বাংলাদেশের অন্যতম নারী নির্মাতার কথা
উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের নারী নির্মাতাদের সংখ্যা একেবারেই কম, বাংলা চলচ্চিত্রেও সেই একই অবস্থা। চলচ্চিত্রে এখন পর্যন্ত নারী নির্মাতা হিসেবে এসেছেন,তাদের মধ্যে অন্যতম নারগিস আক্তার। তিনি বাংলাদেশের হয়ে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রে প্রথম পুরস্কারপ্রাপ্ত ও সবচেয়ে সফল নারী নির্মাতা।
একাধিক নাটক ও তথ্যচিত্র বানানোর পর ২০০১ সালে ‘মেঘলা আকাশ’ সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে অভিষিক্ত হন। এটি ছিল এইডস সংক্রামক রোগ নিয়ে প্রথম চলচ্চিত্র। এই ছবিতে মৌসুমী, আইয়ুব খান, শাকিল খান, পূর্ণিমা, ফেরদৌসী মজুমদার, শহিদুল আলম সাচ্চুর পাশাপাশি উপমহাদেশের বিখ্যাত অভিনেত্রী শাবানা আজমী ও অভিনয় করেন।ছবিটি বাণিজ্যিক ভাবে সফলতার পাশাপাশি জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়।
প্রথম ছবিতেই তিনি সেরা চিত্রনাট্যকার বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পান, এছাড়া জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমী প্রথমবারের মত জাতীয় পুরস্কারের স্বাদ পান। ছবিটি মোট ৬টি পুরস্কারে ভূষিত হয়।
প্রথম সিনেমার সাফল্যের পর দ্বিতীয় সিনেমা নির্মান করেন ২০০৫ সালে।সন্তান ধারন নিয়ে যে প্রচলিত ভুল ধারনা আছে, তা নিয়ে জনসচেতনতা মূলক এই সিনেমার নাম ‘চার সতীনের ঘর’। সেলিনা হোসেনের ছোট গল্প অবলম্বনে তিনি এই ছবি নির্মান করেন। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন চার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ববিতা, দিতি, ময়ুরী ও শাবনূর, তাদের স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেন আলমগীর। এছাড়া আরো অভিনয় করেছিলেন মাহফুজ আহমেদ,ড্যা নি সিডাক, উপমা, রানী সরকারসহ আরো অনেকে।
নিজের প্রথম সিনেমা ‘মেঘলা আকাশ’ এর সিক্যুয়েল বানালেন ‘মেঘের কোলে রোদ’। এটিও এইডস নিয়ে জনসচেতনতামূলক সিনেমা। ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রিয়াজ, পপি, টনি ডায়েস, দিতি, কবরী, দিলারা জামান, আমিরুল হক চৌধুরীসহ আরো অনেকে। প্রনব ঘোষের সুরে গান গুলো বেশ শ্রোতাপ্রিয়তা পায়।বাণিজ্যিক দিক দিয়ে অসফল হলেও জাতীয় পুরস্কারে ছবিটি মোট ৬ টি পুরস্কার পায়।
জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পপি এই ছবি দিয়ে দ্বিতীয়বারের মত জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়। সেরা কাহিনীকার বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পান মো. রফিকুজ্জামান, সেরা গীতিকার বিভাগে প্রথম জাতীয় পুরস্কার পান কবির বকুল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প ‘সমাপ্তি’ অবলম্বনে ২০১০ সালে নির্মান করেন ‘অবুঝ বউ’। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশুশিল্পী প্রিয়াঙ্কা নায়িকা রুপে এই ছবি দিয়ে আসেন। এছাড়া অভিনয় করেন ফেরদৌস, ববিতা, শাকিল খান, নিপুণ, রানী সরকারসহ আরো অনেকে।প্রথম তিনটির মত প্রশংসিত না হলেও, সিনেমাটি ৩টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার পায়। তিনি নিজে সেরা চিত্রনাট্যকারের জাতীয় পুরস্কার পান। তবে জুরি বোর্ডের সদস্য হয়েও সুজেয় শ্যামের জাতীয় পুরস্কার পাওয়া নিয়ে সমালোচিত হয়।
বেশ কয়েক বছর বিরতি দিয়ে ২০১৫ সালে নির্মান করেন ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’। ড. মাহফুজুর রহমানের কাহিনীতে এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ববিতা, শায়না আমিন, ইমন, অনি ,ফারাহ রুমাসহ আরো অনেকে। এই ছবিটি বাণিজ্যিক দিক দিয়ে কিছুটা সফল হলেও,প্র ত্যাশামাফিক হয়নি।
নানা জটিলতায় বহুদিন ধরে আটকে থাকা ‘পৌষ মাসের পিরিত’ অবশেষে মুক্তি পায় ২০১৬ সালে। নরেন্দ্রনাথ মিত্রের উপন্যাস ‘রস’ অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিতে অভিনয় করেছেন পপি, টনি ডায়েস, প্রিয়াঙ্কা, আহমেদ রুবেলসহ আরো অনেকে।ছবিটি বেশ প্রশংসিত হয়,বিশেষ করে পপির অভিনয় বেশ সমাদৃত হয়।
২০১২-১৩ অর্থবছরে সরকারী অনুদান পান সেলিম আল দীনের জনপ্রিয় মঞ্চনাটক ‘যৈবতী কন্যার মন’ চলচ্চিত্রায়নে। তবে এখনো তিনি ছবি মুক্তি দিতে পারেননি, যার জন্য তাঁর নামে মামলা রয়েছে। এছাড়া প্রায় এক যুগ ধরে আটকে আছে মাহফুজ, পপি, আলেক, ময়ুরীকে নির্মিত ছবি ‘শর্টকাটে বড়লোক’।