ভালো নির্মাণ ‘নিখোঁজ’
Slow burn but SMART, PLANNED execution!
২০ বছর আগে (১৯৯৯ সালের মার্চ বলা হচ্ছে) ছুটির দিনের এক দুপুরে পরিবারের সবার সাথে বসে খাচ্ছিলেন ফারুক আহমেদ। তখন খাবার টেবিল থেকে অজ্ঞাতনামা কিছু লোক তাকে তুলে নিয়ে যায় পরিচয়, কারণ কিছু না জানিয়ে। সেই পরিবারের বড় মেয়ে সাফিয়া বাবাকে আজ অব্দি খুঁজে ফিরলেও ছেলের তাতে বিরক্তি আর চরম অনাগ্রহ। তার বাবা ফারুক আহমেদ ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা ছিলেন। খোদ সেই ব্যাংক থেকে তাকে ঘিরে শোনা নানা কথা তাদের দ্বিধায় রাখে এতটা বছর। বাবাকে খুঁজতে সাফিয়া পত্রিকায় খবর প্রকাশ, পোস্টারিং-সহ বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যায়, জিইয়ে রাখে ফিরে পাবার আশা। এই হারানো মানুষকে নিয়ে একটা জিজ্ঞাসার জাল তৈরি হয় ভেতরে আর বাইরে। সেটি নিয়েই এই সিরিজের গল্প!
নতুন পরিচালক হিসাবে রিহান রহমান খুবই ভালো করেছেন। আদনান আল রাজীবের রান আউটকে টিম হিসেবে দেখে একটা ভালো ইম্প্রেশন ছিল আগে থেকেই। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে নির্মাতার গল্প বলার ধরণ আর ট্রিটমেন্ট নিয়ে এতটা আশা করিনি। সিনিয়র অভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদকেও বলতে শুনেছি, ‘আমি এই চরিত্রটা করতে গিয়ে খুব নার্ভাস ছিলাম। শুধু মাথায় একটা কথাই ঘুরত, আমি ফারুক আহমেদকে ঠিকমতো ফুটিয়ে তুলতে পারছি তো। তবে আমাদের তরুণ ডিরেক্টর রিহান চমৎকারভাবে সবাইকে সাহায্য করেছেন।’
যদি বড় প্লাস পয়েন্টের কথা বলেন তবে বিশেষভাবে বলতে হয়, ২০ বছর আগে্র ও বর্তমানের টাইম স্লটকে সমান্তরালভাবে ফাস্ট কাটে দেখানোটা। ধরেন ২০ বছর আগে যে সিনটা হয়তো খাবার টেবিলে শেষ হচ্ছে, বর্তমানেও সেটা সিংক করা হয়েছে খাবার টেবিলেই এবং গল্পটার ধারাও ঠিক রাখা হয়েছে যেটা খুব স্মার্ট লেগেছে। বাইরের দেশের অনেক স্লো বার্ন সিরিজ শেষদিকের পর্বে অনেক প্রশ্নের উত্তর দেয় তবে প্রতিপর্বেই টান রেখে শেষ করে। ‘নিখোঁজ’-এও সেরকম একটা ফিল পেয়েছি।
আফসানা মিমির স্ক্রিনপ্রেজেন্স এক্সপেকটেশন অনুসারে ভালো। বাইরের অনেক ওয়েব সিরিজেও আমরা দেখি, দীর্ঘদিন পর অভিনয়ে ফেরা শিল্পীরা ওয়েবে দারুনভাবে মানিয়ে নেন। মিমি এর আগে বায়োস্কোপে কাজ করলেও ‘নিখোঁজ’ তার নতুন চলার শুরু হতেই পারে।
শ্যামল মাওলা যে সময়টা রিপ্রেজেন্ট করেছেন সেখান তার হার্শ ক্যারেক্টারই। মানানসই, তিনিও ভালো করেছেন। তবে আরেকটু ফোকাস থাকলে ভালো লাগতো।
খায়রুল বাসার আর ইন্তেখাব দিনার এই সিরিজের সবচেয়ে বড় এক্স ফ্যাক্টর। দুজনেই গল্পে ঢুকে বসবাস করেছেন নিভৃতে।
বাসার এই ‘মামুন’ ক্যারেক্টারটিকে ধারণ করেছে বেশ, তার চরিত্রে আছে দ্বৈত সত্ত্বার চ্যালেঞ্জও। শতাব্দী ওয়াদুদ মানেই যে ভরাট গলা আর কমান্ডেড ক্যারেক্টার সেটা থেকে এখানে একদম নেই বললেই চলে। বরং ফারুক আহমেদ অনেক মেজাজী ও রহস্যময় একজন মানুষ যা অভিনেতা ধরতে পেরেছেন।
তবে ‘ছোট সাফিয়া’ হিসাবে স্পর্শিয়ার ক্যারেক্টার ফোকাস বেশি থাকলেও তার এক্সপ্রেশন আর ডায়লগের কম্পাইল খুব একটা জমেনি, একই কথা শিল্পী সরকার অপুর জন্যেও বলছি। তবে ভালো করেছে নতুন হিসাবে মাসুম রেজওয়ান আর ফিল্মমেকার দীপান্বিতা মার্টিন।
ক্যামেরা যথাযথ, খুব আহামরি কিছু দেখানোর চেষ্টা ছিল না। বিজিএমের উপস্থিতি কম তবে স্থানভেদে ভালো। রিপন নাথের সাউন্ড ভালো ছিল বলেই কম্বিনেশনে সিরিজের মুহূর্তগুলো কানেকশান তৈরি করতে পারে দর্শকমনে। তবে ২০ বছর আগের কালার শেডটা আমার ভাল লাগেনি, খুব আলাদা করা গেছে বলে মনেও হয়নি। সেট ডিজাইন ও শিল্প নির্দেশনার কাজে একটু তাড়াহুড়া দেখা গেছে।
চরকিতে ‘ঊনলৌকিক’ (যদিও এন্থলজিক্যাল)-এর পর ‘শাটিকাপ’ না, আমি এগিয়ে রাখছি ‘নিখোঁজ’কেই। ওভারঅল বাংলা ওয়েব সিরিজে স্লো ট্র্যাকে গল্প এগোনো কাজগুলোর মাঝে এটি ভালো নির্মাণ হয়ে থাকবে।