Select Page

জয়া-সুমনের রসায়নে অনবদ্য ‘বিউটি সার্কাস’

জয়া-সুমনের রসায়নে অনবদ্য ‘বিউটি সার্কাস’

জয়া দ্য আল্টিমেট বিউটি অব সিনেমা। সুমন ‘রঙলাল’ হয়ে মনে রঙ লাগিয়েছেন

বিউটি সার্কাস‘-এর শুরুতেই জয়া আহসানের শ্রুতিমধুর কন্ঠের একটা ভয়েসওভার সিনেমার গল্প নিয়ে আমাদের এক রহস্যের দিকে ঠেলে দেয়। গল্পটা বানিয়া শান্তা নামক গ্রামে এক মাসের জন্য তাবু গেড়ে বিনোদনের পসরা সাজানো ‘বিউটি সার্কাস’ এর মালকিন অসাধারণ সুন্দরী বিউটিকে নিয়ে।

একটি গ্রামে ধর্ম নিয়ে নানা কুসংস্কার, মেলা কমিটির নেতার ইনিয়েবিনিয়ে দেয়া নানা প্রস্তাব, এক বিবাহিত জমিদারের পরনারী আসক্তি আবার একই সাথে এক বখাটের নির্ভেজাল প্রেমের অনুভূতি সব মিলিয়ে বিউটির জীবনে ঘটতে শুরু করে নানা রকম ঘটনা। এরই সাথে বিউটির নিজস্ব এক গল্প যাতে মিশে আছে আপনজন হারানোর বেদনা। সব মিলিয়ে সার্কাসের এক নারীর জীবন সংগ্রামের গল্প নিয়েই মাহমুদ দিদারের এই অভিষেক সিনেমা।

দীর্ঘ কয়েক বছরের অপেক্ষার পর এই সিনেমার টিজার, ট্রেলার রিলিজের পর সাধারণ দর্শকদের মাঝে একটি আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। পরবর্তীতে গান এবং পোস্টার রিলিজের পর এই আগ্রহের মাত্রা আরো বাড়ে। একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে এই সিনেমা নিয়ে আগ্রহের বেশ কয়টি কারণ রয়েছে। যেমন; প্রায় দেড়বছর পর দুই বাংলার জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত অভিনেত্রী জয়া আহসান সেলুলয়েডে হাজির হলেন ‘বিউটি সার্কাস’-এর বিউটি রূপে। জয়ার সাথেই ‘ঢাকা অ্যাটাক’-খ্যাত এবিএম সুমন ’রঙলাল’ ভূমিকার মধ্য দিয়ে ফিরলেন প্রায় পাঁচ বছর বিরতির পরে।

সার্কাস ও তার সাথে জড়িত মানুষের জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত এই সিনেমায় দেখা মিলেছে ফেরদৌস, গাজী রাকায়েত, শতাব্দী ওয়াদুদ, প্রয়াত হুমায়ূন সাধু এবং তৌকির আহমেদকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। টেলিভিশনের দক্ষ নির্মাতা মাহমুদ দিদারের প্রথম সিনেমা হিসেবেও আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে প্রায় ছয় বছর ধরে নির্মাণের নানা বাধাবিপত্তি পার করে আজ মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি নিয়ে।

তবে যে প্রত্যাশা এবং আগ্রহ নিয়ে এই সিনেমা দেখতে যাওয়া তার অনেকটাই পূরণ হয়েছে একথা বলতেই হচ্ছে। গল্প এক নারীর সংগ্রামের হলেও সার্কাসের মতো ক্যানভাসে সেটা চিত্রায়ণের প্রস্তুতি যে ছিলো বিশাল তা বোঝা গেছে এরেঞ্জমেন্ট দেখে। চেনা গল্পকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের পাশাপাশি চিত্রনাট্য এবং কিছু সংলাপ ভালো লেগেছে। কস্টিউম ডিপার্টমেন্ট ফুল মার্কস পাবেন। সাথে মেকআপ শিল্পীরাও প্রশংসার দাবিদার। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ছিলো মানানসই। চিরকুটের সুমীর গাওয়া গানটি মুহূর্তেই মন ভালো করে দেয়া অনুভূতি নিয়ে আসে। তবে ভিএফএক্স এবং কালার গ্রেডিংয়ে আরো ভালো করার সুযোগ ছিলো। হয়তো দীর্ঘ সময় ধরে সিনেমার কাজ চলার কারণে সিনেমায় এই সংমিশ্রণের ব্যাপারটা সেভাবে ভালো হয়নি যতটা হওয়া উচিত ছিলো। সাউন্ডেও হালকা সমস্যা মনে হলো…

অভিনয়ে জয়া আহসান অবশ্যই নিজের স্ট্যান্ডার্ড মান বজায় রেখেছেন বরাবরের মতো। তার চরিত্রের মাঝে মিশে থাকা সংগ্রাম, দুঃখ, আশংকা, রাগ, ক্ষোভ সবকিছুই তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের দক্ষ এবং শক্তিশালী অভিনয়ের মাধ্যমে। অভিনেত্রী হিসেবে জয়া আহসান যে অনবদ্য এক নাম তা আবারো প্রমাণ হলো এই সিনেমার মাধ্যমে।

তবে এই সিনেমার সারপ্রাইজ প্যাকেজ হচ্ছেন এবিএম সুমন। এর আগের সিনেমায় পুলিশ অফিসার হিসেবে অ্যাকশন ভারিক্কি একটা ক্যারেক্টারের পরে এবার পুরোপুরি বিপরীত একটি ক্যারেক্টার ‘রঙলাল’  হিসেবে নিজের অভিনয় দক্ষতা বেশ ভালোভাবেই প্রদর্শন করলেন এই মেধাবী তরুণ। এই প্রথমবার জয়া আহসানের সাথে বাংলাদেশি কোনো বাণিজ্যিক সিনেমার অভিনেতাকে বেশ ভালোই মানিয়ে গেছে বলে মনে হলো। এবিএম সুমনের লুক, বডি ল্যাংগুয়েজ, ডায়লগ ডেলিভারিতে সাবলীলতা সব মিলিয়ে বাণিজ্যিক সিনেমার যথাযথ চিত্রনায়ক হিসেবে সামনে তাকে আরো কাজে লাগানো হবে বলেই কামনা। 

তৌকীর আহমেদ, ফেরদৌস, গাজী রাকায়েত এবং শতাব্দী ওয়াদুদ তাদের নিজ নিজ জায়গায় ঠিকঠাক। প্রয়াত হুমায়ূন সাধু দর্শকদের মাঝে আলাদা ছাপ রেখেছেন। তবে সার্কাসের সাথে জড়িত প্রতিটা মেয়ে এবং ছেলে ছিলেন সাবলীল এবং বিশ্বাসযোগ্য। এটা তাদের মেকাপ, লুক এবং কিছু কিছু জায়গায় সংলাপ ডেলিভারির সময় সিনেমাটি বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করেছে। 

নির্মাতা মাহমুদ দিদার প্রথম সিনেমাতেই পুরোপুরি বাউন্ডারি না হাঁকালেও আউট হননি। বিলুপ্ত প্রায় আমাদের একটি ঐতিহ্যর উপর ভিত্তি করে এমন একটি কনটেন্ট উপহার দেবার জন্য এই মানুষটি প্রশংসা পাবেন নিঃসন্দেহে। সিনেমার মূল গল্পের সাথে জড়িয়ে আছে একটি গৌরবময় ঘটনা। সেটা নিয়ে কিছু না লেখাই শ্রেয়। দর্শক হলে যেয়েই সেটা প্রত্যক্ষ করলে আনন্দ পাবেন বলে মনে করি। 

আমার মনে হয় সিনেমাটি শহরের তুলনায় গ্রাম বা জেলা পর্যায়ের মানুষদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। কারণ গ্রামের মানুষ এই সাবজেক্টের সাথে রিলেট করতে পারবে বেশি। সুস্থধারার এই ব্যতিক্রমী গল্পের সিনেমা দেখে নিতে পারেন জয়া আহসান এবং এবিএম সুমনের অনবদ্য অভিনয়ের জোরে হলেও। পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার মতোই একটি সিনেমা ‘বিউটি সার্কাস’।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

আফজালুর ফেরদৌস রুমন

শখের বশে চলচ্চিত্র ও নাটক নিয়ে লিখি

মন্তব্য করুন