Select Page

বিষয়বৈচিত্র্যের সাত শর্টফিল্ম

বিষয়বৈচিত্র্যের সাত শর্টফিল্ম

পরিচালক শাফায়েত মনসুর রানা-র পরিচালনায় ঈদের সাতদিনের ৭টি শর্টফিল্ম প্রচারিত হয়েছে। শর্টফিল্মগুলো একটার থেকে আরেকটা আলাদা গল্পে, উপস্থাপনায়। শর্টফিল্মগুলো হলো : এমন যদি হতো, চা খাবেন?, এক ভাই চম্পা, শ্যুট আউট, টিকটক, মাথা নষ্ট ও আকাশ ভরা তারা।

‘এমন যদি হত’ প্রচার হয় ঈদের দিন। এই শর্টফিল্মের প্রধান চরিত্রে ছিল সাবিলা নূর। সাম্প্রতিক স্পর্শকাতর এক ঘটনা নিয়ে শর্টফিল্মটি নির্মিত হয়েছে। সাবিলা ইন্ডিপেনডেন্ট থাকতে চাইলেও পারে না কারণ সে একজনের হাতে বন্দি। যখন তার ব্যক্তিগত জীবনে চাপ প্রয়োগ করা হয় সাবিলা একটা সিদ্ধান্তে আসে। কী সে সিদ্ধান্ত সেটাই শর্টফিল্মের দেখানোর বিষয়। সাবিলার সাম্প্রতিক অভিনয়ের উন্নতির একটা ছাপ শর্টফিল্মে পাওয়া যাবে।

‘চা খাবেন’ প্রচারিত হয় ঈদের পরের দিন। এই শর্টফিল্মের প্রধান চরিত্রে ছিল অপর্ণা ঘোষ, শাহেদ আলী, নাজিবা বাশার ও ফরহাদ লিমন। চা খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়। অপর্ণা ঝোঁকের মাথায় একটা ভুল করে বসে কিন্তু সে কি ভুলটা আসলেই করেছে নাকি সেটা তার ভ্রম! সবাই চমৎকার অভিনয় করেছে।

‘এক ভাই চম্পা’ প্রচার হয়েছে ঈদের তৃতীয় দিন। এই শর্টফিল্মের প্রধান দুই চরিত্রে ছিল ইরফান সাজ্জাদ ও রুকাইয়া জাহান চমক। অতিরিক্ত টেক কেয়ার করা যে অনেক সময় বিব্রতকর হতে পারে তারই একটা নমুনা দেখানো হয়েছে। ইরফান তার বোন চমককে খুব টেক কেয়ার করে। চমকের যে ছেলেটির সাথে সম্পর্ক ইরফান তার সাথে একটা ভুল করে বসে এবং কঠিন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিস্থিতিটা কি এবং এরপরে তার সাথে যা ঘটে সে শুধু অবাকই হতে থাকে। অল্প সময়ের ভালো থ্রিলে ভরা এ শর্টফিল্ম।

‘শ্যুট আউট’ প্রচার হয় ঈদের চতুর্থ দিন। এ শর্টফিল্মের প্রধান চরিত্রে ছিল শাফায়েত মনসুর রানা, তানজিকা, মনোজ প্রামাণিক। ক্যাজুয়্যাল শ্যুটিং-এর মধ্যে হঠাৎ থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং মিসিং-এর ঘটনা ঘটে। কি মিসিং হলো এবং কে-ই বা করল? শেষ দৃশ্যে এসে অপরাধীকে দেখা যাবে যখন ততক্ষণে দর্শকের চক্ষুচড়ক গাছ। খুব এক্সাইটিং কাজ।

‘টিকটক’ প্রচার হয় ঈদের পঞ্চম দিন। এর প্রধান চরিত্রে সোহেল মণ্ডল ও ফখরুল বাশার মাসুম। ঘড়িপ্রেমী সোহেল তার বসের অনুপস্থিতিতে একটা ঘড়ি নেয় কিন্তু ঘড়িটার একটা বিশেষ ব্যাপার জানার পর তার ঘুম হারাম হয়ে যায়। এরপর শুরু হয় তার টেনশন। ঘড়ির টিকটক আওয়াজের মতোই সে ছুটতে থাকে, টিকটক ছুটে চলা তখন তার টেনশনকে সিগনিফাই করে যা দর্শকভেদে লোভেরও হতে পারে। পরিণতি কি হয় তার সেটাই শর্টফিল্মের চূড়ান্ত দিক। শিক্ষণীয় কাজ বটে।

‘মাথা নষ্ট’ প্রচার হয় ঈদের ষষ্ঠ দিন। এর প্রধান চরিত্রে মিশু সাব্বির ও রোদসী সিদ্দিকা। মিশু একটা ক্যাপ কেনে যেটি পরলে তার মাথা গরম হয়ে যায়। সে যাচাই করতে চায় এটা কি তার সাথেই ঘটে নাকি অন্যদের সাথেও ঘটে! হঠাৎ সামনে আসে অদ্ভুত এক কারণ এবং এটাই শর্টফিল্মের ইনোভেটিভ দিক। দর্শক যে ব্যাখ্যা চাইবে তার সাথে পুরোপুরি উল্টো হয়ে যায়।

‘আকাশ ভরা তারা’ প্রচার হয় ঈদের সপ্তম দিন। এর প্রধান চরিত্রে ইয়াশ রোহান, মোস্তাফিজুর নূর ইমরান। রাতের বাসে তিন যাত্রীর মধ্যে একজনের অস্বিভাবিক আচরণে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। ইয়াশকে ভয় দেখাতে থাকে ইমরান। ভয়টা কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকবে এবং ইয়াশ ও তার পেছনের সিটের মেয়েটির পরিণতি কি হতে যাচ্ছে তারা কল্পনাও করতে পারে না। বাসের কন্ট্রাকটরও যোগ হতে থাকে। পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে শেষে গিয়ে বিপরীত এক দৃশ্য দেখা গেল। দর্শক দেখতে দেখতে ভয় পেয়ে যাবে। মোস্তাফিজুর নূর ইমরানের অভিনয় অনবদ্য ছিল সাথে ইয়াশ রোহান ও ফরহাদ লিমন ন্যাচারাল। একই স্পেসের মধ্যেও যে ভালো কাজ হতে পারে অনেক বড় পরিসর না হলেও চলে পরিচালক বুঝিয়ে দেন।

৭টি শর্টফিল্ম ৭ রকম এবং বিষয়বৈচিত্র্যে ভরা। ভিন্ন স্বাদে, উপস্থাপনায় পরিচালক এগুলোকে পরিবেশন করেছেন এবং দর্শক গ্রহণ করেছে এখানেই তিনি সফল।

শাফায়েত মনসুর রানা ইনোভেটিভ একজন পরিচালক। সাম্প্রতিক, বক্তব্যধর্মী, নতুনত্বে ভরা, নিরীক্ষাধর্মী কাজ তিনি করেন। তাঁর নির্দিষ্ট একটা দর্শকও আছে যারা তাঁর কাজের জন্য অপেক্ষা করে। ২০২১ সালের ঈদুল ফিতর তিনি ‘শর্টকার্ট সিরিজ’-এ স্পেশাল করে তুলেছেন। দর্শকের প্রত্যাশা আগামী ঈদুল আযহাতেও এ সিরিজের দ্বিতীয় সিজন দেখা যাবে। ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা।


মন্তব্য করুন