Select Page

মনে রাখার মতো ‘সিন্ডিকেট’

মনে রাখার মতো ‘সিন্ডিকেট’

‘কাইজার’ দেখার পর ভেবেছিলাম, এই ঈদে এটাই সেরা কনটেন্ট। তবে চরকির ‘সিন্ডিকেট’ দেখে আমি চূড়ান্ত রকমের দ্বিধাগ্রস্ত এখন। দুই দিনের ব্যবধানে আফরান নিশো যেন দুটি আলাদা পৃথিবীর মানুষের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন।

একই লুকে বা ভঙ্গিমায় আমরা যারা বহু টিভি নাটকে নিশোকে দেখতে দেখতে ক্লান্ত, তারাই ওয়েব প্লাটফর্মে নিশোর পারফরম্যান্স, ভ্যারিয়েশন আর লুক নিয়ে কথা বলছি।

শিহাব শাহীনের ‘আগস্ট ১৪’ কিংবা ‘মরীচিকা’ দুইটাই অল্প বা বিস্তৃত পরিসরে সত্য ঘটনার প্লটে নির্মিত সিরিজ। সমসাময়িক দর্শকরা দেশে ঘটে যাওয়া দুই ঘটনার সাথে সিরিজ দুটিকে কানেক্ট করতে পেরেছে অনায়াসে। তবে ডিজাইন, স্ক্রিনপ্লে আর মেকিং সবমিলিয়ে আমি ‘সিন্ডিকেট’কেই শিহাব শাহীনের সেরা সিরিজ বলব।

ওয়েব প্ল্যাটফর্ম এখন বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু আর চোখের সামনে পেছনে ঘটে যাওয়া গল্পের সাহসী নির্মাণের জায়গা হয়ে উঠেছে। আর তাতে প্রতিনিয়ত হাত পাকা করে চলেছেন শিহাব।

সাত পর্বের এই সিরিজের গল্প সহজভাবে বলতে গেলে দুটি আলাদা সম্পর্ক, আবেগ আর পরিস্থিতির কথা বলতে হয়। একদিকে এখানে আছে ব্যাংক অফ বেঙ্গলে কর্মরত জিশা ও তার প্রেমিক আদনানের ব্যক্তিগত জীবন আর অন্যদিকে আছে এক গোপন সিন্ডিকেটের ভয়ংকর বেড়াজালে আটকে পড়ার গল্প। যে বেড়াজাল ছিঁড়ে শুধু জিশা না, বের হতে পারি না আমি আপনি বা অন্য কেউ।

আদনান জিশার কলিগ, আইটি সেকশনে বসে। সে আর দশজনের মত স্বাভাবিক না। এসপার্গাস  সিনড্রোম তাকে ব্যতিব্যস্ত রাখে, খুব কাছের মানুষ বাদে সে অন্য কারো আচরণ, স্পর্শ এত সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে না। জিশা আর আদনান একে অন্যের নির্ভরতায় বিয়েও করতে চায়। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা আলাদা করে দেয় জিশাকে। উলটপালট হয়ে যায় আদনানের জগত। কে, কারা কেন জিশাকে সরিয়ে দিলো আর আদনানই বা কী করে জিশার বলে যাওয়া কথা ধরে সত্য উন্মোচন করবে সেটাই সিরিজের টাইমলাইন। আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার এক নিগূঢ় সত্যও দেখতে পাওয়া গেছে ‘সিন্ডিকেট’-এ।

সিরিজে একই ব্যাংকে কর্মরত স্বর্ণাকেও দেখা গেছে, যাতে অভিনয় করেছেন তাসনিয়া ফারিণ। একের পর এক চরিত্রে চমক দেখানো নাসিরুদ্দিন খান, রাশেদ মামুন অপু, সমু চৌধুরী, এলিনা শাম্মী, শতাব্দী ওয়াদুদসহ এখানে অভিনয় করেছেন আরো অনেকেই। তবে সব আলো যেন কেড়ে নিয়েছেন মূল চরিত্রে অভিনয় করা আদনান আর জিশার চরিত্রে নিশো ও জিশা।

নিশো পুরোপুরি মানসিকভাবে অসুস্থ এক যুবকের চরিত্রে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। চাহনি, ডায়লগ ডেলিভারি, ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন আর সাদাত হোসাইনের ‘কাজল চোখের মেয়ে’ কবিতার আবৃত্তি সবখানেই সে আদনানকে ধারণ করতে পেরেছে।

তুষি স্ক্রিনে থাকাটা আনন্দের, তার আবেগী মুহূর্তগুলো ভায়োলিনের সুরে ভাবিয়েছে বারবার। তাসনিয়া ফারিণের অভিনয় কর্পোরেট হিসাবে দারুণ হলেও গল্পে তার ভূমিকা বাড়তে দেয়া হয়নি।

গল্পের শেষে রহস্য উন্মোচনে তাড়াহুড়া যেমন ছিল, তেমনি মাঝের কয়েকটি পর্বে গল্প এক জায়গায় থেমেও গেছে মনে হয়েছে। আদনান আর জিশার কেমিস্ট্রি দেখাতে নির্মাতা খুব ধীরলয়ে সময় নিয়েছেন। তবে শেষপর্বে আশানুরূপ এন্ডিং পেয়েছি।

শিহাব শাহীন তার মত করে একটা ইমোশনাল গল্পের সাথে ব্লেন্ড করেছেন সমসাময়িক ইস্যু, যেটা অনেক ফাস্ট পেস দর্শকের ভালো নাও লাগতে পারে। তবে সিরিজ হিসাবে ‘সিন্ডিকেট’ অবশ্যই এই ঈদের ছুটির সময়টায় দেখবার মত কনটেন্ট।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

Graduated from Mawlana Bhashani Science & Technology University. Film maker and writer.

১ টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন