Select Page

ভন্ড (১৯৯৮)

ভন্ড (১৯৯৮)

10151338_10202500857160997_4058189697666926123_n

“আর বিশ বছরের মুরগী চুরির অভিজ্ঞতা” :v

“মাই নেম ইজ কোবরা। বাট ইউ আর এ ম্যান নট কোবরা” 😛

উপরের ডায়লগ গুলো হয়তো আমার মত যারা একসময় বিটিভিতে শুক্রবার বিকালে সপ্তাহের একমাত্র মুভি দেখার জন্য টিভির সামনে অধীর আগ্রহে বসে থাকতেন তারা পরিচিত। যে চলচিত্রের কথা বলছি তার নাম “ভন্ড”। ৯০ দশকের শেষের দিকের মুভি। মুভিটি প্রচন্ড হিট করেছিল। চলুন জেনে নেই “ভন্ড” মুভির কিছু কথা। 🙂

▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬

মুভিঃ ভন্ড(১৯৯৮)

কুশীলবঃ রুবেল, তামান্না(নবাগত), এ.টি.এম শামসুজ্জামান, হুমায়ূন ফরিদী, রাজীব, খলিল, ইলিয়াস কোবরা ।

বিভাগঃ অ্যাকশন, কমেডি

কাহিনী ,চিত্রনাট্য, সংলাপ ও পরিচালকঃ শহীদুল ইসলাম খোকন

সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকারঃ আলম খান

গীতিকারঃ মিল্টন খন্দকার

প্রযোজনা ও পরিবেশকঃ জে কে মুভিজ

মুক্তির তারিখ: ১৫ মে, ১৯৯৮

রানিং টাইম: ১৫৭ মিনিট

ভাষা: বাংলা

দেশ : বাংলাদেশ

IMDB rating:6.8/10 (6 users)

My Rating: 9.00/10

▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬

░▒▓ কাহিনী সংক্ষেপঃ

মুভির শুরু দৃশ্যে দেখা যায় রায়হান খান(খলিল) একজন নীতিবান হাবিলদার ও তার বন্ধু রাজা শিকদার(রাজীব) কথা কাটাকাটি। রাজা শিকাদার বলে তার ড্রাগ স্মাগ্লিং এ সাহায্য করতে কিন্তু রায়হান খান অসম্মতি জানান, আর বলে দেন বন্ধু বলে তাকে এইবারের মত সাবধান করে দিচ্ছে। কিন্তু ঘটনা ক্রমে ড্রাগ স্মাগ্লিং এর সময় রায়হান খানের ভাইকে ট্রাক চাপা দিয়ে মেরে ফেলে। রায়হান খান রাজাকে ধরার জন্য পিছু নিলে রাজা পালাতে থাকে, পালানোর এক পর্যায়ে হুবহু তার মতো একজন বরকে দেখলে তাকে খুন করে বিয়ে করে রাজীব চৌধুরী পরিচয়ে নিজেকে পরিচিত করে তোলে । দুর্নীতিতে পিএইচডি করে অল্প দিনেই হয়ে যায় শহরের সব থেকে সেরা ধনিদের একজন ।

এরপরই মুভির দৃশ্যপটে হাজির হয় কদম চোরা এবং দ্যা গ্রেট প্রিন্স ।
কদম চোরা (এ.টি.এম শামসুজ্জামান) যার বিশ বছরের মুরগী চুরির অভিজ্ঞতা। আর প্রিন্স (হুমায়ূন ফরীদি) যিনি নিজেকে ধান্দাবাজ বলে আখ্যায়িত করেন এবং টাউট বাটপারি করে বিলাসিতার জীবন জাপন করে। ঘটনাক্রমে কদম চোরা ও প্রিন্স কক্সবাজার শহরে চলে আসে এবং একটি ১০০ টাকার নোট এর বাটপারির মাধ্যমে দুজনে চাচা ভাজিতা হিসাবে ধান্দাবাজি শুরু করে।

ধান্দাবাজি করতে গিয়ে পরিচয় হয় রাজীব চৌধুরীর ২য় স্ত্রীর সাথে। যাকে রাজীব বিয়ে করলেও কোন সামাজিক মর্যাদা দেয়নি। সামাজিক মর্যাদা পাবার জন্য এবং রাজীব চৌধুরীকে পথে নামানোর জন্য এই দুই ধাপ্পাবাজের সরনাপন্ন হন। প্ল্যান করেন একজন সাহসী সুদর্শন শিক্ষিত বেকার যুকবকে খুঁজে রাজীব চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে শহরের সব থেকে সুন্দরী মৌ (তামান্না) এর সাথে প্রেমে অভিনয় করে রাজীব চৌধুরীর সব সম্পতি আত্মসাৎ করে পথের ফকির করা হবে। আর সেই ছেলেটি হল বাংলা চলচিত্রের অন্যতম অ্যাকশন হিরো মার্শাল আর্ট স্পেশালিষ্ট রুবেল।

এরপরের কাহিনী জানতে হলে আপানকে দেখতে হবে অ্যাকশন ও কমেডি নির্ভর মুভি “ভন্ড”।

╚»★মুভির ভালো লাগার দিক★«╝

► আমাদের দেশের চলচিত্রের গান একসময় তুমুল জনপ্রিয় ছিল সেই গানের ছোয়া পাওয়া যায় এই মুভিতে। “ভন্ড” মুভির ২ টি গান তখন তুমুল জনপ্রিয়তা পায় বলতে গেলে এখনো মানুষের গানগুলো ভালো লাগবেই। গান দুটি হলঃ

•►লোকে বলে সুন্দরী আমি নাকি সুন্দরী ( শিল্পীঃ ডলি শায়ন্তনী)
•►ও সাথীরে… ( এই গানটি সব থেকে বেশি জনপ্রিয়, শিল্পীঃ এন্ডু কিশোর)

আর টাইটেল সং টাও ছিলো একটু অন্যরকম। সব মিলিয়ে একটি অসাধারণ মিউজিক পাওয়া যায় ভন্ড ছবিতে।

► মুভিতে দেখা যায় আমাদের অ্যাকশন হিরো রুবেল নৃত্য এর তাল লয় ছন্দের ম্যাধমে মারামারি করছেন। বেশ অন্যরকম একটা ব্যপার তাই না !! হ্যা, এই মুভিতেই বাংলা ছবিতে প্রথম ড্যন্সিং কুম্ফু দেখা যায়। যা মুভিটার জনপ্রিয়তার একটা অন্যতম কারন।

► মুভিতে রাজীব , হুমায়ূন ফরিদী, এটিএম শামসুজ্জামানের অভিনয় ছিল দেখার মত। বিশেষ করে হুমায়ূন ফরিদি ছিল ছবির প্রানের মত। তার “ডাক্তারররররররররররররররর ………” বলে সেই চিৎকারের দৃশ্যটা এখনো হয়ত সবার মনে আছে।

► এবার আসি নায়িকার কথায়। “তামান্না” বাংলা ছবির এক গ্লামার গার্ল। প্রথম ছবি হলেও অনেক ভালো অভিনয় করেছেন। তার সাবলীল চঞ্চলা অভিনয় ছিল নজর কারার মত। মুভিতে তাকে কিছু সময়ের জন্য অভিনয় করতে হয়েছে মানসিক রোগী (ছোট বাচ্চার) মত।

► মুভির সব থেকে ভালো লাগার জিনিস হচ্ছে ডায়লগ এবং কমেডি। যেই হুমায়ূন ফরিদী কে আমরা চিনি একজন খলনায়ক হিসাবে তিনি এ মুভিতে এটিএম শামসুজ্জামানের সাথে মানুষ হাসিয়েছেন। আর মুভির ডায়লগগুলো ছিল অন্যবদ্য, যার কিছু ডায়লগ হয়তো আমাদের এখনো মনে আছে-

• “আর বিশ বছরের মুরগী চুরির অভিজ্ঞতা.. আমার এলাকায় এমন কোন মুরগী নাই যে আমারে চিনে না” :v
• “আসলে আমি ভন্ড, উৎকৃষ্ট শ্রেণীর চিট, প্রথম শ্রেণীর ধাপ্পাবাজ, চতুর্থ শ্রেণীর টাউট, এক কথায় সলিড ভণ্ড” :v :v
• “মাই নেম ইজ কোবরা। বাট ইউ আর এ ম্যান নট কোবরা :P”
• “ছাল নাই কুত্তার বাঘা নাম”

► মুভিটি গতানুগতিক ভাই হত্যার প্রতিশোধ, স্ত্রীর মর্যাদা নিয়ে নির্মিত হলেও শুধুমাত্র পরিচালকের নির্মাণ দক্ষতার কারনে সবার নজর কেড়েছিল। আর মুভির শেষ দিকে “সাম্প্রদায়িক প্রীতি বন্ধন কমিটির” আগমন যোগ করে এক নতুন মাত্রা।

╚»★মুভি সম্পর্কিত কিছু তথ্য★«╝

মুভিটির খারাপ কোন দিক যদি থেকেও থাকে তা হয়তো সল্প বাজেটের কারনে থাকতে পারে। কিন্তু আমি খারাপ কোন দিক দেখি নাই। কারন এতো কম বাজেটে এত ভালো মানের মুভি শুধুমাত্র মনে হয় ৮০ ও ৯০ এর দশকেই ছিল।

“ভন্ড” সারাদেশে একযোগে মুক্তি পায় এবং ৫ কোটি টাকা আয় করে বলে জানা যায়।

সুতরাং মুভি হিসাবে “ভন্ডকে” ব্যবসা সফল বলা যায়। এমনো শোনা গেছে পরের শো শুরু হবার ১-২ ঘন্টা আগেই সব টিকিট শেষ হয়ে গেছে। অনেকে ব্লাকে টিকিট কেটে এই মুভিটি দেখেছে। সুতরাং বোঝায় যায় ভন্ড দর্শকদের মাঝে ভালোই আলোড়ন তৈরী করেছিল।

╚»★মুভির পরিচালক, নায়ক এবং নায়িকা নিয়ে কিছু অজানা কথা★«╝

★শহীদুল ইসলাম খোকনঃ বাংলা চলচ্চিত্রের যে কয়জন পরিচালক আলো ছড়িয়েছিলেন তাদের মধ্য অন্যতম একটি নাম শহীদুল ইসলাম খোকন। তিনিই সর্বপ্রথম বাংলা মুভিতে মার্শাল আর্ট
( ড্রাংকিং কুম্ফু, উইপিং কুম্ফু , ড্যান্সিং কুম্ফু, ব্লাইনড কুম্ফু ) নিয়ে আসেন। ৮০ ৯০ এর দশকে যে অ্যাকশন আমারা ব্রুস্লির মুভিতে দেখতাম তিনিই আমাদের মুভিতে সেই জিনিস নিয়ে আসে। যা তার মুভি জনপ্রিয়তার অন্যতম কারন।

★রুবেলঃ ৮০র থেকে ৯০ দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের নিয়মিত দর্শকদের কাছে এক অতি জনপ্রিয় তারকার নাম রুবেল । পুরো দেড় দশকে রুবেল ছিলেন একমাত্র নায়ক যার কোন ছবি ফ্লপ বা ব্যবসায়িক ভাবে ব্যর্থ হয়নি । কারন রুবেল ছিলেন তখনকার সময়ের গতানুগতিক অ্যাকশন ছবিগুলোর নায়কদের মাঝে সম্পূর্ণ আলাদা ।

রুবেল তার প্রথম ছবি শুরু করেন এই শহীদুল ইসলাম খোকন এর মুভিতেই নাম “লড়াকু”। এর পর আর পিছনে ফিরতে হয়নি তাকে। একসময় বলা হত রুবেল খোকন জুটি মানেই সুপারহিট।

★তামান্নাঃ তামান্না মিডিয়ায় আসেন মডেলিং এর মাধ্যমে। আফজাল হোসেন নির্মিত স্টারশিপ বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছিলেন তিনি। শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘ভণ্ড’ দিয়ে তিনি প্রথম রূপালী পর্দায় উপস্থিত হন এবং দর্শকের মনে আসন গেড়ে বসেন। তখনকার সময় তিনি ছিলেন গ্লামার গার্ল। ভন্ড মুভিতে “লোকে বলে সুন্দরী” গানে তাকে বলা হয়েছে সুস্মিতা সেন, ঐশ্বরিয়া রায় এর থেকেও বেশি সুন্দরি। আসলেই কিন্তু গ্লামারের দিক থেকে তিনি কোনো অংশে কম ছিলেন না, সেটা মুভি দেখলেই বুঝতে পারবেন।

লেখাটি পড়ে কেউ যদি মুভিটি না দেখে থাকেন, তিনি দেখার আগ্রহী হলে সেটিই সব থেকে বড় পাওয়া হবে। অনেক বড় করে ফেলেছি আর না ; সবাইকে ধন্যবাদ। হ্যাপি মুভিং 🙂

▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬
►-►Online watch(youtube link):

►-►ও সাথীরে গান( youtube link):

 


মন্তব্য করুন