Select Page

ভালো থেকো : কতোটা ভালো

ভালো থেকো : কতোটা ভালো

ভালো থেকো’ ত্রিভুজ প্রেমের গল্প। গল্পের শুরু একটি বিয়ে দিয়ে। এই বিয়েতেই গল্পের মূল পাত্র-পাত্রী জয় (আরিফিন শুভ) ও নীলার (তানহা তাসনিয়া) পরিচয় হয়। বিয়ে পরবর্তীতে নীলার বাবা জয়ের কাছে একটি বাড়ির নকশা নিয়ে যায় এবং জয়ের নীলাদের বাড়িতে আসা শুরু হয় ও নীলার সাথে তার ঘনিষ্ঠতা হয়। কিন্তু হঠাৎ আসিফ রোজের (আসিফ ইমরোজ) সাথে নীলার বিয়ের ঠিক হওয়ার সংবাদ শুনে জয় উপলব্ধি করে সে মনের অজান্তে নীলাকে পছন্দ করেছিল, কিন্তু সে তা নীলাকে বলতে পারেনি। নীলা পরবর্তীতে এই বিষয়টি জানতে পারে এবং জয়ের সাথে পরিচয়ের এক পর্যায়ে রোজও তা বুঝতে পারে। এতে তিন পরিবারের মধ্যে এক ধরনের বিবাদ সৃষ্টি হয় একজনকে সরে দাঁড়াতে হয়।

চলচ্চিত্রের প্রচারণায় বলা হয়েছে চলচ্চিত্রটি ‘আইডেন্টিটি ক্রাইসিস’ নিয়ে। প্রথমত দেখে আসি ‘আইডেন্টিটি ক্রাইসিস’ বিষয়টি কী এবং ‘ভালো থেকো’ চলচ্চিত্রে দেখানো বিষয়টির সাথে এর সম্পর্ক কী?

সাইকোলজি টুডে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, একজন মানুষের জীবন আটটি ক্রাইসিস স্টেজের মধ্য দিয়ে পার হতে পারে, যার পঞ্চম ধাপ হলো আইডেন্টিটি ক্রাইসিস। একজন মানুষ তার কৈশোরে এই সমস্যার সম্মুখীন হয়, যখন তার শারীরিক, মানসিক, হরমোনগত ও জ্ঞানের বিকাশ ও পরিবর্তন ঘটে থাকে এবং সে এই পরিবর্তনের ফলে যদি সে বুঝতে না পারে সমাজে তার ভূমিকা কী বা সে কী করছে, সেটাই হল; আইডেন্টিটি ক্রাইসিস। কিন্তু ছবিতে আমরা দেখতে পাই জয় চরিত্রে অভিনয় করা আরিফিন শুভ; একজন প্রতিষ্ঠিত স্থপতি (আর্কিটেক্ট)। সে জানে সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা রয়েছে, এবং এই কারণে সে আরও কয়েকজনকে নিয়ে ছিন্নমূল কিছু শিশুর দায়িত্ব নিয়েছে। সে জানে আবেগকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না, কারণ তার কোন বংশ পরিচয় নেই। অর্থাৎ ছবিতে দেখানো কোন কিছুই মনোবিজ্ঞানের সংজ্ঞার সাথে যাচ্ছে না। জয় চরিত্রের এই বিষয়টাকে আমরা বংশ পরিচয়হীনতা বলতে পারি, ‘আইডেন্টিটি ক্রাইসিস’ নয়। ফলে প্রথমেই আমরা একটা ভুল তথ্য নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে ঢুকছি।

চিত্রনাট্যের কয়েকটি দুর্বল দিক লক্ষণীয়। বহু বছর বিদেশে থেকে পড়াশুনা করা আসিফ রোজ জানে শরিফ হোসেন নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক চিরকুমার, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নীলা বা তার পরিবার তার সম্পর্কে জানেন না। বিষয়টা গাঁজাখুরি লেগেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের বাড়িতে হামলার বিরুদ্ধে সকলেই মিছিল করছে হাতিরঝিলে। এই গল্প পরিচালক রাজু নিজে লিখেছেন বলে মনে হচ্ছে না। কারণ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং তার ভালোভাবেই জানার কথা শিক্ষার্থীরা অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনেই মিছিল বা মানববন্ধন করবে। তাছাড়া দর্শন বিভাগের শিক্ষকের জন্য অবশ্যই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করার স্থান নির্বাচনের প্রথম পছন্দ হবে অপরাজেয় বাংলার সম্মুখভাগ।

চলচ্চিত্রটি একটি নেতিবাচক শিক্ষা আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। জয় অধ্যাপক শরীফ হোসেনের পালিত পুত্র, এই কথা শোনার পর নীলার মায়ের (রেবেকা) ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ ও ‘নাউযুবিল্লাহ’ পড়া দিয়ে দত্তক নেওয়াকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখানো হচ্ছে। জয় পালিত পুত্র, অবৈধ সন্তান নয়। এতে করে যেসব পিতামাতা দত্তক নিচ্ছেন তাদেরকে এবং তাদের সন্তানকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

শুরুর দিকে বিয়ে বাড়িতে শুভর অভিনয় অতি-অভিনয় বা ভাঁড়ামোতে রূপ নিয়েছে। এতে করে শুরুটাই বিরক্তিকর হয়ে ওঠেছিল। পরবর্তীতে তিনি তার সামর্থ্য দেখিয়েছেন। শুভর ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় হলো তার চলচ্চিত্রের মূল চরিত্রে অভিনেত্রী ভাগ্য খারাপ। ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ছবিতে মম আর ‘কিস্তিমাত’ ছবিতে আঁচল ছাড়া তার তেমন যোগ্য অভিনেত্রী পাওয়া যায়নি। মাহী ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিতে সাপোর্ট দিলেও তা পরিপূর্ণ ছিল না। ফলে শুভ অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোতে অভিনেত্রী চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ হলেও সকল দায়িত্ব শুভকে কাঁধে নিতে হয়।

হ্যাঁ, বলছিলাম এই চলচ্চিত্রের মূল অভিনেত্রী তানহা তাসনিয়ার ব্যাপারে। ইতোমধ্যে দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও তার অভিনয় দক্ষতায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। আর গানে শুভ ও ইমরোজ যতটা ভালো নেচেছে, তানহা ঠিক ততটাই খারাপ করেছে। ইমরোজ এই ছবির ট্রাম্প কার্ড হতে পারতো, কিন্তু তাকে সেই স্পেস দেওয়া হয়নি। ইমরোজ তার সাধ্যমত এবং তাকে দেওয়া চরিত্র অনুযায়ী চেষ্টা করেছে। ফলে তাকে পাশ নাম্বার দেওয়া যায়। রোজের মায়ের চরিত্রে অরুণা বিশ্বাস বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে তথাকথিত মায়ের চরিত্রে অভিনয় করার শিল্;পীদের তুলনায় খুবই ভালো কাজ উপহার দিয়েছেন। বাকি পার্শ্ব চরিত্রের মধ্যে শরিফ হোসেন চরিত্রটি গল্প অনুযায়ী উপযুক্ত ছিল।

চলচ্চিত্রটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন মূলধারার চলচ্চিত্রের অভিজ্ঞ নির্মাতা জাকির হোসেন রাজু। কিন্তু হতাশ করলেন তিনি। তিনি তার প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্রের ক্লিশে থেকে বের হতে পারছেন না।

বলা হয়ে থা;কে পরিচালকরা তাদের সাফল্য এনে দেওয়া সূত্র থেকে বের হতে চান না। কিন্তু সেই সূত্র দিয়ে দর্শক ধরে রাখতে হলে অন্তত তা সময়োপযোগী করে তুলতে হবে। হোক প্রেমের গল্প, কিন্তু তাতে নতুনত্ব চাই, চাই গল্প বলার ধরনে ভিন্নতা।

এছাড়া, প্রচারণায় পরিচালকের ছবি সম্বলিত পোস্টার দিয়ে বলা হয়েছে, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, এবং রাজনৈতিক কর্মীরা এই ছবিটি দেখবেন না।” এটি খুবই নিম্নমানের প্রচারণা কৌশল। মোট কথা, ভালো থেকো ছবিতে ভালো লাগার মত কনটেন্ট খুবই অল্প।

চলচ্চিত্র : ভালো থেকো
পরিচালক : জাকির হোসেন রাজু
চিত্রনাট্য ও সংলাপ : জাকির হোসেন রাজু ও দেলোয়ার হোসেন দিল
শ্রেষ্ঠাংশে : আরিফিন শুভ, তানহা তাসনিয়া, আসিফ ইমরোজ, কাজী হায়াত, অরুণা বিশ্বাস
রেটিং : ১/৫


মন্তব্য করুন