Select Page

ভালোবাসার গল্প: একটি ১০০% বাংলাদেশী ছবি

Bhalobashar golpo with anisur rahman milon debutant actress tania and munia afrinমিলন আর সাদিয়া ছোটবেলা থেকে অনেক ভাল বন্ধু। মিলনদের আর্থিক অবস্থা ভাল হলেও হঠাৎ করেই বাবা-মা দুর্ঘটনায় মারা গেলে এতিম হয়ে যায় সে। আর সাদিয়ারা অনেক গরিব। টাকার অভাবে এক সময় পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় তার। তখন মিলন নিজের পড়ালেখা ছেড়ে ভাতের হোটেল খোলে যাতে সাদিয়া আবার স্কুলে যেতে পারে, স্বচ্ছন্দে থাকতে পারে। এইচএসসি পরীক্ষার পর মেডিকেলে ভর্তির জন্য সাদিয়া আর তার মাকে নিয়ে ঢাকায় পাড়ি দেয় মিলন। কিন্তু তারপর থেকেই বিপত্তি। ঢাকায় এসে টাকার গন্ধ পেয়ে মন পাল্টে যায় সাদিয়ার। তার আর গরিব, খ্যাত মিলনকে ভালো লাগে না। টাকার বিনিময়ে নিজের ভালোবাসাকে সে বিকিয়ে দেয় ধনীর দুলাল আরজুর কাছে। এবার কি করবে ভালোবেসে প্রতারিত হওয়া মিলন? এই নিয়েই ‘ভালোবাসার গল্প’ – একটি অনন্য মামুন চলচ্চিত্র। একটি মৌলিক গল্পে ১০০% বাংলাদেশী ছবি।

ছবির সেরা দিক এর কাহিনী। সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রথম একটা কমার্সিয়াল ছবি দেখলাম যার পুরোটা জুড়ে তার কাহিনীই প্রাণ হয়ে ছিল। কাহিনীতে নতুনত্ব ছিল। একেবারে জীবনঘনিষ্ঠ এবং প্রাত্যহিক জীবনের খুবই পরিচিত একটা গল্প। কিন্তু বড় পর্দায় এই প্রথমই এত বড় ক্যানভাসে উঠে এল সেটা। এবং পুরো ছবি জুড়ে যে দর্শককে যে মেসেজটা দেয়ার ছিল, সেটাও অসাধারণ। সবমিলিয়ে ‘ভালোবাসার গল্পে’ যে ভালোবাসার গল্পের দেখা পেলাম, তা সত্যিই হৃদয়স্পর্শী, অনেকদিন মনে রাখার মত। এবং অবশ্যই, বাংলা ছবিতে দারুণ অভিনব। আশি নব্বইয়ের দশকে যেধরণের কাহিনীনির্ভর ছবি নির্মাণ হতো, ‘ভালোবাসার গল্প’ও ঠিক সেই ঘরানার ছবি।

চিত্রনাট্য সহজ-সরল কিন্তু সুন্দর। ছবির রানিং টাইম বেশ লম্বা, কিন্তু কাহিনীর উপস্থাপনায় কোন বাহুল্য নেই। প্রতিটা দৃশ্যই মূল কাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত। কোন অপ্রয়োজনীয় সাবপ্লট নেই। ছবির সংলাপও অসাধারণ। রোমান্টিক, ইমোশনাল এবং কমেডি, সবধরণের সিনের সংলাপগুলোই ভালো লাগার মত।

গানগুলো ভাল লেগেছে। বিশেষ করে মিলন সাদিয়ার প্রথম রোমান্টিক গানটা। এবং সাম্প্রতিক সময়ের অন্যান্য বাংলা ছবির মতই, এই ছবিরও দৃশ্যায়ন চমৎকার। পরিচালকরা যে দেরিতে হলেও দেশীয় সুন্দর সুন্দর লোকেশনের কদর করছেন, এটা অনেক ভাল লাগছে।

পরিচালক হিসেবে অনন্য মামুন অসাধারণ। আরও একবার তিনি প্রমাণ করেছেন কেন তাকে এই সময়ের সবচেয়ে মেধাবী পরিচালকদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার নির্মাণ বরাবরের মতই ভাল। এই ছবির যে কাহিনী তাতে অনেক বিগ বাজেটের টেকনোলজি, গ্রাফিক্স এসবের দরকার ছিল না। দরকার ছিল কাহিনীর ফ্লো ঠিক রেখে আন্তরিকতার সাথে সেটিকে পর্দায় উপস্থাপন। এবং সেটা পারফেক্টলি করেছেন তিনি। তবে গানের ক্ষেত্রে টাইমিং সেন্স আরেকটু ভাল হলে ভাল হত।

মিলন আরও একবার নিজেকে প্রমাণ করলেন। মাসুম চরিত্রকে তিনি যতটা যথার্থভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন, সেটা আর কোন অভিনেতার পক্ষে হয়ত সম্ভব হতো না। অভিনেতা হিসেবে নিজেকে আরও বড় উচ্চতায় নিয়ে গেলেন তিনি। মিশা সওদাগরও অসাধারণ। এ বছর এখন পর্যন্ত তার আগের সেরা দুই ছবি ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ আর ‘ব্ল্যাকমেইল’। এ ছবিতে তিনি আরও কয়েকগুণ ভাল ছিলেন। কে ভাবতে পেরেছিল, আলাভোলা সৎ নীতিবান উকিলের চরিত্রের সাথে চিরকালের খলনায়ক মিশা এত সুন্দরভাবে মানিয়ে যাবেন? অন্যদিকে নবাগতা হিসেবে সাদিয়াও ভাল করেছেন। ভবিষ্যতে আশা করি তিনি আরও ভাল করবেন। আরজুও মন্দ ছিলেন না কিন্তু সাদিয়ার পাশে তাকে বাচ্চা বাচ্চা লেগেছে। ডন আর মুনিরা মিঠুর অভিনয় এই ছবির আরেকটা বড় দিক। মুনিরা মিঠু সাদিয়ার মা হিসেবে অনেক ভাল করেছেন। আর মিলনের বন্ধু হিসেবে ডনও নিজেকে নতুনরূপে তুলে ধরেছেন। একজন চরিত্রাভিনেতা হিসেবে তিনি ভবিষ্যতেও এরকম আরও ভাল ভাল কাজের সুযোগ পাবেন, এই আশা রাখি। এবং লাস্ট বাট নট দি লিস্ট, পিচ্চিগুলোও ছিল স্রেফ দারুণ।

সবমিলিয়ে ভাল অভিনয়, ভাল পরিচালনা, ভাল নির্মাণ, ভাল গানের ছবি ভালোবাসার গল্প। কিন্তু বাকি সব বাদ দিন। জাস্ট ভাল গল্পের, মৌলিক গল্পের, দেশী ফ্লেভারসমৃদ্ধ গল্পের একটা ছবি দেখতে ‘ভালোবাসার গল্প’ দেখুন। অনেকদিন পর বাংলাদেশে এমন একটা ছবি দেখলাম যার একাধারে ভাল একটা কাহিনী আছে, পাশাপাশি সেটা দর্শককে খুব ভাল একটা সামাজিক বার্তাও দিচ্ছে। ভালোবাসার গল্প এমন একটা ছবি যা দেখে রুচিশীল দর্শক গর্ব করে বলতে পারে, হ্যাঁ, এটা আমাদের বাংলাদেশের ছবি। পরিচালককে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা ছবি উপহার দেওয়ায়।


মন্তব্য করুন