Select Page

বারুদ : ঢালিউডে হলিউডের ‘গডফাদার’

বারুদ : ঢালিউডে হলিউডের ‘গডফাদার’

 

দেওয়ান নজরুল, বাংলাদেশের মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে যাকে ‘ডায়নামিক ডিরেক্টর’ বলা হতো। যিনি একাধারে একজন পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ ও গান রচয়িতা। হলিউডের ‘গডফাদার’ ছবিটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ১৯৮০ সালে নির্মাণ করেন ‘বারুদ’ ছবিটি যা সেইসময় এইদেশের দর্শকদের প্রশংসা পায়।

ছবিতে খুব সাধারণ দরিদ্র আজিম একসময় অপরাধ জগতের কিং হয়ে যান যাকে সবাই চিনতো ‘দাতা আকবর’ নামে। মাফিয়া ডন জসিমের হাত ধরে উত্থান অতপর জসিমের সাথে বিরোধ ও সংঘাতের দারুণ জমজমাট একটি ছবি ‘বারুদ’।

এ ছবিতে ছিলেন ক্যারিয়ারে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা সোহেল রানা, ওয়াসিম, শাবানা, ববিতা’র মতো তারকারা। কিন্তু সোহেল রানা ও ববিতা ছবির গুরুত্বপূর্ণ দুটি চরিত্রে অভিনয় করলেও কারো বিপরীতে কোন নায়িকা/নায়ক ছিলেন না। ছবিতে ছিল না কারো কোন রোমান্টিক গান।

‘বারুদ’ এর গল্পে আজিমে সুজাতা দম্পতির তিন ছেলেমেয়ের চরিত্রে ছিলেন সোহেল রানা (জনি), ওয়াসিম (রনি) ও ববিতা (নাজমা)। সোহেল রানা পিতা আজিমের যোগ্য উত্তরসুরি হিসেবে অপরাধ জগতের সবকিছু দেখভাল করেন আর ওয়াসিম পিতা ও বড় ভাইয়ের এসব কর্মকাণ্ডের কিছুই জানতো না যে বিদেশে লিখাপড়া করতো।

ববিতার সাথে বিয়ে হয় আদিলের যে কিনা অর্থলোভী ও লম্পট। আদিল অর্থের লোভে জসিমের গুপ্তচর হিসেবে আজিম, সোহেল রানার সব খবরাখবর পৌঁছে দিতো। ছোট ছেলে ওয়াসিমের চোখে একদিন অপরাধ জগতের কর্মকাণ্ড ধরা পড়ে যায়। যার ফলে সে পরিবার থেকে বিচ্ছিন হয়ে যায় কিন্তু আজিমকে হত্যার উদ্দেশ্য জসিমের বাহিনী যখন আক্রমণ করে হাসপাতালে পাঠায় তখন অসুস্থ পিতার কাছে ফিরে আসে।

জসিম যখন জানতে পারে আজিম মরেনি পরবর্তীতে আজিমকে যখন আবার জসিম বাহিনী হত্যা করতে হাসপাতালে আসে তখন ওয়াসিমের বুদ্ধি ও প্রতিরোধের মুখে জসিম বাহিনী পালিয়ে যায়। আজিমের অনেক বিশ্বস্ত ও সাহসী দেহরক্ষীসহ পুরনো বন্ধু হাসমত, আনিস যখন জসিম বাহিনীর চোরাগুপ্ত হামলায় নিহত হয় তখন সোহেল রানা জসিম বাহিনীকে প্রতিরোধে মরিয়া হয়ে উঠে। পিতা আজিমের পাশে ওয়াসিম এসে দাঁড়ায়। অবশেষে সোহেল রানা ও ববিতার করুণ মৃত্যু ও আজিম পুলিশের হাতে আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে ছবিটা শেষ হয়।

দেওয়ান নজরুল দেখিয়ে দিয়েছিলেন কিভাবে সময়ের জনপ্রিয় দুই নায়ক-নায়িকাকে গতানুগতিক প্রেম-রোমান্সের দৃশ্য ছাড়াও পর্দায় ব্যবহার করতে হয় তা। সোহেল রানা ও ববিতাকে দর্শকরা প্রেম রোমান্সের দৃশ্য ছাড়া এর আগে কোন ছবিতে দেখেছিলেন কিনা মনে করতে পারেনি। অথচ সেই দর্শকরা ‘বারুদ’ ছবিকে দারুণভাবে গ্রহণ করেন।

শুধু বারুদ ছবিতেই নয় পরবর্তীতে দেওয়ান নজরুলের তারকাবহুল ‘ওস্তাদ সাগরেদ’ ছবিতেও সোহেল রানা ছিলেন প্রেম-রোমান্সবিহীন এক চরিত্রে যার স্ত্রী পর্দায় ছবির শুরুতেই মারা গিয়েছিল। এরপরের গল্পটা সোহেল রানাকে কেন্দ্র করেই এগিয়ে গেছে, যা অন্য একদিন বলবো।

দেওয়ান নজরুলের ‘আসামী হাজির’ ছবিটাও বাংলা চলচ্চিত্রের একটি ইতিহাস যা বাংলা চলচ্চিত্রের এক গবেষকের লিখিত বইতেও আলাদাভাবে উল্লেখ করাছিল। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অনেক গতানুগতিক ধারা ভেঙ্গে নতুন করে গড়েছিলেন দেওয়ান নজরুল যার ফলে ‘ডায়নামিক ডিরেক্টর’ উপাধিটা তার কাছেই সার্থক ও সফল।

দেওয়ান নজরুল আজ থেকে ৩৫ বছর আগে সময়ের জনপ্রিয় দু’তারকাকে নিয়ে যে ঝুঁকি নিয়েছিলেন তা আজকের কোন পরিচালক শাকিব খান, অপু বিশ্বাসকে নিয়েও করার সাহস পাবে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো আজ যারা ছবি নির্মাণ করছেন তাদের মেধা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে যারা দেওয়ান নজরুলের মতো একজন মেধাবী পরিচালক হওয়ার মতো ক্ষমতা রাখেন না। শিখতে চাইলে বাংলাদেশের ছবি দেখেই শেখা যায়, শেখার জন্য ইরান-কোরিয়ানের ছবি দেখার দরকার নেই। নিজের দেশকে না চিনে সারাবিশ্ব চিনলেও লাভ নাই।

*পোস্টার সংগ্রহ : হাসান আবির।


Leave a reply