Select Page

অপারেশন সুন্দরবন: শুধুই ছবি নয়, বার্তাও

অপারেশন সুন্দরবন: শুধুই ছবি নয়, বার্তাও

সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে রাখার, এর পরিবেশ ভালো রাখার জন্য ‘অপারেশন সুন্দরবন‘ ছবি শুধুই একটি ছবি নয় বরং বার্তাও …

প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের কথাটা সবার মনে আছে তো? দেশের মানুষ তখন ট্রেন্ডে পরিণত করে ভোট দিয়েছিল সুন্দরবনের জন্য।কেন দিয়েছিল! কারণ, সুন্দরবন আমাদের সম্পদ। দেশে বড় বড় অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ গেছে এবং রিপোর্টে বলা হয়েছিল সুন্দরবন সেগুলো থেকে দেশকে রক্ষা করেছে। সুন্দরবনের এই শক্তিকে আমরা খুব ভালোভাবেই বুঝি। এ সম্পদ কেন বাঁচিয়ে রাখতে হবে তাও আমরা বুঝি। এই দিকটাকে চলচ্চিত্রে তুলে ধরা আরো বড় কাজ কারণ চলচ্চিত্রই সবচেয়ে বড় মাধ্যম দর্শকের কাছে যাবার এবং সচেতনতা তৈরির।

পরিচালক দীপঙ্কর দীপন সুন্দরবনের গুরুত্বকে তুলে ধরতে ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে একটা গল্প বলতে চেয়ে নির্মাণ করেছেন ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবিটি। ছবির পোস্টারে বলা হয়েছে ‘ওয়াইল্ডলাইফ থ্রিলার’। বন্য সম্পদ কেন বাঁচাতে হবে তারই একটা সচেতনতা পোস্টারে ছিল অন্যভাবে। আপাতদৃষ্টিতে সুন্দরবনের দস্যুবৃত্তি দূরীকরণ বা ডাকাত নির্মূলের গল্প বলা হলেও এর পেছনে সেখানকার খেটে খাওয়া মানুষের স্বাভাবিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পরিবেশকে রক্ষার জন্য ‘বাঘ’ সংরক্ষণের একটা প্রয়োজনীয় কথাও ছবিতে আছে। এখন তো ‘বিশ্ব বাঘ দিবস’-ও পালন হয়। সেদিক থেকে এটাও ছবির একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। এভাবে ভিন্নভাবে বলার চেষ্টা থেকে পরিচালক ‘অপারেশন সুন্দরবন’ নির্মাণ করেছেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় বাজেটে থ্রিলার নির্মাণের পরিবেশ ঢালিউডে শুরু হয়েছে এটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য পজেটিভ। ‘ঢাকা অ্যাটাক, মিশন এক্সট্রিম’ কিংবা মুক্তি প্রতীক্ষিত ‘ব্ল্যাক ওয়ার’ সবগুলোই সেই ধরনের প্রচেষ্টা। এটাকে ইন্ডাস্ট্রিতে মার্কেট বড় করার একটা প্রচেষ্টাও বলা যেতে পারে। ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সেই প্রচেষ্টার সর্বশেষ প্রজেক্ট। থ্রিলারের দিক থেকে এটি পূর্বের সেই ছবিগুলোর থেকে এগিয়ে থাকবে।

ছবির গল্পে সুন্দরবনের দস্যুবৃত্তি নির্মূলে প্রশাসনিক তৎপরতা আছে। র‍্যাবের কন্ট্রোলে সেটি করা হয়। একের পর এক অভিযান চলে এবং রহস্য তৈরি হয়। ছবির গুরুত্বপূর্ণ কাজটা ছিল এখানেই, রহস্য তৈরি এবং সেটিকে ছবির ক্লাইমেক্স পর্যন্ত ধরে রাখার ক্ষেত্রে সফল ছবিটি। থ্রিলারে এটাই তো সবচেয়ে জরুরি।

ছবির সরেজমিন প্রেক্ষাপটটাও গোছানো ছিল। কীভাবে অপারেশন সম্পন্ন হয় প্রতিকূল পরিবেশে এবং কাজের ক্ষেত্রে কী ধরনের প্রোটোকল মেইনটেইন করা হয় তার একটা ডিটেইল উপস্থাপন দেয়া হয়েছে ছবিতে। অপারেশনের সময়গুলোতে পারফেক্ট বিজিএম ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেটি এ ছবিতে ছিল।

মাল্টিকাস্টিং ছবি হওয়াতে অনেক অভিনয়শিল্পীর সন্নিবেশন আছে। অভিনয়ে সবার আগে মনোজ প্রামাণিকের কথা বলতে হয় তার অভিনয়ের গভীরতা ও সম্ভাবনা অনেক, সিয়াম আহমেদ বরাবরের মতোই বছরের অন্য ছবিগুলোর মতো উজ্জ্বল, রোশানের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স ছিল, দর্শনা বণিকের মধ্যে সৌন্দর্য ও অভিনয়ের ভালো সংমিশ্রণ ছিল, নুসরাত ফারিয়ার অন্য ছবিগুলোর তুলনায় তুলনামূলক বেটার অভিনয় ছিল, রিয়াজের অভিনয়ে চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হবার ছাপ স্পষ্ট, তাসকিন বরাবরের মতোই রহস্য মানবের ভূমিকায় উপস্থিত এবং দুর্দান্ত অভিনয়, শতাব্দী ওয়াদুদ অসাধারণ, নেগেটিভে আরমান পারভেজ মুরাদ মোটামুটি ছিল, রাইসুল ইসলাম আসাদ এ সময়ে এসেও পর্দায় কীভাবে গুরুত্ব তৈরি করেন তার প্রমাণ এ ছবিতে তার চরিত্র ও অভিনয়।

ছবির সিনেমাটোগ্রাফি সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই বিশেষত্ব পেয়েছে। বিজিএম থ্রিলারের জন্য পারফেক্ট, কালার গ্রেডিংও প্রশংসনীয়। চোখে লাগার মতো সম্ভবত শুধু বাঘের দৃশ্যগুলোই ছিল। ছবির গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু না থাকলেও গানের নির্মাণ ভালো ছিল।

ডি-ফরেস্টেশনের এ সময়ে আমাদের সবচেয়ে বড় অ্যাসেট এখনো সুন্দরবন। সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে রাখার, এর পরিবেশ ভালো রাখার জন্য ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবি শুধুই একটি ছবি নয় বরং বার্তাও। কারণ সব কথা চলচ্চিত্র শিখিয়ে দেবে না বা বুঝিয়ে দেবে না কিছু বুঝে নিতে হবে। আর ঐ বুঝে নেয়াটাই ছবিতে বার্তা ছিল।

রেটিং : ৮/১০


মন্তব্য করুন