বোরিং হওয়ার সুযোগ দেয়নি এনালগ গোয়েন্দা
ওয়েবফিল্ম: মুন্সিগিরি; অবলম্বন: শিবব্রত বর্মণের ‘মৃতেরাও কথা বলে’, স্ক্রিপ্ট: নাসিফ ফারুক আমিন; পরিচালনা: অমিতাভ রেজা চৌধুরী; অভিনয়: চঞ্চল চৌধুরী, পূর্ণিমা, শবনম ফারিয়া, ইমতিয়াজ বর্ষণ, গাজী রাকায়েত, শহীদুজ্জামান সেলিম ও আরো অনেকে; ব্যাপ্তি: পঁচাশি মিনিট; প্ল্যাটফর্ম: চরকি
‘বাবা, ঘুষ খেতে কেমন?
– ঘুষ! কে বলছে তোকে এই কথা?
শার্শা।
– কি বলছে?
বলছে, সব পুলিশরা ঘুষ খায়।
– সব পুলিশরা ঘুষ খায়! না বাবা, ঘুষ খেতে খুব তিতা!’
কথাগুলো গাড়িতে বসা ডিবি অফিসার মাসুদ মুন্সি ও তার বাচ্চা ছেলের। এই ডায়লগগুলো অরিজিনাল গল্পে নেই। এমন আরো কিছু ইপ্লিমেন্টেশন আছে ‘মুন্সিগিরি’ ওয়েবফিল্মে যা দিয়ে এক সৎ, এনালগে বিশ্বাসী অফিসার ও তার পেশাকে দারুণভাবে তুলে আনা হয়েছে।
বাদল বক্স নামে তিতাস গ্যাসের এক কর্মকর্তা খুন হয়েছেন। গল্পের প্রথম লাইনের মত ওয়েবফিল্মেও খুনের হত্যাকারী ইশতিয়াক মির্জার নাম বলে দেয়া হয়েছে। সমস্যা হয়েছে বিখ্যাত লেখক এই মির্জা কেন বাদল বক্সকে ভাড়াটে খুনী দিয়ে খুন করাতে গেলেন। ইশতিয়াক মির্জা খুনের দায় স্বীকার করলেও কেন খুন করালেন সেটি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তাই চার্জশিট দাখিলের আগে কেসটি চলে আসে ‘এনালগ’ ডিবি অফিসার মাসুদ মুন্সির কাছে। মুন্সির সামনে বাদল বক্সের স্ত্রী, ইশতিয়াক মির্জা আর কিছু এভিডেন্স ছাড়া আর কিছু নেই। মগজ কাজে লাগিয়ে মুন্সি কীভাবে কেস সমাধান করলেন, খুনের মোটিফ বের করলেন সেটাই গল্প।
‘মুন্সিগিরি’র সবচেয়ে বড় পজিটিভ দিক, সিনেমায় বোরিং হবার কোন জায়গা নেই। খুব ফাস্ট ফরোয়ার্ড এগিয়েছে গল্প। উপন্যাসে যেমন টেনে গল্প লম্বা করা হয়নি তেমনি সিনেমাতেও দেড় ঘণ্টার কম সময়ে ইতি টানা হয়েছে গল্পটিকে জাস্টিফাই করে। তাছাড়া গল্পের অবলম্বনে কোন তথ্য বাদ না দিয়ে সুন্দর স্ক্রিনপ্লে সাজানো হয়েছে। চিত্রনাট্য করায় নাসিফ আমিন একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন।
দ্বিতীয় বিষয় যেটা ভাল লেগেছে তা হলো জটিল একটি গল্পকে কখনো ন্যারেশান, কখনো বা ডায়লগ বা অন স্পট দেখিয়ে সহজবোধ্য করে তুলে ধরা হয়েছে। রিয়েল লোকেশনে শুট করায় একটা প্রিমিয়াম ফিল পাওয়া গেছে পুরো ফিল্মে।
তৃতীয় বিষয় পারফরমেন্স। বইয়ে মাসুদ মুন্সির স্ত্রী পারভীনকে একটি ভাইটাল পয়েন্ট অর্থাৎ কেস সমাধানের অন্যতম চালিকা শক্তি হিসাবে দেখানো হলেও সিনেমায় মাসুদ মুন্সিকেই বেশি অ্যাক্টিভ ও ফ্রন্টলাইনারে পাওয়া গেছে যা দেশি গোয়েন্দাকে এস্টাবলিশ করার একটা ভাল উপায়।
অভিনয় নিয়ে আমার তেমন অভিযোগ নেই। সবাই যার যার জায়গায় স্পেস অনুসারে ভাল করেছেন। চঞ্চলের সহজাত এক্সপ্রেশন মাসুদ মুন্সি হিসাবে পারফেক্ট, পূর্ণিমাকে আবেদনময়ী ও সোজাসাপ্টা, ফারিয়াকে গৃহবধূ ও কেসে সাহায্য করার ক্লু দেয়ার ক্ষেত্রে ভালো মানিয়েছে। চমক হিসাবে ইমতিয়াজ বর্ষণও ভালো করেছেন। গাজী রাকায়েত, সেলিম, নাসিম, মাসুদ মুন্সির সহযোগীরাও ভালো। অভিনেতাদের কাজে লাগাতে অমিতাভ আগে থেকেই সিদ্ধহস্ত।
ক্যামেরায় তুহিন তমিজুল ভালো করেছেন। কারওয়ান বাজার, রেললাইন, ইনডোর ও সিঙ্গেল শটের জন্য পাহাড় দেখতে ভালো লেগেছে।
নেগেটিভ দিক বলতে গেলে গল্পের জটিলতা। শেষ দিকে খুব অল্প সময়ে কেসটির এত তথ্য সামনে আসে এবং এমন প্রক্রিয়ায় সেগুলো বলানো হয় তা অনেক দর্শককেই অস্বস্তি দিতে পারে। চঞ্চল চৌধুরীর তথা মাসুদ মুন্সির ‘এনালগ’ থাকার যুক্তি ও ডিবির ভেতরকার কেস দেওয়া-নেওয়া নিয়ে রাজনীতি সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তাছাড়া ফিল্মের ক্লাইম্যাক্সটিও আমার কাছে আশানুরূপ লাগেনি, যেখানে ক্রাইমে একটা দুর্বলতার জায়গা রাখা হয়েছে।
এতটুকু বলতে পারি, ‘মুন্সিগিরি’ সময় নষ্ট করার মত ফিল্ম না এবং মাসুদ মুন্সি ক্যারেক্টার আরো ভিন্ন কেস নিয়ে হাজির হতেই পারে।