির কিছু দৃশ্যে গভীরতা ছিল। এ ছবিতে তার কিছুই নেই।

অমিতাভ বচ্চন ও তাপসী পান্নু অভিনীত ‘পিঙ্ক’ সিনেমায় দেখানো হয়েছে ‘না মানে না’। অর্থাৎ একটি মেয়ে যখন না বলে, তখন সে মেয়েটির ব্যাকগ্রাউন্ড, সামাজিক অবস্থান, অতীত কোন কিছুই বিষয় না। না বলা তার মানবিক অধিকার এবং কেউ সেই অধিকার খর্ব করার অধিকার রাখে না।

‘মায়াবতী’ ছবিতে সেই বিষয়টাই নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে যা সত্যিই ভালো উদ্যোগ। তবে একটা ‘ম্যাসেজ’ দিতে চাইলেই হবে না, সেটা দেয়ার পদ্ধতি আছে। যাচ্ছেতাই উপস্থাপনায় কোন ‘ম্যাসেজ’ দিতে চাইলে তা দর্শককে একেবারেই আগ্রহী করবে না। আর দর্শকদের আগ্রহী করতে না পারলে সেই ‘ম্যাসেজ’ দেয়ারই কোন অর্থ নেই।

মায়াবতীতে নিকৃষ্ট ‘বোরিং স্ক্রিনপ্লে’ থাকায় এই ‘ম্যাসেজ’ দেয়ার ব্যাপারটা যেমন অর্থহীন হয়ে পড়েছে, তেমনি অর্থহীন হয়েছে এ ছবির অভিনয় শিল্পীদের অভিনয়। কারো অভিনয়ই বিশেষ কিছু লাগেনি। ইনফ্যাক্ট ছবিতে সেই সুযোগই ছিল না। তিশা আর ইয়াশ রোহান তাদের স্বাভাবিক অভিনয় করে গেছেন। ফজলুর রহমান বাবুর মত প্রতিভাবান অভিনেতা একেবারে ‘টাইপ কাস্ট’ হয়ে গেছে। একই ধরনের চরিত্রে একই রকম অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে তাকে। যা সত্যিই বিরক্তিকর। অরুণা বিশ্বাস ছোট্ট চরিত্রে ভালো করেছে। বাকি সবাই ঠিকঠাক। আগেই বলেছি যে, অভিনয় অনর্থক হয়ে যায় যদি ছবির চিত্রনাট্য এবং নির্মানশৈলী ভালো না হয়। এ ছবির ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।

ছবি টেকনিক্যাল দিক থেকে খুব উন্নত না হলেও অরুণ চৌধুরীর আগের ছবি থেকে ভালো। সিনেমাটোগ্রাফীর ক্ষেত্রে আউটডোর শটগুলো ভালো ছিল। কিন্তু ছবিতে ইনডোর শটই বেশী। সেক্ষেত্রে ইনডোর শটগুলোর সেট ডিজাইন এবং ফটোগ্রাফী কোনটি ভালো লাগেনি।

দৌলতদিয়া পতিতা পল্লীতে ছবির একটা অংশ চিত্রায়িত হয়েছে কিন্তু তার নূন্যতম ইম্প্যাক্ট ছবিতে আসেনি। ঢাকার যেকোন বস্তিতে শুট করলে এর চেয়ে ভালো ইম্প্যাক্ট আসতো। এই জায়গার ডিটেইলিং একেবারে ছবিতে আসেনি।

ছবির গান শুনতে মোটামুটি ভালো। বিশেষ করে ‘যাবো মদিনা’ গানটা খুবই সুন্দর। কিন্তু গানের পিকচারাইজেশন একেবারেই ভালো হয়নি।

সব মিলিয়ে, মায়াবতীতে দেখার মত কিছুই নেই। গল্প যা ছিল চলতো কিন্তু এতো অগোছালো, ম্যাড়ম্যাড়া, বোরিং স্ক্রীনপ্লে অরুণ চৌধুরীর কাছে প্রত্যাশিত ছিল না যেহেতু তার প্রথম ছবি আলতা বানু এই দিক থেকে বেশ ভালো ছিল।

এ ছবি না নূন্যতম বিনোদন দিতে সক্ষম, না এর মধ্যে নূন্যতম শিল্পবোধ আছে। এমন ছবি কেন নির্মাণ হয় জানি না। তবে যদি বাজেট একমাত্র সমস্যা হয় তাহলে এ ধরনের ছবি সিনেমা হলে মুক্তি না দিয়ে টিভিতে বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মুক্তি দিলে ভালো হবে। এতে অন্তত দর্শকের টাকাটাও জলাঞ্জলি দিতে হবেনা আর হলগুলোও মার খাবে না।

আশা করি, আমাদের নির্মাতা গোষ্ঠী সিনেমা জিনিষটাকে আরেকটু সিরিয়াসলি নিবেন।

মায়াবতী ছবির জন্য আমার রেটিং – ১.৫* (অর্থাৎ স্কোর ৩০% এবং গ্রেড – ফেইল্ড্‌)


Leave a reply