Select Page

প্রিমিয়ারে প্রশংসিত ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’, পড়ুন রিভিউ

প্রিমিয়ারে প্রশংসিত ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’, পড়ুন রিভিউ

হাওর অঞ্চলের মানুষের গল্প নিয়ে মুহাম্মদ কাইউমের সিনেমা ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’।  প্রধান দুই চরিত্রে দেখা যাবে উজ্জ্বল কবির হিমু ও জয়িতা মহলানবিশকে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে এ ছবির প্রিমিয়ার শো। বিশেষ এ প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া দর্শকরা পছন্দ করেছেন ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’। আমরা ফেসবুক থেকে কিছু রিভিউ সংগ্রহ করেছি। আসুন দেখে নেয়া যাক-

মানস চৌধুরী

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ নিবিড় খাটুনি ও নিষ্ঠার এক অনবদ্য দলিল। মুহাম্মদ কাইউমের বানানো (কাহিনি, পরিচালনা ও প্রযোজনা) এই ছায়াছবিটির দৃশ্যবিন্যাস চোখ আঁকড়ে রাখে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে পর্দায় চলমান দৃশ্যে পানি আর পানিহীন ফসলের প্রান্তর আর ফসলহীন মাঠের চরাচর। তবুও দর্শককে তা বেঁধে রাখে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ভোক্তা লোকজনের একাংশ মাঝেমধ্যেই “জীবনঘনিষ্ঠ” ইত্যাদি অভিধা দিয়ে ছায়াছবিকে অলংকৃত করেন। এইসব বিশেষণ বুঝতে আমার বরাবরই খুব অসুবিধা হয়। জীবন-বিমুখ ছায়াছবি তেমন চিনি না বলে। এর বাইরে নতুন এক উপদ্রব হয়েছিল “নৃবৈজ্ঞানিক” বিশেষণ নিয়ে। এই ছায়াছবিটি অত্যন্ত সংগ্রাম মুখর, দারিদ্র্যপীড়িত একটা অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির প্রায় বাৎসরিক ঋতুচক্রের দুর্দান্ত একটা দৃশ্যদলিল হয়ে পড়েছে। এর নাম যা ইচ্ছা তা দিতে পারেন দর্শকে। 

জনাব কাইউমের অন্তত তিনপ্রস্থ জীবনবৃত্তান্তের মধ্যে প্রথমটির সাথে আমার পরিচয় ছিল না। তিনি জাহাঙ্গীরনগরে আমার বেশ আগে পড়তেন এবং বাম রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। দ্বিতীয় দফায় তিনি যত্নবান প্রকাশক হিসাবে আমার পরিচিত হন। তাঁর নিষ্ঠা ও যত্নে একবার প্রকাশিতও হয়েছি আমি। তৃতীয় দফায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বেচে দিয়ে তিনি কিছুদিন চাকরি করেন; তারও পরে ছবি বানানোতে হাত দেন। সেটা জানতাম। ছবি বানানো শেষের খবরও পেয়েছিলাম বেশ আগে। আজ সেই ছবির প্রিমিয়ার দেখা হলো। সীমান্ত সম্ভারের সিনেপ্লেক্সের তিন নম্বর পর্দায়।

গল্প, যদি আছে ধরেই নিই, এবং থাকা এতটুকু জরুরি নয়, তা অতিশয় হৃদয়গ্রাহী, মর্মস্পর্শী, মায়াজাগানিয়া। তবে সম্ভবত কিছু জায়গায় আরো কম ‘অভিনয়ে’ পরিচালক সন্তুষ্ট থাকলে ভাল হতো বলে মনে হয়। রুকুর ছোট বোনটি পানিতে ডুবে যাওয়া যেমন নিরুত্তাপ সামলেছেন নির্মাতা, আর তাই তা দুর্দান্ত হয়েছে; অভিমানী রুকুকে সুলতান ও রুকুর মা খুঁজে পাবার পর মিলন দৃশ্যে সেরকম নৈর্লিপ্তি রাখেন নি। হয়তো রুকুর দাদার মাধ্যমে সমাজ-সংহতি নিয়ে অতগুলো বক্তৃতাও দরকার ছিল না। সঙ্গীত/আবহসঙ্গীত জায়গায়-জায়গায় দুর্দান্ত; জায়গায় জায়গায় কোলাহলপূর্ণ বলে আমার কানে লেগেছে। কিন্তু দুর্দান্ত জায়গাগুলো বরং বলি। মোটের উপর জোড়া ঢাকের ব্যবহার (তাই তো?!) এবং মাঝামাঝি সময়ে রুকুর মায়ের স্বামী বিয়োগের ও পিতামাতার সংবাদ না পাবার বেদনার উপর পানির তেপান্তরে যে গান এসেছে, কলিজা কাঁপানো। বিয়ের গানটাও অনবদ্য। কারা গেয়েছেন এক্ষুনি জানি না। কিন্তু আগ্রহ জাগিয়েছেন।

এই ছায়াছবিটা কেবল দৃশ্যের কারণেই, কেবল ভূচিত্র, ঋতুচক্র, দারিদ্র্য আর অনিশ্চয়তার চিত্ররূপ দিতে পারার জন্যই আমাদের সমকালের অত্যন্ত জরুরি একটা ছায়াছবি হয়ে থাকবে। অভিনয় বা চিত্রনাট্য বা সঙ্গীত নিয়ে আমার নিন্দামন্দগুলো দুয়েক বছর মুলতবি রাখা যেতে পারে। কিন্তু মুস্কিল হলো, চিত্রের যে বাজার ও ব্যবস্থাপনা, তাতে ভরসা রাখা কঠিন যে কত লোকে ছবিটা দেখবেন।

নির্মাতা, কলাকুশলীদের (পরলোকগত গাজী মাহতাব সমেত) দর্শক পাওনা হয়ে গেছে।

শুভাশিস ভৌমিক
অনেক নীরব কাজ লোকচক্ষুর অন্তরালে ঘটে যায়। তিন তিনটি বছরের অমানুষিক পরিশ্রম আর নিষ্ঠার ফসল আজ সেই লোকচক্ষুর অন্তরাল থেকে আপাত দৃষ্টিগোচর হলো কিছু দর্শকের কাছে। বলছি মুহাম্মদ কাইয়ূমের কাহিনী, চিত্রনাট্য আর পরিচালনার ফসলের কথা। এটি একটি চলচ্চিত্র যার মূল বিষয় হাওরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন সংগ্রাম আর ফসল নিয়ে। দেশের এই অঞ্চলের কথা শুনে থাকলেও অধিকাংশ মানুষ এই জনগোষ্ঠীর জীবন, প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম, লোকাচার আর জীবনের কঠিনতম বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত নয়। সেই বিষয়গুলোই তুলে এনেছেন পরিচালক তাঁর “ কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া ” চলচ্চিত্রে।

২৯ শে অক্টোবর সীমান্ত সম্ভার – ষ্টার সিনেপ্লেক্সে ছবিটির প্রিমিয়ার শো হয়ে গেল সন্ধ্যায়। শুরুতেই যে বিষয়টি দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষন করে তা হলো ক্যানভাস। হাওরের বারোমাসের এক চিরন্তন দৃশ্যের মাধ্যমে যে ছবির সূত্রপাত সময়ের সাথে সাথে তা পাল্টে যায় ঋতু বৈচিত্রে। একটি বিশাল ক্ষেত্রের জনজীবন, কৃষি, জলাভূমি, গাছপালা, ধানের চাতাল, পাহাড়ী ঢলে থৈ থৈ জলরাশি এ সকল ই তুলে এনেছেন পরিচালক  অসাধারন নৈপূন্যের সাথে।

কাহিনী খুব ই সাদামাটা, মাতৃহীন যুবক সুলতান ঘরছাড়া হয় মৌসুমী শ্রমজীবী হিসেবে। পেটে ভাতে আশ্রয় পায় হত দরিদ্র এক গ্রামের বাড়িতে। সেই পরিবারে স্বামীহারা এক বিধবা, তাঁর দুই শিশুকণ্যা আর শ্বশুরকে নিয়ে ঘটনার আবর্তন।

প্রায় পরিচিতিহীন অভিনেতা অভিনেত্রীদের দিয়ে পরিচালক যে অভিনয় বের করে এনেছেন তা খুব কম ছবিতে লক্ষনীয়। চলচ্চিত্রের প্রতিটি অভিনেতা অভিনেত্রী চমৎকার অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে স্বামীহারা বিধবার চরিত্রে জয়িতা মহলানবীশের নাম বলতেই হয়। শ্বশুর চরিত্রে বাদল শহীদ এবং সুলতান চরিত্রে উজ্বল কবীর হিমু অসাধারন অভিনয় করেছেন। শিশু চরিত্রে সামিয়া আক্তার বৃষ্টি দৃষ্টিতে পড়ার মত অভিনয় দক্ষতার প্রমান রেখেছে।

সিনেমাটোগ্রাফীতে মাযাহারুল রাজু নৈপুন্যের যে প্রমাণ রেখেছেন তা আন্তর্জাতিক মানের। সাত্যকী ব্যানার্জীর আবহ সঙ্গীত মন ছুঁয়ে যায় আর সম্পাদনার যাদুকর অর্ঘ্যকমল মিত্র চূড়ান্ত রূপ দিয়েছেন ছবিটিকে তাঁর মুন্সিয়ানায়। এমন একটি ছবি শুরুতেই বাণিজ্যিক চিন্তন সমৃদ্ধ পরিবেশকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি তাই এখনো সিনেপ্লেক্সে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ছবিটি। আর্থিক অনুদান না পেলেও নিজস্ব অর্থায়নে চিত্রায়িত এই ছবি যে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এক নতুন পরিচয় বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবে তা ছবিটি দেখে অনায়াসেই দর্শক অনুভব করবেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ পরিচালক মুহাম্মদ কাইয়ূম কে, আপনি এক অন্য বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন চলচ্চিত্রে যা এতদিন ছিল অনাবিষ্কৃত।

মোরশেদ শফিউল হাসান

ভিন্নধারার একটি ছবি ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ : কাহিনী ও প্রামাণ্যচিত্র যেখানে মিলেমিশে গেছে
———————————————————————–
আমন্ত্রিত হয়ে মুহাম্মদ কাইউম পরিচালিত ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ চলচ্চিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনী দেখে এলাম আজ। হাওর অঞ্চলের বিত্তহীন কৃষিজীবী মানুষের জীবন সংগ্রাম, প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে তাদের নিত্যদিনের বেঁচে থাকা, বারবার মার খেয়ে – স্বজন-সন্তান ও ফসল হারিয়েও আবার নতুন করে জীবনকে গুছিয়ে তোলার স্বপ্ন ও সংগ্রাম, নিদানকালের দুঃসহ দারিদ্র্য ও তার অভিঘাতে এক পর্যায়ে ভিটেমাটি ছেড়ে কারো কারো (যেমন এই চলচ্চিত্রে দেখানো পরিবারটির) জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র পাড়ি জমানো, সংক্ষেপে এটাই এই চলচ্চিত্রের গল্প। কোনো তারকা শিল্পী এই চলচ্চিত্রে নেই, দু-তিনজন বাদে প্রধানত অপেশাদার অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং স্থানীয় জনগণই ছিলেন এর কলাকুশলী। এটাও এই চলচ্চিত্রের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। নির্দেশক (চলচ্চিত্রটির কাহিনীকারও তিনি) তাঁদের কাছ থেকে মোটের উপর দৃশ্যোপযোগী অভিনয় আদায় করে নিয়েছেন, নিতে পেরেছেন। জানতে পেরেছি চরিত্রদের মুখের সংলাপগুলো সরাসরি ধারণ করা হয়েছে, স্টুডিওতে ডাব করা হয়নি। যার সুবিধা-অসুবিধা, ভালো-মন্দ দুটি দিকই আছে। এই চলচ্চিত্রেরও কোথাও কোথাও যার প্রভাব পড়েছে। দু-একটি চরিত্রের ক্ষেত্রে সংলাপের আড়ষ্টতা  কিংবা বিবৃতিধর্মিতা যার প্রমাণ দেয়।

 আমি চলচ্চিত্রবোদ্ধা নই, সাধারণ দর্শক মাত্র। নির্মাণশৈলীর দিক থেকে চলচ্চিত্রটির সাফল্য-ব্যর্থতা বিচারের যোগ্যতা আমার নেই। এখানে একজন দর্শক হিসেবে আমি আমার প্রায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছি। অনেকেই হয়তো আমার সঙ্গে একমত হবেন না, এই ধারণাটা মাথায় রেখেই। চলচ্চিত্রটির সবচেয়ে প্রশংসনীয় দিক আমার কাছে মনে হয়েছে এর দৃশ্যগ্রহণ বা ফটোগ্রাফি, এক কথায় যা অপূর্ব। এই চলচ্চিত্রে একটি-দুটি নয়, এমন অনেক শট আছে বিশ্বসেরা চলচ্চিত্র মানের সঙ্গে যার তুলনা করা যায় (এ কথাটাও আমি অবশ্য বলছি দর্শক হিসেবে আমার সামান্য অভিজ্ঞতা থেকে)। চলচ্চিত্রটির সীমাবদ্ধতার দিক বা এর  সমালোচনা করবার মতো কিছু কি নেই? আমার মতে শিল্পসৃষ্টি হিসেবে এর বড় ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা হলো অতিরিক্ত বক্তব্যধর্মিতা । নির্মাতার আদর্শগত বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে রাজনৈতিক অবস্থান হয়তো এর জন্য দায়ী। বলা বাহুল্য অবস্থানটি এক্ষেত্রে দোষের নয়, একজন লেখক বা শিল্পীর মতো একজন চলচ্চিত্র নির্মাতারও তা থাকতে পারে। তবে তাঁকে শিল্পের দাবির কাছে কমবেশি ছাড় দিতে হয়। কিন্তু এই চলচ্চিত্রের গোড়া থেকে শেষাবধি যেন ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প, এনজিও এবং মিডিয়ার ভূমিকা ইত্যাদি সকল বিষয়ে বক্তব্য প্রকাশের ব্যগ্রতা নির্মাতাকে পেয়ে বসেছিল।  শোষণ ও বঞ্চনার বিষয়টি বোঝাতে একই চলচ্চিত্রে এভাবে সবগুলো প্রসঙ্গ একটু একটু করে দেখানোর চেষ্টার পরিবর্তে ওই অঞ্চলের বাস্তবতায় মনে হয় ইজারাদারদের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি আরেকটু ভালোভাবে অর্থাৎ স্পষ্ট করে দেখানো যেত। কোনো কোনো চরিত্রের সংলাপের ক্ষেত্রে বিবৃতিধর্মিতার কথা আগেই বলেছি। এগুলো চলচ্চিত্রটিকে প্রায় প্রচারচিত্রের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। প্রামাণ্যচিত্রে যা হয়তো স্বাভাবিকভাবে আসতে পারে, কাহিনীচিত্রে তাকেই একটু পশ্চাদবর্তী ভূমিকা নিতে হয়। মাধ্যমের বৈশিষ্ট্য  অনুযায়ী এটা শিল্পের দাবি। অনেকেই আশা করি এই জায়গাটিতে আমার সঙ্গে সহমত পোষণ করবেন। অবশ্য নির্মাতা তাঁর এ চলচ্চিত্রটিকে বাংলায় ‘কাহিনীচিত্র’ বললেও, ইংরেজিতে ধরনটিকে বলেছেন Narrative Feature।

জয়িতা মহলানবীশ তাঁর চরিত্রানুযায়ী অত্যন্ত স্বাভাবিক অভিনয় করেছেন। প্রায় সকল দৃশ্যেই তাঁর অভিব্যক্তি একজন শক্তিশালী অভিনয়শিল্পীর পরিচয় দেয়। ছোট মেয়েটিও পুরো সময় জুড়ে তার সুন্দর ও স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় দিয়ে দর্শককে ধরে রেখেছে। যদিও সংলাপগুলো সবসময় তার বয়োসপযোগী হয়েছে বলে মনে করতে পারছি না (তবে সে দোষ তার নয়)।
 
কেবল বিনোদিত হবার আগ্রহ নিয়েই যারা ছবিঘরে যান তাঁদেরকে তো বটেই, এমনকি বিনোদনকে যারা শিল্পের জন্য দোষণীয় মনে করেন না, তাঁদেরকেও ছবিটি (সত্যজিৎ রায়ের বিদেহী আত্মার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েই আমি এখানে এই ‘ছবি’ শব্দটি ব্যবহার করছি) খুব একটা টানবে বলে আমার মনে হয় না। তবে এর বাইরে শিল্পের কাছে যাঁদের অন্যরকম প্রত্যাশা আছে, পর্দায়ও যারা নগ্ন সত্যকে প্রত্যক্ষ করতে বিব্রত হন না, তাঁদের চিন্তা ও মননকে ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ প্রবলভাবে নাড়া দেবে বলে আমার ধারণা। ইদানীং ছুটিতে যারা দলবেঁধে হাওরের দারুণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে ছোটেন, ছবিটি দেখে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়ে আসার সময় ভাটি অঞ্চলের মানুষের এই নিদারুণ দারিদ্রের কথা স্মরণ করে অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও তাঁদের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফুটে উঠবে  কি? বিবেকের কোনো নড়াচড়া কি তাঁরা নিজেদের মধ্যে টের পাবেন? সেটা যদি পান, তবে সেটাই হবে এই ছবির সার্থকতা। আমি অবশ্য জানি না সেটাই ঠিক  নির্মাতার উদ্দেশ্য ছিল কি না।
 
মুহাম্মদ কাইউমের প্রথম চলচ্চিত্র এই ছবিটি ব্যবসা সফল হলে আমাদের চলচ্চিত্রের ভবিষ্যতের জন্য তা এক শুভ ইঙ্গিত বয়ে আনতে পারে। যদিও আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় অতটা আশাবাদী আমি হতে পারছি না। তবে একাধিক কারণে ছবিটি বিদেশী দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বলে ধারণা করি। বিদেশী চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়ে পুরস্কার ও প্রশংসা সনদ পাওয়ার পর দেশের বিদগ্ধজনও ছবিটির দিকে ফিরে তাকাতে পারেন। তেমন সম্ভাবনা এ ছবিটির ক্ষেত্রে যথেষ্ট। আর চলচ্চিত্রবোধ ও নির্মাণ দক্ষতার বিচারে মুহাম্মদ কাইউম তাঁর এ প্রথম প্রচেষ্টাতেই আমাদের ভিন্নধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সামনের  সারিতে নিজেকে দাঁড় করাতে পেরেছেন, একথা একরকম নির্দ্বিধায় বলা যায়।

ভালো লেগেছে মুহাম্মদ কাইউম তাঁর এ চলচ্চিত্রটি উৎসর্গ করেছেন এদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ প্রয়াত মুহম্মদ খসরুকে। এর জন্যও বাড়তি ধন্যবাদ তাঁর প্রাপ্য।


Leave a reply