Select Page

রিভিউ : স্বপ্নজাল

রিভিউ : স্বপ্নজাল

স্বপ্নজাল (২০১৮)
পরিচালক : গিয়াসউদ্দিন সেলিম
প্রযোজক : আবুল খায়ের (বেঙ্গল ক্রিয়েশন)
নিবেদক : অল টাইম
মিউজিক : রাশিদ শরীফ শোয়েব
চিত্রগ্রহণ : কামরুল হাসান খসরু
সাউন্ড ও সম্পাদনা : ইকবাল কবির জুয়েল

গল্প : চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীর তীরবর্তী একটি এলাকায় কাহিনীর প্রেক্ষাপট, এখানে মানুষের জীবিকা অনেকটা ইলিশ কেন্দ্রিক। তাছাড়া রয়েছে বাজারমুখী ব্যবসা ও কতিপয় ব্যবসায়ী। তাদের মাঝে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার পাশাপাশি রয়েছে সম্মান ও মর্যাদার স্নায়ুযুদ্ধ। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র অপু (ইয়াশ রোহান) ও শুভ্রার (পরী মনি) বাবা উভয়েই ব্যবসায়ী বন্ধু ও প্রতিবেশী। তাই শৈশবের ঘনিষ্ঠতায় সম্প্রদায় ভুলে গড়ে উঠে দুটি প্রাণের অবাধ প্রেম। গল্পে ঢেউ আসে শুভ্রার বাবা হীরণ সাহা (মিশা) ও এলাকার আরেক দুষ্টচক্রের হোতা আয়নাল গাজী (বাবু) র মাঝে বিরোধের সূত্র ধরে। নিখোঁজ হয় শুভ্রার বাবা। শুভ্রার পরিবার পড়ে আয়নাল গাজীর চক্রান্তের বিপাকে। শুভ্রা কি তার বাবাকে খুঁজে পায়? কিংবা সামাজিক রীতিনীতি ভুলে কি শুভ্রা আর অপু কি এক হতে পারে কিনা তা জানতে আপনাকে প্রেক্ষাগৃহে দেখতে হবে ছবিটি।

গল্পে দর্শক যে টান বা মোড় নিয়ে সময় ধরে এগুতে থাকে তা ছবিতে পুরোপুরি ছিল। তবে যারা আরেকটি মনপুরা দেখার আশায় হলে যাবেন তারা আশাহত হতেই পারেন। কারন, স্বপ্নজাল এর জায়গা থেকে একে মনপুরার সাথে প্রেম বাদে আর মেলানোর কিছু নেই। একসময় সাময়িক আপনার মনে হতেই পারে, ছবিটি তো বিরতির সময়ই শেষ কিন্তু প্রেমের সম্পর্কের পরিণতি দেখতে বসে থাকতে হবে শেষ অব্দি। যারা নব্বইয়ের মোবাইল ফোনহীন সময়ের একটা গল্প শুনতে চান তাদের জন্য ‘স্বপ্নজাল’ দারুণ হবে।

রেটিং : ৮.৫/১০

পরিচালনা : গিয়াসউদ্দিন সেলিম আগেই বলেছিলেন, স্বপ্নজাল তার পরিণত সময়ের ছবি, তা তার গল্পের ধরন ও কাজের ধরন দেখেই প্রথম আধ ঘণ্টায় টের পেয়ে যাবেন। চাঁদপুর, কলকাতা আর অল্প আগরতলাকে কী সুচিন্তিতভাবে তিনি সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে দেখিয়েছেন তা প্রশংসার দাবিদার।

তবে শেষ ক্লাইম্যাক্স কেন জানি কিছুটা দীর্ঘ লেগেছে, আগরতলার অংশটুকু গল্পে কতটুকু জোয়ার এনেছে তাও পরিষ্কার না।

রেটিং : ৮/১০

অভিনয় : আরেকটি ছবি যার কাস্টিং নিয়ে কোন কথা হবে না। যে যার জায়গায় পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন। শুধু দেশের নয় কলকাতার শিল্পীরাও স্ব স্ব ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। ইয়াশ বাদে সবাই অভিজ্ঞ- তা সে বুঝতে দেয়নি। দুরন্ত কৈশোরে প্রেমের অবুঝ প্রকাশভঙ্গী সে ফুটিয়ে তুলেছেন। পরী মনির জীবনে অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট স্বপ্নজাল। সাচ্চু, শিল্পী সরকার অপু, ফারহানা মিঠু, ভয়ংকররূপে ইরেশ যাকের, শুভ্রার বাবা মিশা নিজের নামের প্রতি সবাই সুবিচার করেছেন। তবে আলাদা করে বলি, ফজলুর রহমান বাবু, ধরেই রেখেছি কয়েকটি সম্মাননার সাথে তার সংলাপ আর দেহভঙ্গি আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে। স্পেস দিলে জাত অভিনেতা কতটা পর্দা জুড়ে বিচরণ করে তা বাবু এই ছবিতে দেখিয়েছেন। ইরেশ যাকেরকে এই বেশেও দর্শক আগে দেখেনি, মনোমুগ্ধকর ছিল। আইনজীবী শাহেদ আলীও গল্পে একটা দারুণ ধাক্কা দিয়েছে শেষে।

রেটিং : ৮.৫/১০

সংলাপ :

‘ অপু না? আব্বায় কই?’
‘ জলের গ্লাস দেয়ার ছলে একটু শুধু ছুয়ে দিও’
‘ চিঠি নিয়ে আসা পিয়নকে দেবদূতের মত লাগে’
‘ সবচেয়ে বেশি ব্যথা পেয়েছি কোথায় জানো? পাছায়’
‘ আমাকে ক্ষমা কর, আমার আয়ত্তে ছিল না’
‘ প্রেম তো অমর, মরলেই কি?’

এই ডায়লগ শুধুই স্বপ্নজালের সৌন্দর্য

রেটিং : ৯/১০

গান : এই ছবিতে গল্পের প্রয়োজনে আবহ সৃষ্টিতে তিনটি গান রাখা হয়েছে। রয়েছে রবীন্দ্রসংগীত। গান স্বল্পতা কখনো ছবিকে বোরিং করেনি।

রেটিং : ৭/১০

চিত্রগ্রহণ : ব্যক্তিগতভাবে আমি আয়নাবাজির পর এত ভালো সিনেমেটোগ্রাফি দেখলাম। খসরু ভাই নিজের মত আরেকটি মোহ সৃষ্টি করেছিলেন। লঞ্চ, নদী, চর কিংবা শেষ দৃশ্যের চিত্রগ্রহণ দারুণ ছিল।

রেটিং : ৮.৫/১০

এছাড়া সাউন্ড, সেট ডিজাইন, কোরিওগ্রাফি দারুণ ছিল।

নেগেটিভ : এ ছবিতে চোখে পড়ার মতো কোন নেগেটিভ পয়েন্ট নেই। বলতে গেলে বলতে হয়, শেষ ক্লাইম্যাক্স আরো সংক্ষিপ্ত হলে বোধহয় খুব টাইট থাকতো। মিশার উপস্থিতি হয়তো গল্পের প্রয়োজনে কম ছিল তবে তার পরিণতি কিছুটা ধোঁয়াশে ছিল। আগরতলা অংশটুকু গল্পে কতটা বৈচিত্র্য এনেছে তা বোধগম্য না। কলকাতা অংশ একটা বড় সময় পর্দায় থাকলেও গল্পে খুব প্রভাব বিস্তারকারী মনে হয়নি।

প্রাপ্তি : স্বপ্নজালের প্রাপ্তি এক নতুন পরী মনি, যা তার সামনের দিনগুলোতে ছবি নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। গিয়াসউদ্দিন সেলিম জানান দিলেন, মনপুরা ঝড়ে বক মরা ছবি না, তিনি নিজেই একটা গল্প বলার ধারা সৃষ্টি করতে পেরেছেন যা পরবর্তীতেও তার নামেই মানুষকে হলে টানবে। টালমাটাল ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রিতে আবার নতুন স্বপ্নের জাল বুনবে এই ছবি এমনটাই আশা।


মন্তব্য করুন