Select Page

ফুল অ্যান্ড ফাইনাল: আরো একটি শাকিব যাদু ও ছিঁচকে অভিযোজন

ফুল অ্যান্ড ফাইনাল: আরো একটি শাকিব যাদু ও ছিঁচকে অভিযোজন
Full and Final Poster

অসংখ্য শাকিব ভক্তের মাঝে দেখলাম অভিজ্ঞ পরিচালক ‘মালেক আফসারী’ এর ‘ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’। নিশ্চিত ব্যবসা সফল এই সিনেমার ভাল মন্দ বিভিন্ন দিক নিয়ে আমার মতামতগুলি আপনাদের জানাচ্ছি।

একনজরে ‘ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’

কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্যঃ আবদুল্লাহ জহির বাবু
চরিত্র রূপায়নেঃ শাকিব খান, ববি, তানভীর খান, অমিত হাসান, কাবিলা ও অন্যান্য।
গানের কথাঃ কবির বকুল ও সুদীপ কুমার দীপ।
সুর ও সঙ্গীত পরিচালনাঃ আলী আকরাম শুভ ও আহমেদ হুমায়ুন।
চিত্রগ্রহনঃ লাল মোহাম্মদ।
কোরিওগ্রাফীঃ মাসুম বাবুল, সাইফ খান কালু ও তানজিল।
এ্যাকশনঃ ডি.এইচ চুন্নু।
সম্পাদনাঃ তৌহিদ হোসেন চৌধুরী।
পরিচালনাঃ মালেক আফসারি
প্রযোজনাঃ তাপসী ফারুক (হার্টবিট প্রোডাকশন)।
মুক্তির তারিখঃ ১৬/১০/১৩ ইং

কাহিনী সংক্ষেপঃ
সমাজকে নেশামুক্ত ও মাদকব্যবসায়ীদের ধ্বংসের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এক প্রণোচ্ছল তরুন পুলিশ ইন্সপেক্টর রোমিও (শাকিব খান)। মাদকব্যবসায়ীদের নিশ্চিহ্ন করতে উপরোস্থ কর্মকর্তা ডিএসপি বখতিয়ার (অমিত হাসান) এর নির্দেশে রোমিও অবতীর্ণ হয় ‘ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’ নামক অ্যাসাইনমেন্টে। চলতে থাকে গুপ্তহত্যা। এরই মাঝে দেখা মেলে এক লাস্যময়ী চিত্রশিল্পী রিমঝিম (ববি) এর। আত্মগোপনে থাকা রোমিও দুর থেকে তার ভালবাসাকে নানাভাবে খুশী করার চেষ্টা করতে থাকে। কখনো সে প্রিয়ার জন্য নিজহাতে সাঁকো তৈরী করে কিংবা কখনো দিনের পর দিন আড়াল থেকে উপহার দিয়ে চলে মনোমুগ্ধকর ফুল। কিন্তু তার এই একতরফা ভালবাসার মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আরেক সিআইডি অফিসার আবিদ (তানভীর খান)। আবিদের সংগ রিমঝিমকে মুগ্ধ করে। রিমঝিম ধরে নেয় আবিদই সেই বর্ণচোরা প্রেমিক যে তার রোজ ফুল উপহার দেয়। তাই সে নিজেকে সমর্পন করে আবিদের কাছে। ফলে নিভৃতে রোমিওর অশ্রু ঝড়তে থাকে। এই প্রেমপ্রেম খেলার মাঝে যখন কর্তব্য সামনে এসে কড়া নাড়ে তখন রোমিও ও আবিদ হয়ে যায় প্রতিদ্বন্দী। যখন ডিএসপি বখতিয়ার রোমিওকে নির্দেশ দেয় আবিদকে হত্যা করার তখন রোমিওর সামনে উন্মোচিত হয় আরেক উপাখ্যান। শুরু হয় বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মাঝে দুলতে থাকা আরেক ‘ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’ মিশন। এই সংঘাতের পরিনতি জানতে দেখুন ‘ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’।

শক্তিমত্তাঃ
শাকিব খান, দৃষ্টিনন্দন চিত্রায়ন, সুরেলা গান এবং এ্যাকশন।
দুর্বলতাঃ
দুর্বল কাহিনীবিন্যাস, ছিঁচকে অভিযোজন (Adaptation) ও দুর্বল কন্টিনিওয়িটি।

রেটিং: ৬.৫/১০

সমালোচকের দৃষ্টিতে ‘ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’

কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্যঃ
তেলেগু, তামিল ও হিন্দি সিনেমার সংমিশ্রনে তৈরী একটি পাঁচমিশালী কাহিনী। আবার কেউ কেউ বলছেন ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কোরিয়ান সিনেমা Daisy এর সাথে এর কাহিনীর প্রচুর মিল আছে। নতুন চিত্রনাট্যকাররা অভিযোজন (Adaptation) করে চেঁপে গেলে মানায় কিন্তু অভিজ্ঞরা যদি সেই কাজ করেন তাহলে আমাদের সিনেমা কি অর্জন করবে ? তুলনামুলকভাবে সংলাপ ভাল লেগেছে। চিত্রনাট্যে অহেতুক আন্ডারওয়ার্ড ডনের সংখ্যা বেশী না এনে রোমান্টিকতা প্রাধান্য পেলে ভাল লাগত। কাহিনীর শুরুতে রোমিও নিজেকে পুলিশ ইন্সপেক্টর বলছে আবার শেষের দিকে এএসপি বলছে। কোনটা ঠিক ধরে নেব ? যদিও তার পোষাকে পুলিশ ইন্সপেক্টরের ব্যাজই ছিল !! আরেকটু সচেতন হলে আরোও সুন্দর চিত্রনাট্য দেখতে পেতাম।

অভিনয়ঃ
অভিজ্ঞ ও পরিমিত অভিনয়ের ছাপ দেখিয়েছেন শাকিব। দীর্ঘদিন পর শাকিব খান এর অভিনয়ে মুগ্ধ হলাম। আরো ভাল লাগতো যদি শাকিব তার বাড়তি মেদ ঝড়িয়ে সুঠামদেহ নিয়ে অবতীর্ন হতেন। ববির গ্ল্যামার ও অভিনয়ে মোহমুগ্ধ হয়েছি। সচেতন থাকলে তিনি হবেন লম্বা রেসের ঘোড়া। অমিত হাসান খুবই ভাল অভিনয় করেছেন। নবাগত তানভীর খান ও অভিজ্ঞ অমিত হাসান খুবই ভাল করেছেন। বরাবরের মতো কাবিলা সংক্ষিপ্ত সময়ে আলো ছড়িয়েছেন।

গানঃ
সুপারহিট তেলেগু সিনেমা রাছা (Rachcha) এর জনপ্রিয় গান ‘‘ভানা ভানা বিল্লু বাই বাই..’’ এর অনুকরনে তৈরী ‘‘ভালবাসা হয়ে যায় ..’’ গানটি ভাল লেগেছে। পাশাপাশি ‘‘যেখানে যাই যেখানে …’’ গানটিও সুন্দর হয়েছে। তবে আইটেম গান ‘‘পোলারে পোলারে তুই আগুনের গোলারে…’’ উপভোগ করতে পারিনি।

এ্যাকশনঃ
কেবলশট (Cable Shot) এর জন্য আমাদের ফাইট ডিরেক্টরদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষনের প্রয়োজন আছে। প্রতিটি কেবলশটে কস্টিউম বেঢপভাবে ফুলে থাকা হাস্যকর লেগেছে। মোটরবাইক দিয়ে দেয়াল ভাঙ্গার পুরোনো হাস্যকর রীতির আজো পরিবর্তন হলো না। নায়কের নায়কিচিত পাওয়ারফুল উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়নি।

শিল্প নির্দেশনাঃ
শিল্প নির্দেশনার প্রসংগ আসলেই আমাদের সিনেমার বাজেট ফুরিয়ে যায়। তাই জোড়াতালির কাজ প্রায় প্রতিটি সিনেমাতে পরিলক্ষিত হয়। ‘ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’ ও এর ব্যতিক্রম নয়।

পোষাক, অঙ্গসজ্জা ও মেকাপঃ
শাকিব খান ও কাবিলার কস্টিউমে ভিন্নতা দেখা যায়নি। সুয়ারেজ লাইনের ভেতর এ্যাকশন দৃশ্যে গর্ভবতী মহিলাকে যে প্যাড (গর্ভবতী দেখানোর জন্য) পড়ানো হয়েছিল তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল, যা দৃষ্টিকটু লেগেছে। পোষাক ও অঙ্গসজ্জা এর দিকে আরেকটু নজর দিলে ভাল লাগত।

চিত্রগ্রহনঃ
শুরুর কিছু অংশ ও আরো কিছু দৃশ্য বাদে পুরো সিনেমার চিত্রগ্রহন ভাল হয়েছে। কিছু কিছু শটে ইচ্ছাকৃতভাবে নারীদেহের বিভিন্ন অঙ্গের চিত্রায়ন অশ্লীল মনে হয়েছে। গান ও অ্যাকশন দৃশ্যে শটের বৈচিত্রতা দেখিয়ে তা আরো গতিময় করা যেত।

আলোকসম্পাতঃ
পুরো সিনেমাতে আলোকসম্পাত মোটামুটি ভাল হয়েছে। তবে কিছু অ্যাকশন দৃশ্যে ও আইটেম গানটিতে আলোকসম্পাতের দিকে আরেকটু সচেতন হলে ভাল হতো।

সম্পদনাঃ
টাইটেল কার্ড ভাল লেগেছে। কিছু কিছু জায়গায় সংলাপ বলার সময় শুধু ঠোট নড়তে দেখা গেছে কিছু শব্দ অনুপস্থিত ছিল। কয়েকটি সুপার ইম্পোজ (Superimpose) ও প্যারালাল কাট (Parallel Cut) এর জায়গায় রেশিও (Ratio) ঠিক ছিলনা। সম্পাদনায় আরো একটু সচেতন হলে আরো গতিময় সিনেমা দেখতে পেতাম।

কালার গ্রেডিং:
কালার গ্রেডিং এ আরেকটু সচেতন হলে ভাল হতো। কিছু কিছু জায়গায় কনট্রাস্ট (Contrast) ও ব্রাইটনেস (Brightness), কালার স্যাচুরেশন (Saturation) ঠিক যথোপযুক্ত ছিলনা।

পরিচালনাঃ
অভিজ্ঞ পরিচালক মালেক আফসারী এর কাছে থেকে প্রত্যাশা অনুযায় নতুন ও মেধাবী কোন নির্মান দেখতে পেলামনা। সিনেমা মুক্তির আগে তিনি জোড় গলায় মৌলিকত্বের কথা বললেও তা ছিল অসত্য কথা। কথায় বলে চুরিবিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পড় ধরা।

পরিশিষ্টঃ
শাকিব খানের তারকাখ্যাতির কারনে নিশ্চিতভাবে ব্যবসাসফল হলেও সর্বোপরী বলা যায় “ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’’ নাচ, গান ও এ্যাকশনে ভরপুর এক ছিঁচকে অভিযোজনের প্রয়াস। যা শুধুই ক্ষনিকের আনন্দ দেয়।

দেওয়ান মাহবুবুল আলম
১৯ই অক্টোবর, ২০১৩ ইং


২ Comments

  1. Dhushor

    বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে যেসব হার্ডকোর বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র হচ্ছে, তার সবগুলোর কাহিনিই সংক্ষিপ্ত সময়ের বিনোদনের জন্য, দীর্ঘ সময়ের জন্য না। আর আমাদের এখানে, বলতে গেলে পুরো ভারতীয় উপমহাদেশে এসব চলচ্চিত্র কাহিনি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অন্য ইণ্ডাস্ট্রির সাহায্য নেয়, নিজেদের মধ্যে কাহিনির আদান-প্রদান হয়। কাজেই এসব দিক থেকে ‘ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’ ক্ষমাযোগ্য। কারণ ব্যতিক্রম কাহিনি উপস্থাপন করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে গৎবাঁধা হয়ে যায়, যেটা ‘চোরাবালি’তে পরিলক্ষিত।

    তবে গানের সুর কপি করার প্রচেষ্টা ভাল লাগল না। আর পরিচালকের বড় বড় কথা কিছু কমাতে হবে। “আমি বড় বাজেটের ছবি করি … ব্লা ব্লা ব্লা” – এসব শুনতে ভাল লাগে না। আসল কাজগুলো গুছিয়ে করতে হবে। তা না হলে বড় বাজেটের ছবি বড় ধরনের ফ্লপ সিনেমায় পরিণত হতে সময় লাগবে না।

Leave a reply