Select Page

দর্শক-সমালোচক সব বিচারে এগিয়ে ভিকি জাহেদ

দর্শক-সমালোচক সব বিচারে এগিয়ে ভিকি জাহেদ

টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে এই সময়ের যে কয়েবজন নির্মাতার কাজ নিয়ে সাধারণ দর্শকদের মাঝে অপেক্ষা ও আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় তাদের অন্যতম ভিকি জাহেদ। অল্প নির্মাণের মধ্যেও গতানুগতিক ধারার বাইরে এসে তার বেশকিছু ভিন্নধর্মী ফিকশন আলোচিত ও প্রশংসিত। দর্শকপ্রিয়তা বা ভিউয়ের বিচারেও নবীনদের মধ্যে এগিয়ে ভিকি জাহেদ।

২০১৬ সালে শর্টফিল্ম ‘মোমেন্টস’ নির্মাণ করে বাজিমাৎ করেছিলেন ভিকি জাহেদ। মিডিয়া সম্পর্কে যারা টুকটাক খোজখবর রাখেন তারা জানেন যে, শর্টফিল্ম বিষয়টা নতুন করে নিজের প্রজন্মের দর্শকের কাছে পরিচিতি করিয়েছেন। একে একে অবিশ্বাস, মায়া, অক্ষর, দেয়াল, দূরবীনসহ বেশ কিছু জনপ্রিয় শর্টফিল্ম বানিয়ে দক্ষতা ও মেধার প্রমাণ দিয়েছিলেন। তার পরিচালিত ‘আজ আমার পালা’ একটি মাইলফলক হিসেবে গন্য করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া বেশ কিছু মিউজিক ভিডিও বানিয়ে ভালো সাড়া পেয়েছেন।

তবে ২০২০ সালে এই সময়ে টেলিভিশন নাটকের অন্যতম সেরা নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। বছরের শুরুতে ‘ট্রফি’ দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ‘রেহনুমা’, ‘নির্বাসন’, ‘জন্মদাগ’ এবং ‘ইরিনা’ তাকে লাইমলাইটে নিয়ে আসে। অন্যভাবে বলা যায় একের পর এক টানা চারটা মাস্টারস্ট্রোক উপহার দেন তিনি।

প্রতিটি নাটকের গল্প আলাদা, মেকিং কোনটার সাথে কোনটার মিল নাই, ভিন্নধর্মী মেসেজ সব মিলিয়ে ভিকি জাহেদ এইসব ফিকশন দিয়ে গৎবাধা রোমান্টিক নাটক থেকে বেরিয়ে ভিন্ন স্বাদ নিয়ে হাজির হয়েছেন। দর্শকেরাও তার প্রতিটা কাজ গ্রহণ করেছেন সানন্দে। ইউটিউব ভিউ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন নাটক বা মিডিয়া রিলেটেড পেজগুলো দেখলেই এ কথার প্রমাণ মেলে। এই সময়ে এসে সারা বছরে হাতেগোনা কাজ করেও মান ও জনপ্রিয়তা ধরে রাখা নির্মাতা আশফাক নিপুণ, শাফায়েত মনসুর রানার কাতারে নতুন সংযোজন ভিকি জাহেদ।

গত বছরের মতো এবারও ‘চিরকাল আজ’, ‘কায়কোবাদ’, ‘চরের মাষ্টার’ বা ‘পুনর্জন্ম’ সাড়া ফেলার পাশাপাশি ব্যাপক প্রশংসাও কুড়িয়েছে। বিশেষ করে ‘চিরকাল আজ’ নাটকে মেহজাবীন চৌধুরী ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অভিনয় করেছেন এমন দাবির কথাও শুনতে পারা যায়।

ভিকি জাহেদ বরাবরই তার প্রতিটা কাজেই ভিন্নধর্মী এমন কিছু নিয়ে হাজির হন যা আমাদের স্তম্ভিত করে দেয় কিছুটা সময়ের জন্য। এই নবীন নির্মাতা এই সময়ের বদলে যাওয়া দর্শকদের পালস বেশ ভালোভাবেই বোঝেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিছুদিন আগে ‘লাল কাতান নীল ডাকাত’ নামের স্বল্পদৈর্ঘ্য ফিকশনেও তার দক্ষতার ছাপ রেখেছেন ভিকি জাহেদ।

এক দৈনিক পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে ভিকি জাহেদ জানান- ‘আমার স্ক্রিপ্ট হচ্ছে আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। আমার ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত আমি যে কাজগুলো করেছি তার ৮৫ ভাগ কাজই হচ্ছে আমার মৌলিক গল্পে। আমিই একজন পরিচালক যে কিনা নিজের গল্পে নিজে কাজ করি কিন্ত সবসময় সেটা সম্ভব হয়েও ওঠে না। তখন বাইরের গল্পগুলো নিয়ে কাজ করি। আর এতে করে দর্শকের কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতাও বাড়ছে। তথাকথিত বা টিপিক্যাল কিছু নয়, দর্শক আমার কাছে ডিফারেন্ট কিছুই খুঁজে সবসময়। এজন্য বাইরের লেখকের গল্প নিয়ে কাজ করতে আমি অনেক বেশি রিসার্চও করি। রিসার্চের পেছনে অনেক সময় দেই। এমনটাও কিন্তু আমাদের দেশে খুব বেশি দেখা যায় না।’

শর্টফিল্ম হোক কিংবা নাটক ভিকি জাহেদের গল্পে একটা বিষয় সদা উপস্থিত আর সেটি হচ্ছে আনপ্রেডিক্টেবল টুইস্ট। মোটামুটি চেনা গল্পেও এমন সব টুইস্ট নিয়ে আসেন তিনি, এবং সেটাকে উপস্থাপনের যে কৌশল বা মুন্সিয়ানা ব্যবহার করেন তার সাথে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই রিলেট করতে পারে। তাই অল্প সময়ে তার কাজগুলি প্রশংসা তো পায়ই সাথে এই সময়ে এসে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ইউটিউবেও মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হয়। তার প্রতিটা কাজেই যত্ন লক্ষ্য করা যায়। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘আমি একটা গল্প মাথায় আসলে সেটা নিয়েই প্রথমে চিন্তা করি এক সপ্তাহ, একমাসে একটার বেশি কাজ করা হয় না আমার, আর চিত্রনাট্য বারবার সাজিয়ে আবার ঝালাই করি। এরপরে শুটিং, এডিটিং সব মিলিয়ে প্রায় দেড়মাস লাগে একটা কাজ শেষ করতে। এভাবে হয়তো কাজটা একটু লম্বা সময় নিয়ে করতে হয় তবে কোয়ালিটিতে ছাড় দেই না। আর এ কারণেই কাজগুলো দর্শকদের কাছে প্রশংসা পায়।’

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যেটা বেশিরভাগ সময়ই শোনা যায় যে, তিনি আফরান নিশো আর মেহজাবীনকে নিয়েই তার বেশিরভাগ কাজ করেন। তবে ভিকি জাহেদ বারেবারেই বলেছেন, তিনি যে ধরনের গল্প নিয়ে কাজ করেন সেখানে নিশো ও মেহজাবীনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন বলেই তাদের কাস্ট করেন। এছাড়া মনোজ প্রামানিক, তানজিন তিশা, খায়রুল বাসার, সাফা কবির, তৌসিফ, নাদিয়াসহ আরো অনেকেই তার সাথে কাজ করেছেন।

নাটক বানানোর পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়েও কাজ করেন ভিকি জাহেদ। প্রতিটা নির্মাতার মতো তিনিও বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম মানে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে চান, তবে তাড়াহুড়ো করে এখনই নয়। বরং বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করেই সিনেমার মতো বিশাল মাধ্যমে নিজের যাত্রা শুরু করবেন তিনি। আগামীতেও নিজের ভিন্নধর্মী কাজ দিয়ে তিনি আমাদের বিনোদন মাধ্যমে আরো অনেক ভিন্নধর্মী এবং মানসম্মত কাজ নিয়ে হাজির হবেন এটাই কামনা।


মন্তব্য করুন