Select Page

ফারুকী সমাচার

ফারুকী সমাচার

faruki

পিপঁড়াবিদ্যা

ফারুকী উনার অন্যান্য মুভির মত এই মুভিতেও বোঝতে ব্যর্থ হয়েছেন যে উনি সিনেমা বানাচ্ছেন নাটক বা টেলিফিল্ম নয়। অভিনয়ের ‘অ’ জানে না এমন একজনকে দিয়ে কেন্দ্রীয় চরিত্র করানো হয়েছে, কারণ হতে পারে পয়সা বাঁচানো। পয়সা বাঁচিয়ে ইন্ডিয়ান নায়িকাকে ঠিকঠাক পেমেন্ট করা। টিভিতে বেশ কিছুদিন আগে ফারুকী সাহেবের ইন্ডিয়ান সিনেমা আমদানি বিষয়ক একটা জ্বালাময়ী ভাষণ শুনেছিলাম। সে ভাষণ শুনে খুব ভালো লেগেছিল এবং আশাবাদী হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু উনি নিজে উনার সিনেমার নায়িকা ইন্ডিয়া থেকে আমদানি করলেন! ইন্ডিয়ান সিনেমা আমদানি করা যাবে না কিন্তু ইন্ডিয়ান অভিনেতা অভিনেত্রী ঠিকই আমদানি করা যাবে! ক্যামনে কি! সূত্রটা ভালো করে বোধগম্য হল না! মজার ব্যাপার হল, ইদানিং উনি আবার ইন্ডিয়ান মুভি আমদানি করার পক্ষে কন্ডিশনাল যুক্তি দেখাচ্ছেন।

মুভির কেন্দ্রীয় চরিত্র মিঠু এমএলএম কোম্পানীতে চাকরি করে। সে পুরানো মোবাইল কিনতে গিয়ে সেই মোবাইলে এক টপ নায়িকার একটি গোপন ভিডিও পেয়ে যায়। এই ভিডিও বাজারে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে নায়িকার ব্লাকমেইলিং করার চেষ্টা নিয়ে পুরো মুভি। নায়িকা শীনা চৌহানের অভিনয় মোটামুটি কিন্তু অতিরিক্ত ইংলিশ ডায়লগ কেমন ক্ষ্যাত ক্ষ্যাত লাগছে। মিটুর দুর্বল অভিনয়ের সাথে মুভিতে কন্টিনিউটির অভাব চোখে পড়ার মত ছিল। মিটুর পুরাতন প্রেমিকার স্বামী’র একটা ইনটারেষ্টিং ক্যারেক্টার আছে যেটা সামান্য সময়ের জন্য বিনোদন দিয়েছে। তবে গল্পটাকে একটু এদিক সেদিক করে, নায়িকার প্রেমিকের চরিত্রটাকে আরেকটু এক্টিভ করে একটা ভালো সাইকো থ্রিলার বানানো যাইত।

বেশ আগে হ্যান্ডফোন নামের একটা কুরিয়ান মুভি দেখছিলাম, একই থিমের। ফারুকি সাব হ্যান্ডফোন থেকে থিম ধার করে বা ইন্সপায়ার হয়ে পিপঁড়াবিদ্যা বানিয়েছেন কিনা সেটা কিন্তু উনি কোথাও উল্লেখ করেননি।

স্পার্টাকাস’ ৭১

এটা একটা টেলিফিল্ম। আমার দেখা মতে এটাই ফারুকীর সবচেয়ে সেরা এবং ভালো লাগার মত কাজ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ের গল্প। দুই জমজ ভাই শাওন-বাঁধন এবং তার পরিবারের গল্প। জমজ ভাইয়ের বড়টা যুদ্ধে চলে যায়। বড় ছেলে যুদ্ধে যাওয়ার কথা এলাকার রাজাকার জানার পর যে তার পরিবারের উপর যে কি কেয়ামত যায় সেটাই দেখানো হয় টেলিফিল্মে। আর দেখানো হয় এক বাবা তার পরিবারকে রক্ষা করতে কি না করে! সবকিছু মিলে খুব উপভোগ্য। এই প্রথম কোথাও দেখলাম যেখানে রাজাকারের চরিত্রকে দাঁড়ি টুপি পাঞ্জাবী পড়ানো হয়নি।

ফারুকীর কোন কাজ যদি কাউকে দেখার জন্য রিকমেন্ড করার মত থেকে থাকে তাহলে এই টেলিফিল্ম আছে। স্পার্টাকাস’৭১ এর একটা সিকুয়্যাল বানাইছেন যেটা আবার তেমন ভালো হয়নি।

থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার

কিছু বিভ্রান্তিকর, খাপছাড়া এবং বাস্তবতা বিবর্জিত দৃশ্য দিয়ে সিনেমার শুরু। পরিচালক মনে হয় ভুলে গেছেন মুভির কল্পনা দৃশ্যেও ন্যূনতম কিছু বাস্তবতা থাকতে হয়। মুভির প্রধান চরিত্র রুবা, মুন্না এবং তপু। রুবা আর মুন্না এক সাথে লিভ টুগেদার করে। লিভ টুগেদার বললাম কারণ মুভিতে কখনোই স্পষ্ট হয় না যে রুবা আর মুন্না আদৌ বিবাহিত কিনা। খুনের দায়ে মুন্না জেলে যাওয়ার পর রুবা একা হয়ে যায়। তারপর পুরো মুভিতে একটা একা মেয়ে সমাজে কতটা নিরাপত্তাহীন বা কতটা সমস্যায় পড়তে হয় সেই ব্যপারটা টুকরও টুকরো দৃশ্যের মাধ্যমে তুলে ধরা চেষ্টা করা হয়েছে। এরকম অবস্থায় রুবার জীবনে তার পুরানো বন্ধু অপুর আগমন। তারপর অপুর সাথে রুবার কিছু গতানুগতিক দৃশ্যের মাধ্যমে মুভি শেষ। মুভি শেষ হওয়ার পর মনে হল পরিচালক বিরিয়ানী বানাতে গিয়া খিচুড়ি বানিয়ে ফেলেছেন। দুর্বল চিত্রনাট্য, সাদামাটা সংলাপ, অভিনয়জ্ঞান শূন্য অপুর দুর্বল অভিনয়ের ভিতর লিমনের গানগুলো ভালো ছিলো।

ফারুকী এই মুভিতেও ব্যর্থ হয়েছেন এটা বুঝতে যে উনি সিনেমা বানাচ্ছেন, টিভি নাটক বা টেলিফিল্ম বানাচ্ছেন না! অভিনয়ের অ’ও না জানা গায়ক তপুকে এই ছবিতে অভিনয় করানো হয়েছে ইয়াং জেনারেশনের কাছে তপুর জনপ্রিয়তাকে (তৎকালীন) কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করার জন্য, এছাড়া আর কোনো কারণ আমার চোখে পড়ছে না।

মেইড ইন বাংলাদেশ

আনিসুল হকের কাহিনী নিয়ে সারওয়ার ফারুকীর ছবি মেইড ইন বাংলাদেশ। ছবির গল্প বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু চিল্লাচিল্লি আর গালাগালিতে ভরপুর জঘন্য সংলাপ, জঘন্য নির্মাণ শৈলী আর জঘন্য অভিনয়ে ছবির গল্পের বারোটা বেজেছে। সিনেমায় দুইভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশে দেখায় শহরে বেকার খোরশেদের প্রাত্যাহিক জীবন এবং তার সাথে বিদেশে স্বামী থাকা পাশের বাসার বৌদির ইটিশ পিটিশ। দ্বিতীয় অংশে দেখায় খুরশিদ আলম একটা মফঃস্বল শহরে গিয়ে ডিসি অফিসে ডিসিসহ এলাকার সব গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জিম্মি ঘটনা। এই জিম্মির কারণ খুরশিদ আলমের কিছু দাবি আছে সেগুলা সরকারকে পূরণ করতে হবে। ছবির সব শেষে দেখা যে পিস্তল আর বোমার ব্রিফকেস দিয়ে তাদের জিম্মি করেছিল তা আসল নয়, বোমা এবং পিস্তল দুইটাই নকল।

টেলিভিশন

টেলিভিশন সিনামাটা ভালো লাগেনি। প্রথমত এটাকে সিনেমা মনে হয়নি, মনে হয়েছে টেলিফিল্ম দেখছি। দ্বিতীয়ত ছবিটাতে কিছু অসঙ্গতি আছে যেগুলা চোখে পড়ার মত। পজেটিভ যে ব্যাপারটা চোখে পড়ল সেটা হল-কিছু কিছু দৃশ্যের চিত্রায়ণ দারুণ হইছে আর করিম ভাইয়ের অভিনয়। তিশা নিঃসন্দহে একটা ভালো অভিনেত্রী। তবে ফারুকী সাহেবের নাটক সিনেমায় সেই ভালোটা দেখা যায় না। সেটা দেখা যায় ফারুকীর নাটক সিনেমা ছাড়া তিশার অন্যান্য নাটকগুলোতে। ফারুকী সাহেব তিশা’র মত একটা ভালো অভিনেত্রীরে এক-ই টাইপের অভিনয় করানোর মাধ্যমে একটা বৃত্তের মধ্যে বন্দি করে রাখছেন। তিশা যদি সে বৃত্তের বাহিরে চলে না আসতে পারে, তাহলে হয়ত একদিন তিশা গোনার বাহিরে চলে যাবে।

উপসংহার: এই লোকটার বাংলা সিনেমার প্রতি আদৌ ভালবাসা আছে কিনা বা বাংলা সিনেমার উন্নতি উনি আদৌ চান কিনা , না বাংলা সিনেমার কাঁধে বন্দুক রেখে অখাদ্য কুখাদ্য বানিয়ে শুধু টু পাইস কামানোই তার একমাত্র উদ্দেশ্য, সেটা বিরাট প্রশ্ন বোধক চিহ্ন


মন্তব্য করুন