Select Page

বাংলা চলচ্চিত্রে হিন্দু-মুসলিম প্রেম

বাংলা চলচ্চিত্রে হিন্দু-মুসলিম প্রেম

ভালোবাসা চিরন্তন। জাত-কূল, ধর্মের বাধা পেরিয়ে যুগলের সফল পরিণতি ঘটে। তবে উপমহাদেশে ভালোবাসায় অন্যতম অন্তরায় ধর্মীয় সংকট।

দুটি ভিন্ন ধর্মের মানুষের ভালোবাসা নিয়ে যুগ যুগ ধরে সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক বৈরিতা, এর মাঝে কারো প্রেম সফল হয় কিংবা কারো ব্যর্থ। এই সংকট নিয়ে হয়েছে বহু চলচ্চিত্র। বাংলাদেশেও নির্মিত হয়েছে এইধারার বেশ সংখ্যক চলচ্চিত্র।

নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ভালোবেসে মোহাবিষ্ট হন হিন্দু নর্তকী আলেয়ার প্রতি। খুব সম্ভবত খান আতার এই ঐতিহাসিক বাংলাদেশি চলচ্চিত্রেই প্রথম দুটি ভিন্ন ধর্মের ভালোবাসা দেখানো হয়। যদিও এর ঐতিহাসিক সত্যতা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ।

তবে এই ধর্মীয় সংকটকে মুখ্য করে দারুণ সাড়া জাগায় রাজ্জাক- শাবানার ‘অবুঝ মন’ ছবিটি। এই ধারার সিনেমা বিচারেও এখানো ‘অবুঝ মন’ অন্যতম।

ধর্মীয় সংকট নিয়ে প্রেমনির্ভর সিনেমা বেশি নির্মিত হতে থাকে নব্বই দশকের পর থেকে। একে একে যুক্ত হয় অবুঝ দুটি মন, দোলা, প্রেম পিয়াসী, আজ গায়ে হলুদ, প্রেমের তাজমহল, সবার উপরে প্রেম, ছোট্ট একটু ভালোবাসা, জীবনের চেয়ে দামী, ভুল, এই তো প্রেম, অন্তরজ্বালা, স্বপ্নজাল থেকে সর্বশেষ ফাগুন হাওয়ায়।

সিনেমাগুলো মূলত প্রেমে ধর্মীয় সংকট দর্শকদের জানাতে নির্মাতারা বানিয়েছেন। ভারতে দুইপক্ষীয় দেখালেও আমাদের দেশের নির্মাতারা সব সময় একপক্ষীয় থেকে গেছেন কিংবা বলা যায় সেভাবে ঝুঁকি নিতে চাননি।

যেমন; প্রায় প্রতিটি ছবিতেই নায়ক মুসলিম থাকেন,এবং নায়িকাকে অন্য ধর্মের। আবার নায়িকার ধর্মেই খল চরিত্রগুলোর ছড়াছড়ি। পুরো ছবিতে দেখিয়েছেন মানব ধর্মই আসল ধর্ম, নায়ক- নায়িকারা রক্ত বের করে মিলিয়ে দিয়েছেন। তবুও শেষে তাদের সফল পরিণতি ঘটাননি।

সেখানে দেখানো হয়েছে নায়ক-নায়িকা মারা গেছেন কিংবা নায়িকাকে নিজ ধর্মের কারো সাথেই অন্যত্র বিয়ে দেয়া হয়েছে।

‘অবুঝ মন’কে অনুসরণ করেই নির্মিত হয়েছে ‘আজ গায়ে হলুদ’ ও ‘সবার উপরে প্রেম’। অন্যদিকে ‘অবুঝ দুটি মন’কে অনুসরণ করেছে দোলা, প্রেম পিয়াসী ছবিগুলো। ধর্মীয় সংকট নিয়ে প্রেম নির্ভর ছবিতে অনন্য হতে পারতো রিয়াজ-শাবনূরের ‘প্রেমের তাজমহল’, কিন্তু শেষে এসে চিত্রনাট্যে জোরপূর্বক নায়িকার জন্ম পরিচয় এনে সিনেমাটির শিল্প মান নষ্ট করেছে বলে মনে হয়েছে, একই কথা ‘জীবনের চেয়ে দামী’ সিনেমার বেলায়ও।

তবে এইক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রিয়াজ- পূর্ণিমার ‘ছোট্ট একটু ভালোবাসা’, ডাক্তার বাড়িতেও শাবনাজ- অমিতের বিয়ে হয়, তবে গল্পে সেই বিষয় মুখ্য ছিল না। প্রথমটিতে সমাজ ও পরিবারের বাধা পেরিয়ে তারা অজানা গন্ত্যবে বের হয়। আর ‘ডাক্তার বাড়ি’তে অন্তঃধর্মীয় প্রেমের বিষয়টি আসলেও নায়িকা বিয়ের  মাধ্যমে নায়কের বাড়িতে স্থান পায়। যদিও এ সংক্রান্ত কোনো সংকট সিনেমায় প্রাধান্য পায়নি।

মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা ‘এই তো প্রেম’ কিংবা তানভীর মোকাম্মেলের ‘চিত্রা নদীর পাড়ে’তেও এই একইভাবে ধর্মীয় দিকটি ফুটে উঠেছে। ‘স্বপ্নজাল’ যখন বানানো হল, তখন আশা করেছিলাম অন্তত গিয়াসউদ্দিন সেলিম এই চিরাচরিত ধারা ভাঙ্গবেন, কিন্তু না তিনিও ঝুঁকি নিতে চাইলেন না।

সর্বশেষ ভাষা আন্দোলন ও প্রেমের সিনেমা ‘ফাগুন হাওয়ায়’ সেই নায়ক মুসলিম ও নায়িকা অন্যধর্মের। তবে গল্পে ধর্মীয় সংকট স্থান পায়নি। আর সমাপ্তিও ছিল ইতিবাচক। তৌকীর আহমেদের প্রথম সিনেমা ‘জয়যাত্রা’য় ছোট পরিসরে দেখানো হয়েছিল খ্রিস্টান যুবক ইন্তেখাব দিনার প্রেমে পড়েছিলেন মুসলিম কন্যা চাঁদনী, অবশ্য তাদেরও মিল হয়নি। সেখানে ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ব্যতিক্রম কিছু দেখালেন নির্মাতা।

আর ভবিষ্যতে বাংলা ছবিতে এই ধর্মীয় সংকটকে চিরাচরিত ধারা ভেঙে ভিন্নরূপে উপস্থাপন করা হবে আশা করতেই পারি।


Leave a reply