ভাইরাল-ভাইরাস: আলফা আই বনাম অপূর্ব
অপূর্বরা ইচ্ছে ভাইরাস। আর ভাইরাসের জন্মদাতা আলফা আইরা। ভাইরাল নামক ভাইরাস যখন নাটক ইন্ডাস্ট্রিকে আক্রান্ত করেছে তখন তার নেতৃত্বে ছিল এবং এখনো আছে প্রযোজনা সংস্থা ও ভাইরাল আর্টিস্টরা। তাদের সিন্ডিকেটের দাপটে ইন্ডাস্ট্রিকে বৈচিত্র এবং শুদ্ধতা দিতে পারার যোগ্যতাসম্পন্ন বহু ছেলে-মেয়ে হারিয়ে অঙ্কুরোদম হবার সুযোগই পায়নি। আজ মুখোমুখি সেই দুই দানব পক্ষ।
জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ও আলফা আইয়ের কর্ণধার শাহরিয়ার শাকিল
আমার এই লেখাতে ‘অপূর্ব’ এবং ‘আলফা আই’ নাম দুটোকে এককভাবে না নিয়ে দুটো পক্ষ (ভাইরাস আর্টিস্ট এবং ভাইরাসের জন্মদাতা এজেন্সি) বিবেচনা করুন। যেখানে দু পক্ষের গোড়া এক সুতায় গাঁথা।
এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট কিছু ভাইরাস আর্টিস্টকে কোটি কোটি টাকা অগ্রীম দিয়ে কিনে রেখেছে। ফলে নতুন/খুচরা কেউ চাইলেও এদের শিডিউল নিতে পারে না। একইভাবে এই আর্টিস্টরা এতটাই দাপটশালী যে, মার্কেটে নতুন কোন ছেলে-মেয়ে এসে একটু হাইলাইট পাবার সাথে সাথে তাদেরও সিন্ডিকেটের ভেতর ঢুকিয়ে চক্রের ভেতর আটকে ফেলছে। ফলে সিন্ডিকেটের বাইরের নির্মাতা/প্রযোজকরা শিডিউল তো পায়-ই না। বরং যদি ২ টাকার আর্টিস্টকে ১০ টাকা অফার করে পায়ও, সেখানে হিরো-হিরোইনের পছন্দের ক্যামেরাম্যান থেকে মেকআপম্যান হয়ে প্রোডাকশন বয় পর্যন্ত নিতে হয়। অন্যদিকে তাদের পছন্দের কাপল তো আছেই।
এই উভয়পক্ষ মিলে ছোটপর্দা ইন্ডাস্ট্রির প্রতি ন্যূনতম দায় না মিটিয়ে তারা রাক্ষসের মতো সব গিলে খাচ্ছে আজ বছর কয়েক ধরে। তাদের এই অসভ্যতার দাপটে ছোটপর্দার যত রকম অধঃপতন আছে, সবই ঘটেছে। সেটা গল্পের মান হোক কিংবা নির্মাণের কিংবা নামের।
প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠান/এজেন্সিগুলো এই ভাইরাসদের এতটাই দানবে পরিণত করেছে যে, তারা তাদের ঘেটু নির্মাতা ছাড়া আর কারো কাজ করে না। কারণ তারা সেটে ডিরেক্টরকে প্রোডাকশন বয়ের ভুমিকায় রেখে নিজেদের ঘেটু ক্যামেরাম্যান দিয়ে নিজেরাই নিজেদের নাটক ডিরেকশন দেয়। আর নতুন কোন ডিরেক্টর/প্রযোজক হলে তো কথাই নেই। অর্থাৎ ডিরেক্টর নামক গোলাম তাদের প্রয়োজন।
আমাদের এজেন্সিগুলো রাক্ষস হয়ে যেদিন টিভি চ্যানেলগুলো খেয়ে নিলো, সেদিন থেকে এইসব ভাইরাস আর্টিস্টের জন্ম। তারা মিডিয়া মাস্তানি ও মিডিয়া মনোপলির মাধ্যমে তথাকথিত বায়বীয় সুপারস্টারের জন্ম দেয়া শুরু করলো। তার উপর আর্টিস্টরা নিজেরাও ফ্যান নামক ভাড়াটিয়া ‘টক্সিক ঘেটু’ ছেড়ে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আপাদমস্তক মূর্খ-গাণ্ডু লাঠিয়াল দিয়ে তারা সেখানে মাস্তানী করে বেড়ায়। তারা যে খোদা-ভগবান-ঈশ্বর, তাদের যে সবকিছু ভালো এবং সঠিক এবং সেরা তা প্রমাণে ব্যস্ত থাকে এই ভাড়াটিয়া ঘেটুরা।
আজ যখন অপূর্ব, আলফা আই থেকেও বড় দানবে পরিণত হয়েছে তখন আলফা আই’র টনক নড়েছে। অপূর্ব অর্ধ কোটির চুক্তি সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, সেটাও করেনি। কারণ অপূর্বর এখন আর এই এজেন্সিকে পোছার টাইম নাই। তাই দিন শেষে অপূর্ব প্রতারণা, অপেশাদারিত্ব এবং টাকা মেরে দিয়ে ডেম কেয়ার মুডে আছে। কারণ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ইভেন্ট বেজড ঘেটু থাকলেও, আর্টিস্টদের ভাড়াটিয়া ঘেটু সারা বছরই থাকে। ফলে বিচারে যেটাই হোক না কেন, অনলাইনে দাপটটা দেখাবে আর্টিস্টই।
তবে সবচেয়ে লজ্জাজনক যে ব্যপারটা গত কয়েকদিনে দেখা গেছে, তা হচ্ছে: বিভিন্ন নির্মাতা, অভিনেতা-অভিনেত্রী ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে অপূর্বকে অন্ধভাবে সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে। তারাও সেই চক্র। যারা ছোটপর্দা ইন্ডাস্ট্রির দায় মেটানোর ধার ধারে না। তাদের দরকার ভাইরাল-ভাইরাসের সহচার্য। একটুখানি সহচার্য পেলেই যদি শিকেতে কিছু লাভের ফোটা জমা হয়!
অথচ এখানে সত্যের পক্ষে অবস্থান নেয়ার সৎ সাহস না থাকলে, অন্তত দ্রুত সমাধানের আহবান আসা উচিত ছিল। অমুক-তমুক পক্ষ নিয়ে ‘সাথে আছি’ টাইপ ট্যাগ আসাটা দুঃখজনক।
আলফা আই ইতিমধ্যে তাদের পুরো বক্তব্য সামনে এনেছে। সেই বক্তব্য অনুযায়ী অপূর্ব অবশ্যই চোর। এবার অপূর্ব যদি তার বক্তব্য এবং তথ্য দিয়ে নিজেকে সে অভিযোগ থেকে মুক্ত করতে পারে, তাহলে সে সাধু হয়ে যাবে। আর বাটপার হয়ে যাবে ‘আলফা আই’।
চোর/বাটপার কোনটা চূড়ান্তভাবে সামনে আসে, সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।