Select Page

রিভিউ
বাড়ির নাম শাহানা: খাঁচার পাখি যখন মুক্ত

<div class="post-subheading">রিভিউ</div>বাড়ির নাম শাহানা: খাঁচার পাখি যখন মুক্ত

বাড়ির নাম শাহানায় দীপা চরিত্রে অনন সিদ্দিকা অসাধারণ। সংলাপ বলার ধরণ ও এক্সপ্রেশন দুটোই প্রশংসনীয়। এই চরিত্রের জন্য তাকে ছাড়া আর কাউকে ভাবা কঠিন। তার পাশাপাশি ইরেশ যাকের ও লুৎফর রহমান জর্জ গল্পে আলাদা মাত্রা যোগ করেছেন। তবে অননের পর সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন জুলেখা চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী—তার প্রাণবন্ততা বেশ নজর কাড়ে …

 [স্পয়লার নেই]

টেলিফোনের মাধ্যমে সতেরো বছরের ডানপিটে দীপার বিয়ে হয় এক প্রবাসী বিপত্নীকের সঙ্গে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি স্বামীকে দেখার সুযোগ পাননি। পরবর্তীতে যখন মুখোমুখি হন, তখন আবিষ্কার করেন—তিনি আসলে পঞ্চাশোর্ধ একজন পুরুষের স্ত্রী। সমাজের চাপে পড়ে দীপা চেষ্টা করেন নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে। কিন্তু ভেতরের অশান্তিকে দীর্ঘদিন বেঁধে রাখা যায় না। তাই বাঁধন ছিঁড়ে তিনি উড়াল দেন আপন ঠিকানায়। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—ডিভোর্সি দীপাকে কি এই সমাজ মেনে নেবে? আর দীপা কি পারবেন নিজের মতো করে বাঁচতে? সেই উত্তর পাওয়া যাবে লীসা গাজী পরিচালিত ও অনন সিদ্দিকা অভিনীত সিনেমা ‘বাড়ির নাম শাহানা’-তে।

শৈশব থেকে আমরা প্রায়ই শুনে আসি—“লোকে কী বলবে।” এই একটি বাক্যই অসংখ্য মানুষের স্বপ্নকে অকালেই থামিয়ে দেয়। কিন্তু সেই ভয়-শঙ্কা এড়িয়ে নিজের জায়গা করে নেওয়া যায় কীভাবে, সেটাই লীসা গাজি দেখিয়েছেন তার প্রথম সিনেমায়। সমাজ বা পরিবেশের অন্যায় নিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটা যে শুধু বিদ্রোহ নয়, বরং সেটাই যে একমাত্র মুক্তির পথ-এই ব্যাপারটা বেশ ভালোভাবে ফুটে উঠেছে ‘বাড়ির নাম শাহানা’য়।

সিনেমার গল্পটি এগিয়েছে নন-লিনিয়ার ভঙ্গিতে। দীপার জীবনদর্শনের প্রতিফলনে বর্ণনা গিয়েছে অতীত আর বর্তমানের ভেতর দিয়ে। সমাজ ও পরিবারের তোয়াক্কা না করে দীপা লড়ে গেছেন নিজের লড়াই। এখানেই সিনেমাটি নিজেকে আলাদা করে তুলতে পেরেছে। “তালাক কি আমার গায়ে লেখা আছে?” কিংবা “রহমান বাড়ির ইজ্জত, আমার পায়ের শিকল”—এমন শক্তিশালী সংলাপগুলো দর্শককে ভাবাবে এবং সিনেমার আবহকে গভীর করবে। পাশাপাশি প্রচলিত কুসংস্কার ও ছোটখাটো মজার মুহূর্তও ছবিকে করেছে প্রাণবন্ত।

সিনেমায় দীপা চরিত্রে অনন সিদ্দিকা অসাধারণ। সংলাপ বলার ধরণ ও এক্সপ্রেশন দুটোই প্রশংসনীয়। এই চরিত্রের জন্য তাকে ছাড়া আর কাউকে ভাবা কঠিন। তার পাশাপাশি ইরেশ যাকের ও লুৎফর রহমান জর্জ গল্পে আলাদা মাত্রা যোগ করেছেন। তবে অননের পর সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন জুলেখা চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী—তার প্রাণবন্ততা বেশ নজর কাড়ে। দীপার মায়ের ভূমিকায় যিনি ছিলেন, তাকেও আলাদাভাবে উল্লেখ করতেই হয়।

এই সিনেমার টেকনিক্যাল দিনগুলোর কাজও ভালো হয়েছে। সিনেমাটোগ্রাফি সময়কাল বিবেচনায় চমৎকার। কালার গ্রেডিং যথাযথ, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সংযত হলেও কার্যকর। গানগুলোর অবস্থানও গল্পের সঙ্গে মানানসই।

সব মিলিয়ে, ‘বাড়ির নাম শাহানা’ আমার কাছে পরিচ্ছন্ন ও নির্মল এক অভিজ্ঞতা। সামাজিক বাস্তবতার বেড়াজালে আবদ্ধ এক নারীর মুক্তির গল্প এটি। যারা সত্যিকারের গল্পনির্ভর সিনেমা দেখতে চান, তারা অবশ্যই একবার ঘুরে আসতে পারেন শাহানার বাড়ি থেকে।


Leave a reply