বেহুলা আসে, যেভাবে আসে
বেহুলার আখ্যানকে হাল-সময়ের নিরিখে পরীক্ষা করে ‘ফিরে এসো বেহুলা’ চলচ্চিত্রটি। অবাক হওয়ার কিছু নয়, মিথের শক্তি মূলত এখানেই …
বেহুলা। আমাদের মিথ ও সাহিত্যে বিরল এক নারী। এমন জগতে প্রবেশ করে বেহুলা, যেখানে জীবিত মানুষের যাওয়ার অধিকার নেই। মৃতদের রাজ্য, দেবতাদের রাজ্য। একই ধরনের চরিত্র দেখি গিলগামেশ মহাকাব্যে।
বেহুলা চরিত্রটি আমরা পাই ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যে। দশম-একাদশ শতাব্দির আগে মূল লৌকিক কাহিনিটি মুখে মুখে বাংলা অঞ্চলে প্রচলিত ছিল। যখন শ্রুতি ছিল পরম্পরার বাহন। ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতাব্দীতে কবিদের হাতে পায় কাব্যাকৃতি। অন্যদিকে ২১০০ খ্রিষ্টপৃর্বের মেসোপটেমিয়ায় রচিত হয় গিলগামেশ। সাদা চোখে দুই কাব্যের প্রধান পার্থক্য লিঙ্গ পরিচয়ে। দুই সভ্যতা অবশ্যই আখ্যানের লক্ষ্য ও চেতনার ভিন্নতার সাক্ষি। কিন্তু লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারণে বেহুলাকে ঘাটে ঘাটে যে পরীক্ষা দিতে হয় গিলগামেশকে তা দিতে হয় না।
দুটোই কৃষি সভ্যতা বিকাশের পরবর্তী কাহিনি। মানুষ শিখে গেছে বাণিজ্য, বিশেষ করে নৌ বাণিজ্য। সামন্ত শাসন ও দেবতারা যখন মানুষের সঙ্গে সরাসরি মিথস্ক্রিয়া করে। স্বর্গ ও মর্ত্যের সরাসরি যোগাযোগটুকু ছিন্ন করার মধ্য দিয়ে মানুষ তার দেব স্বভাব দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করে। তার আগে তো স্বর্গ জয় করতে হবে। নাকি?
নারী সম্পর্কে প্রথাগত কিছু ধারণা আছে। এবং সে চিন্তায় চিরন্তনতা আরোপের যে অভিলিপ্সা, বেহুলা তার বাইরে নয়, যেহেতু তার পরিচয় সাধারণ নারী, স্বামী-সংসারই যার লক্ষ্য। যদিও প্রাচীন মাতৃতান্ত্রিক সমাজ বা প্রাচীন কাব্যে নারীর অবস্থান বরাবরই বীরত্বময়। এমনকি বেহুলার গল্প মূলত দুই নারীরই লড়াই। একজন সর্পদেবী মনসা, যে পিতা শিবের স্থলে পূজিত হতে চায় এবং আরেকজন পিতার দোষে শাস্তি পাওয়া পুত্র লখিন্দরকে বাঁচানোর মাধ্যমে স্বর্গ ও মর্ত্যের ভেদ মিলিয়ে দেয়।
বেহুলার আখ্যানকে হাল-সময়ের নিরিখে পরীক্ষা করে ‘ফিরে এসো বেহুলা’ চলচ্চিত্রটি। অবাক হওয়ার কিছু নয়, মিথের শক্তি মূলত এখানেই। এমন কিছু সত্য ধারণ করে, যার মধ্যে সব সময় সমকালীনতা থাকে। সময়ের খোলস ছাড়িয়ে আদিকল্পের এমন ছাঁচ থাকে যাকে যুগে যুগে পরীক্ষা করা যায়। ফলে মিথের মর্যাদা সত্য-মিথ্যা নয়, বরং এটি একটি ‘আদর্শ’। এ দিক থেকে ‘বেহুলা’ সব যুগের নারীর গল্প। ‘ফিরে এসো বেহুলা’ মূল গল্পকে চর্চা না রেখে যুগের দাবি মিটিয়েছে। ধারণা করেছে বিংশ শতকের চিন্তার বিভা। একটি মিথ চেতন-অবচেতন সমসাময়িক হওয়ার কারণে টিকে থাকে। সেই দাবিতে সিলমোহর দেয় এ ছবি।
কী আছে এ ছবিতে? প্রথমে বলা রাখা ভালো; মূলধারার সিনেমার বিপরীতে গল্প বিন্যাস, অভিনয়ের ভিন্নতাই নয় কারিগরি দিক থেকেও ‘ফিরে এসো বেহুলা’ গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল ফর্ম নিয়ে এক দশক আগে ঢাকায় যে আগ্রহ শুরু হয়েছিল, সে দিক থেকে অগ্রগণ্য। এটাও ভেবে নিতে পারেন সেলুলয়েডের বদলে ডিজিটালে সিনেমা নির্মাণ শুধু প্রযুক্তির পরিবর্তন নয়, যুগের পরিবর্তন বটে। যা জীবন যাপন, যাপনের নতুন অর্থ ও বাঁক নির্দেশ করে। তখন তরুণ নির্মাতাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো; পুরোনো গল্প কাঠামো ও দর্শনকে তার সময়ের আলোকে তুলে ধরা।
তানিম নূর পরিচালিত ‘ফিরে এসো বেহুলা’ মুক্তি পায় ২০১১ সালে। প্রধান দুটি ভূমিকায় আছেন জয়া আহসান (তনিমা) ও তাহমিনা আলী (নাসিমা)। হ্যাঁ, জয়ার তারকা মূল্য ও গ্ল্যামারের কাছে অপর চরিত্রটি গুরুত্ব নাও পেতে পারে। আরও আছেন ঢাকার নাট্য জগতের নামি কয়েকজন অভিনেতা ও তাদের দুর্বল অভিনয়। মূলত গৃহকর্ত্রী তনিমা ও গৃহপরিচিকা নাসিমার জীবনে একদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনার সমান্তরাল বর্ণনা ‘ফিরে এসো বেহুলা’। দুটি গল্প রেললাইনের সমান্তরাল দুটি লাইনের মতো এগিয়ে যায় (এ ছবিতে রেললাইন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। গল্প ওই বরাবরই চালিত হয়)। কোথায় তারা মিলবে সেটাই হলো কাহিনির একটা দিক। টান টান থ্রিলারের ভঙ্গিতে দেখানো হলেও ছবির সারাংশ গতানুগতিক থ্রিলার ফর্মকে ছাড়িয়ে যায়। এ ছাড়া একটা পরাবাস্তব টোন, যা গল্পের খামতিগুলো দূর করে দেয়।
এক সকালে তনিমার স্বামী হাবিব কাজে বের হওয়ার পরপরই তার কাছে রহস্যময় চিঠি আসে। হাবিবকে অপহরণ করা হয়েছে। তাকে ফিরে পেতে হলে বিকেল পাঁচটার মধ্যে নির্দিষ্ট একটি রেল স্টেশনে পৌঁছাতে হবে তনিমাকে। অপহরণকারীদের কোনো পরিচয় নেই, নেই আর কোনো দাবি। ফোন, টেলিভিশনেও একই কথা শুনতে পায় তনিমা, তার বাড়ির সামনে কালো পোশাক পরা দুই লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে মনে হয়, হাবিব নয় তনিমাই মূল লক্ষ্য। কেন?
সাহায্যের আশায় বাড়ির মালিক, হাবিবের বস, পুলিশ স্টেশন, পুরোনো প্রেমিক, রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টারের কাছে যায় তনিমা। সবাই তাকে ফিরিয়ে দেয়। কারো হাতে নিগৃহীত হয়, কেউ বা নোংরা ঠাট্টা করে। সবার লক্ষ্য একটাই; তনিমা নারী, এমন আচরণই তার প্রাপ্য। এক সময় রায়পুরের হদিস পেয়ে সেদিকে রওনা হয় তনিমা। পথে আক্রান্ত হয় ক্যাব চালকের কাছে। সব মিলিয়ে পুরুষতন্ত্রের মাঝে একা নারী কীভাবে পদে পদে বিপত্তিতে পড়ে সেই গল্প। অন্য দিকে, নাসিমা কী যেন বলতে গিয়েও বারবার বলতে পারেন না। বারবার ফোন করে তনিমাকে। সারা ঢাকা শহর সে চষে বেড়াচ্ছে। কখনো বা আত্মহত্যা করতে গিয়ে ফিরে আসে বা বেঁচে যায়। সমাজের দুই স্তর থেকে ওঠে আসা দুই বেহুলা তারা।
মনসামঙ্গল কাব্যে মনসা ও চাঁদ সওদাগরের লড়াইয়ে বাসর রাতে স্বামীকে হারায় বেহুলা। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝে ইন্দ্রসভায় পৌছায় বেহুলা, সেখানেও তার প্রধান পরিচয় নারী। তাকে দেবতার সামনে নাচতে হয়। ময়ূর নাচ, বেজে ওঠে বেহুলার ঘুঙুর! এ প্রদর্শনের পর প্রাণ ফিরে যায় লখিন্দর।
এ সিনেমায় স্বামীকে উদ্ধারে তনিমার যাবতীয় চেষ্টা পুরুষের কাছে লঘু, তারা তামাশা আকারে নেয়। অসহায় নারীর সামনে সব পুরুষই যেন দেবতা। কিন্তু একজন নারীর দৃঢ়তা অনেককিছুকে জয় করতে পারে। যেমন; ঘাটে ঘাটে নানা বিপত্তির মাঝে পড়েও বেহুলা স্বর্গ পর্যন্ত যায়। আর তনিমার একরোখা ও ভয়ডরহীর আচরণের কারণে অনেকে সাহায্য করে বটে, কিন্তু পুরুষের কাছে নারী যেন কখনো আপন হয় না, অপর (ইচ্ছা করে ‘মানুষ’ শব্দটি ব্যবহার করছি না)। তাহলে পুরুষই শুধু নারীর চোখে আপন! পুরুষের চোখে, নারী-পুরুষের যুথবদ্ধতা বলে কিছু নেই! আসলে কি তাই? এ সিনেমার যে দৃষ্টিভঙ্গি এতটা অনমনীয় ও মোটাদাগে একটা শাদা-কালো বিভাজনে ঘেরা। এবং গল্পের ইতি যেখানে টানা হয়, তা তনিমাকে একদম একলা করে দেয়। কিন্তু একটা সত্যে এসে তো পৌঁছাতে পারে, কোনো পিছুটান নেই, দায় নেই। ব্যক্তিগত লেনদেন বা ভুল-ভ্রান্তিকে বাড়তি কোনো বিচারের ছাঁচে না ফেলেই তার মুক্তি ঘটে। রেললাইনের সমান্তরাল দুই রেখা যেন নারী ও পুরুষ। তারা আর কোথাও এক হবে না! যদিও মরীচিকাকে কেউ সত্য বলে ধরে নেয়।
বাংলার নারী প্রধান আখ্যানে (সাহিত্য, পালা বা নাটক-সিনেমা) সেই বেহুলা থেকে রূপবান বা বেদের মেয়ে জোছনায় যখনই পুরুষের সামনে নারী উদ্ধারকর্তা হয়ে হাজির, তখন হৃদয়ের দাবি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অথবা নারীর ওপর এমন কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়, যেখানে তার নিজের কোনো হাত নেই। মনসাকে দৈব চরিত্র হিসেবেই ধরা যায়। মনসা শুধু পিতার উত্তরাধিকার ও সৎমা পার্বতীর অপমানের প্রতিশোধ বা ক্ষমতা কাঠামোকে লক্ষ্য করে চালিত হয়। স্বর্গে সে বেহুলার নাচ পুরুষের চোখে দেখে বলে মনে হয়! নারীকে কঠোর ও কোমলের সংমিশ্রণ দেখানোর যে ছল, তাতে পুরুষকে ঘটনার কর্তা ও দায়িত্ববান আকারে দেখা হয়। ‘ফিরে এসে বেহুলা’য়ও তনিমা বা নাসিমার বেঁচে থাকার নিজস্ব কোনো শর্ত দেখা যায় না। হৃদয়ের দাবি বা চাপিয়ে দেওয়া দায়িত্ব দ্বারা চালিত হয় প্রথমে। এরপর হাবিবকে উদ্ধার না করে তনিমার ফিরে যাওয়া প্রতীকীভাবে তার মুক্তি। যা সামাজিক ও নৈতিক বন্ধনকে ছিন্ন করে। কিন্তু এ দেখার কোনো উল্টো পিঠ নাই, একরকম একরোখা। এ দৃষ্টিভঙ্গির পুনরুৎপাদন খানিকটা হতাশ করতে পারে। হতাশা সত্ত্বেও গল্প যখন নিজের শর্তে রচিত হয়, মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় কী!
পুরুষের চোখে নারী শুধু শরীরি নিশানা, অন্যদিকে নারী একসময় বুঝতে পারে, যে শুধু প্রতারিত হয়ে যাচ্ছে। খুবই সাদা-কালো সীমানার এ গল্পে শ্বাস নেওয়ার জায়গা কম। তনিমা একটা টানটান থ্রিলারের দিকে যতটা এগিয়ে নিয়ে যায়, ততটা সে পুরুষ ও নারীর মিলিত সমাজ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। এখন প্রশ্ন হতে পারে, পুরুষেরা মিলে নারীকে কোথায় টেনে এনেছে? কী হতে পারে উত্তর? এ দশায় নারীও একা, পুরুষও একা।
‘বেহুলা’কে উল্টো পথে হাঁটিয়েছেন তানিম নূর। সেই রামায়নের সীতা বা মনসামঙ্গলের বেহুলা— সব ক্ষেত্রে নারী সতীত্ব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বামী লাশ নিয়ে বেহুলার অনির্দিষ্ট যাত্রা একপ্রকার ‘সহমরণ’ বটে! ‘ফিরে এসে বেহুলা’য় তনিমার নিষ্ঠাকে পরীক্ষা করা যেতে পারে (সতীরা এমনই তো হয়)। ছবির শুরুতে তনিমার প্রতি হাবিবের ভালোবাসাও স্বস্তিদায়ক। যা তনিমার পরবর্তী অভিযানের গুরুত্বকে যথাযথ ‘কার্য-কারণ’ হিসেবে ফুটিয়ে তোলে। এটুকু বললেই যথেষ্ট। কিন্তু সমাজ যেহেতু বারংবারই নারী সতীত্ব নিয়ে আগ্রহী, সেখানে পুরুষের কী হবে। পুরুষ কি বরাবরই হাঁসের মতো গা ঝাড়া দিয়ে নির্ভার, তার সততার প্রশ্নটা সমাজ কীভাবে দেখে। যেখানে ‘ধর্ষিতা’ নারী বরাবরই প্রশ্নবোধক হয়ে হাজির হয়, যেখানে ‘ধর্ষণ’ও অনেক সময় পুরুষত্বকে জাহির করে, তখন তনিমা উল্টো পথে হেঁটে বিদ্রোহটুকু জানান দেয়। না, তনিমার গল্প সরাসরি ধর্ষণ নিয়ে নয়, উদাহরণ মাত্র।
সমান্তরাল রেলপথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া যেন বলছে, গল্পের ভেতর যা যা বিরোধ তা কখনো মিলবার নয়। আর এ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য যা যা হতে পারে তার একটি তালিকা পাওয়া যায় এ ছবিতে। খেয়াল করতে হবে তনিমার সামনে আসা চরিত্রগুলো। যারা সমাজের নানা অংশের প্রতিনিধিত্ব করছে। এবং উপসংহারটা ধাক্কা দেয় ও বেহুলার ইন্টারপ্রিটেশনকে নতুন মাত্রা দান করে। যা বলছিলাম আগে, পুরো বিষয়টা একপক্ষীয় মনে হয়। ‘পক্ষ’ বটে!
একটু অন্য প্রসঙ্গ তুলে লেখাটি শেষ করছি; বেহুলা শুধু তার স্বামী লখিন্দরের ত্রাণকর্তা নয়, বাংলা সিনেমারও ত্রাণকর্তা হয়েছে অতীতে। যেমন রূপবান শুধু রহীমের প্রাণ বাঁচায়নি, বাংলা সিনেমারও প্রাণ বাঁচিয়েছিল। সেই ষাটের দশকে সুচন্দা ও নবাগত রাজ্জাককে নিয়ে ‘বেহুলা’ বানিয়েছিলেন জহির রায়হান। ঢাকাই সিনেমা যখন উর্দু ইন্ডাস্ট্রির কাছে কোনঠাসা এবং নির্মাতারা দর্শকদের মন বুঝে উঠতে পারছিলেন না, তখন ‘রূপবান’-এর মাধ্যমে ঢাকাই সিনেমার প্রাণ ফেরান সালাউদ্দিন। বাণিজ্যিক বাংলার একটা ভাষা দাঁড়ায়, যা পালা গানের ঐতিহ্য থেকে ধার করা (স্বাধীনতার পরের হিট সিনেমাগুলোও দেখুন; মনপুরা বা খায়রুন সুন্দরী পর্যন্ত)। সে ধারায় যখন একে একে লোকগাথা নির্ভর ছবি নির্মাণ হতে থাকে, যার অন্যতম ‘বেহুলা’। যদিও জহির রায়হানের দাবি মতে, প্রথম ছবি ‘কখনো আসেনি’তে সময়ের চেয়ে ২০ বছর এগিয়ে ছিলেন তিনি। ‘বেহুলা’য় এগিয়ে থাকার চেয়ে সমসাময়িক মনস্তত্ত্বকে তুলে ধরায় ছিল লক্ষ্য, তাই মিথকে অবিকল রেখেছেন যথাসম্ভব বা ওই সময়ের ভাষ্যে হয়তো কোনো তফাত ছিল না। আমাদের সময়ে পরিবর্তন হয়েছে। জীবন ধারা, যাপনের অভ্যাস, যুদ্ধ, রাজনৈতিক ঘাত-প্রতিঘাত আর প্রযুক্তির তফাত আকাশ-পাতাল। আসলে বেশি দূর কি আমরা এগিয়েছি? এ প্রশ্নের উত্তর ‘ফিরে এসে বেহুলা’। একইসঙ্গে, পরপর নানামুখী ছবির ব্যর্থতা এবং মিথের আধুনিক রূপান্তরের নমুনা (যেমন, ফিরে এসো বেহুলা) ও নতুন কোনো ধারা তৈরি না করে আড়ালে থেকে যাওয়া; এটা হয়তো বলছে, একালের দর্শকের সঙ্গে সংযোগ তৈরির মতো নতুন ভাষা আমাদের আয়ত্তে আসেনি এখনো।
সিনেমা হিসেবে ভালো বা মন্দের বাইরে রেখে হয়তো ‘ফিরে এসো বেহুলা’য় দেখানো উত্তর কারো পছন্দ হবে বা কারো হবে না। কিন্তু কেন এভাবে ছবির গল্পটি তৈরি হয়, সে প্রশ্নটা জরুরি। মনে হয়, যার উত্তর আছে আমাদের জীবনে। এ সময়ের জীবনে। যেখানে ব্যক্তি প্রতি মুহূর্তে আলগা হচ্ছে, প্রতিদিন তার অস্তিত্ব যেন অস্তিত্বহীনতার অনিশ্চয়তার দিকে ফিরে যাচ্ছে। এবং এই যে নারী বা পুরুষের একলা হয়ে যাওয়া ও শূন্যতা; এ সব এ সিনেমার গল্পকে ডেকেছে। সেখানে শিল্প আমাদের কীভাবে উদ্ধার করবে? কী দেখিয়ে বা কী ভাবনা দিয়ে উদ্ধার করবে?
এরপরের বিষয় হয়তো ‘বেহুলা’র মিথ ভেঙে নতুন কোনো গল্পের। থাকুক অপেক্ষা সে পর্যন্ত।