Select Page

ভয়ংকর সুন্দর : কারো কাছে অসাধারণ, কারো কাছে জঘন্য!

ভয়ংকর সুন্দর : কারো কাছে অসাধারণ, কারো কাছে জঘন্য!

শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে অনিমেষ আইচ পরিচালিত ‌‘ভয়ংকর সুন্দর’, যার প্রধান দুই চরিত্রে আছেন আশনা হাবিব ভাবনা ও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। এখনো কোনো সমালোচক মতামত পাওয়া যায়নি সিনেমাটিকে ঘিরে। ফেসবুকের বাংলা চলচ্চিত্র গ্রুপ থেকে আসুন চটপট কিছু মন্তব্য পড়ে নিই—

গ্রুপটির অ্যাডমিন তানভীর খালেদ লিখেছেন, ‘ঢাকায় যারা থাকি প্রতিনিয়ত অজস্র সমস্যা নিয়ে বেঁচে থাকি। সিনেমা নাকি বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি! কিন্তু এই সমস্যাগুলোকে সেলুলয়েডের রঙিন ফিতায় রূপ দিবেন এমন সাহসী নির্মাতার কয়জনই বা আমাদের দেশে চলচ্চিত্র বানাতে আসেন কিংবা সুযোগ পান! অনিমেষ আইচ সে সাহসটা দেখিয়েছেন! সত্যি বলতে যে গল্প নিয়ে ভয়ংকর সুন্দর নির্মিত হয়েছে এমন একটি ছোটগল্পকে চিত্রনাট্যে রূপ দিয়ে বাংলাদেশের মত সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে সিনেমা নির্মাণ করতেও সাহসের প্রয়োজন হয়। এই গল্পটাকে অসাধারণ এক সিনেমায় কনভার্ট করতে ভয়ন্কর মেধার স্বাক্ষর রাখতে হয়। সেখানে অনিমেষ আইচ যতোটা করেছেন তাতে এ প্লাস মার্ক না পেলেও বেশ ভাল মার্কই পাবেন।

আমার কাছে ভয়ংকর সুন্দরকে মোটামুটি মানের একটি আর্ট ফিল্ম বলে মনে হয়েছে। আরেকটু বুদ্ধিদীপ্ত ফিনিশিং আর অসাধারণ অভিনয় এটিকে খুব ভাল মানের একটি সিনেমা করতে পারত।

তবে এটিকে আয়নাবাজির মত সর্বজনীন উপভোগ্য সিনেমা ভাবলে ভুল হবে। মনে রাখবেন ক্রিকেটে তিন ধরণের ফরম্যাটের সবচেয়ে পুরাতন ফরম্যাট টেস্ট ম্যাচ। সেটা উপভোগ করার মত মেন্টালিটি সবার থাকেনা। যার কারণে টেস্টে দর্শক সবচেয়ে কম। অনেকেই দেখলাম গ্রুপে কেউ কেউ তার কাছে ভয়ংকর সুন্দর ভাল লাগেনি বলাতে ক্ষেপে গিয়েছেন মনে রাখবেন হিটলার তার দেশে টেস্ট নিষিদ্ধ করেছেন সেটা দর্শক হিসেবে তার দোষ না।’

সুদীপ্ত দত্তের ভাষ্যে, ‘অনিমেষ স্যার, আপনি দেখলাম পরিচালক প্রযোজক সবকিছু এই সিনেমার। ভালো কথা, আপনার থিমটাও খারাপ না। কিন্তু এমন একটা থিম নিয়ে এরকম বস্তাপচা ফার্স্ট হাফ আর জঘন্য ক্লাইমেক্সযুক্ত টেলিফিল্মকে সিনেমার নাম দিয়ে চালিয়ে দেয়াটা কি উচিত ছিল আপনার? সাইকেডেলিক অনেক মুভিই দেখছি লাইফে, দিস ওয়াজ দি ওর্স্ট ওয়ান এমাং অল অফ দেম। আমি কি আমার সময় আর ব্ল্যাকারের কাছ থেকে চড়া দামে কেনা ডিসি হলের টিকেটের ১০০ টাকা ফেরত পাব আপনার থেকে?

সিনেমা বানানোর আগে স্ক্রিনপ্লে আর নেরেশনের ভাষাটা একটু বুঝে নিলে ভালো হয়। এটা সিনেমা, হলে বসে পকেটের টাকা আর সময় দুটাই ব্যয় করে দেখতে হয়; নাটক না যে ড্রয়িংরুমে বসে আরাম করে পায়ের উপর পা তুলে দেখব। অনেক আশা নিয়ে আসছিলাম, সব নষ্ট করে দিলেন আপনি।’

জান্নাতুল নাঈম পিয়ালের মতে, ‘বাংলা ছবি সম্পর্কে সবার অতি সাধারণ একটি অনুযোগ, ছবির কাহিনীতে কোন নতুনত্ব থাকে না। এমনকি বাণিজ্যিক ছবির বাইরে অফট্র্যাক বা বিকল্পধারার ছবির কাহিনী নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে অনেক চলচ্চিত্রপ্রেমীর। তাদের জন্য দখিনা বাতাস নিয়ে হাজির হতে পারে ‘ভয়ংকর সুন্দর’। শুধু যে এই ছবির কাহিনীতে ভিন্নতা রয়েছে তা-ই নয়, এমন বিষয়বস্তুর ওপর এর আগে বাংলা ভাষায় কোন ছবি নির্মিত হয়নি। তাই আর সব কিছু বাদ দিয়ে কোন দর্শক যদি স্রেফ কাহিনীর অভিনবত্বকেও ছবির ভালো বা মন্দের স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে বিবেচনা করেন, তাহলেও বেশ ভালোভাবেই উৎরে যাবে ভয়ংকর সুন্দর।‘

মেঘ বালিকা লিখেছেন, “সাইকোলোজিক্যাল থ্রিলার’ সিনেমা শুরুর আগে এরকমই প্রচারণা চালিয়েছিল ‘ভয়ংকর সুন্দর’ টিম৷ ট্রেইলারেও রক্তারক্তি, সাথে আবার পরমব্রত সুতরাং এ ছবি দেখতেই হবে৷ প্রথমদিকে বেশ হালকা গল্প মনে হয়েছে৷ হাসতে হাসতে চাপায় ব্যাথা ধরে গেছে৷ থ্রিলার আসার আগেই বিরতি চলে আসল৷ নাটকের নায়িকা ভাবনার ন্যাকা ডায়লগে কখন ঢুকে গেলাম টের পাইনি৷ ন্যাকা নায়িকা আস্তে আস্তে হয়ে উঠছে ভয়ংকর সুন্দরী৷ বিরতির পর দম বন্ধ করা কিছু দৃশ্য মাথা নষ্ট করে দেয়৷ ‘ভয়ংকর সুন্দর’-এর গল্পটা আমি বলব না, তবে একটা দৃশ্য গায়ে কাটা দেয়৷ নয়নতারার সাথে বস্তির মহিলাদের দৃশ্যটা! ওফ, কি ভয়ংকর!! পরমকে ছাড়িয়ে ভাবনা এ সিনেমার প্রাণ৷ তার গাঢ় কাজল করা চোখ, চাহনি! মনে হয় আমাকেই কিছু বলবে যেন৷ আলাভোলা মুকু, বাংলাদেশী ছবিতে তোমারে আরো চাই৷ অল্পসময় হলেও দিহান, ফারহানা মিঠু এবং ফারুক আহমেদের অভিনয় ভালো ছিলো৷ মমতাজের গাওয়া ‘ফিরবো না আর ঘরে’ গানটি কানে বেজে আছে৷”

মো. মোতাহের হোসেনের মতে, “অনিমেষ আইচ এর ‘ভয়ংকর সুন্দর’ বেশ ভালো লেগেছে। প্রথম পার্ট দেখতে গিয়ে মনে হয়েছিলো আর বোধহয় দেখতে পারবো না। ছোট পর্দার অভিনেত্রী ভাবনার অভিনয় ফেলে দেয়ার মত না। দু, একটা নাটকে উনার অভিনয় ভাল লেগেছে। সিনেমার প্রথম অংশে ভাবনার অভিনয়টা জঘন্য লাগছিল।

মতি নন্দীর শাদা খাম পড়ে একদম পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। এই গল্পের পুরোটা পড়া হয়নি। যেহেতু ছোটগল্প তাই আকারে বেশ বড় হবার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে অনিমেষ আইচ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। দ্বিতীয় অংশে নিজের সেরাটাই ঢেলে দিয়েছেন। মুভিতে নামান্তরে যতটুকু চোখের সুখ দরকার তার পুরোটাই দ্বিতীয় অংশে পেয়েছি। পরমব্রতের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছি। হাবাগোবা চরিত্রে যতটুকু মুখের ভাঁজ দরকার তার কমতি ছিলনা।

সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফি এত সুন্দর! মুগ্ধ করার মত। সিনেমার কিছু কিছু দৃশ্য চোখে লেগে আছে এখনো। সেই বৃষ্টির জল, উত্তাল সাগর, মানুষের জলকেলি নয়নাভিরাম জুড়িয়েছে বারবা।”

তরীকুল ইসলাম সৈকত লিখেছেন— “ভয়ংকর সুন্দর : এই সিনেমা লইয়া আমরা কি করিবো?

একটি মেয়ে বাড়ি থেকে পালানোর পর তার সাইকোলজিক্যাল টুইস্ট থেকে যে গল্পের জন্ম হয় তাই, ‘ভয়ংকর সুন্দর’ হওয়ার কথা। কিন্তু হলো কই?

এই সিনেমায় আমরা কি পাইনি? ঘুষিতে ড্রামের শব্দ, নায়কের অতিমানবীয় ঘুষি, সেই ঘুষি খেয়ে টিনের চালে উড়ে পড়া, আইটেম সং, বাংলা সিনেমার তথা কথিত মশলার কিছুই ছিল না। তাহলে কি ছিল? ছিল আশনা হাবিব ভাবনা’র অযাচিত ক্লিভেজ, পেট প্রদর্শন। অপ্রয়োজনীয় ড্রোন শট, টাকার শ্রাদ্ধ, লুৎফর রহমান জর্জ, শতাব্দী ওয়াদুদ, খায়রুল আলম সবুজ, অ্যালেন শুভ্র আর পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এর মত গুনি অভিনেতাদের প্রতিভার অপচয়। দুটো ভালো গান। সম্পূর্ন আলাদা একটা কনসেপ্টের গল্প।

আমি জানিনা, হাটকুড়া, গরম ভাত কিংবা নিছক ভূতের গল্প, নিষাদ, শুনতে কি পাও, নদীর নাম নয়নতারা, মায়াবতী-এর মত নাটকের মেধাবী পরিচালক এই গল্প নিয়ে ১ ঘন্টা ৫৪ মিনিটের সিনেমা কেন এবং কিভাবে বানালেন। এই গল্প নিয়ে সর্বোচ্চ ৪-৬ মিনিটের শর্ট ফিল্ম হতে পারে। টিভি নাটকের ৪০ মিনিটও এর জন্য বেশি। শর্ট ফিল্মের গল্প হিসেবে এই গল্প চমৎকার।

বিরতির আগে গল্প তৈরী না হওয়া নিয়ে সিনেমা হলের আশে পাশের মানুষের হতাশা আর বিরতির পর যা দেখানো হলো তা নিয়ে তাদের আক্ষেপই বলে দেয় ‘ভয়ংকর সুন্দর’ কতটা ভয়ংকর আর কতটা সুন্দর।

বলাকায় এক্সিকিউটিভ ক্লাসে প্রায় অর্ধেক সিট খালি ছিল। একই অবস্থা স্পেশাল ক্লাসেরও। প্রথম দিন হিসাবে এই সংখ্যাটা খুব খারাপ না হলেও এই সংখ্যা দু’দিন পর অর্ধেকে নেমে গেলে অবাক হবো না। অনিমেষ আইচ ‘আয়নাবাজি’র হাইপ টা ধরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারলেন আর কই। তৃতীয় দিন ‘আয়নাবাজি’র টিকিট ব্ল্যাকে বিক্রি হয়েছে। ‘ভয়ংকর সুন্দর’-এর টিকিট ভয় দেখালেও হয়তো কিনবে না।

প্রিয় অনিমেষ আইচ,

টিভি নাটকে আপনি আমার খুবই পছন্দের পরিচালক। আপনার প্রতিটি কাজ আমি মুগ্ধের মত দেখেছি। কিন্তু সিনেমায় ‘জিরো ডিগ্রি’র মত এবারও আমাকে হতাশ করলেন। দয়া করে নিজের জাতটা চিনতে শিখুন। আমরা এবং আমি ‘গরম ভাত কিংবা নিছক ভূতের গল্প’-এর অনিমেষ আইচকে চাই।

আমরা ভালো গল্পের সিনেমা ভালোবাসি। ভালো গল্প দিতে পারেন নাই। তাই আপনার সিনেমাকেও ভালোবাসতে পারলাম না। দুঃখিত।“


মন্তব্য করুন