মন পুড়িয়েছে ‘স্বপ্নজাল’
স্বপ্নজাল
পরিচালনা : গিয়াস উদ্দিন সেলিম
অভিনয়ে : পরী মনি, ইয়াশ রোহান, ফজলুর রহমান বাবু, ইরেশ যাকের, শিল্পী সরকার অপু, শহীদুল আলম সাচ্চু, ফারহানা মিঠু, মিশা সওদাগর, শাহেদ আলী, শাহানা সুমী, মুনিয়া ইসলাম, নরেশ ভুঁইয়া. খালেকুজ্জামান, কাজী উজ্জ্বল, আহসানুল হক মিনু।
রেটিং : ৪/ ৫
‘বুকের ভেতর নোনা ব্যাথা, চোখে আমার ঝরে কথা/ এপার ওপার তোলপাড় একা/ যাও পাখি বলো তারে, সে যেন ভোলে না মোরে’-‘স্বপ্নজাল’ দেখবার ঠিক আগ মুহূর্তে অবচেতন মনেই গুণ গুণ করে ‘মনপুরা’র গান গাইছিলাম। বুঝতে পেরে নিজেই বোকা বনে গেলাম। কী আশ্চর্য! ৯ বছর আগে মুক্তি পাওয়া গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ১ম চলচ্চিত্রের গান তার ২য় চলচ্চিত্র দেখবার আগে গুণগুণ করে গাওয়াটা একদিক দিয়ে শুভ নয়।
‘মনপুরা’র গান যেমন বছরব্যাপী দর্শকদের মুখস্থ করে প্রেক্ষাগৃহে পাঠানো হয়েছিল, ‘স্বপ্নজাল’-এর গান ঠিক তার উল্টোটা। কণ্ঠস্থ করার সুযোগ দর্শক পেয়েছেন মাত্র একদিন। না চাইতেও স্বাভাবিকভাবেই ‘মনপুরা’ বনাম ‘স্বপ্নজাল’-এই তুলনার নিক্তিটা বার বার চোখের সামনে চলে আসছিল। এটা ঠিক, ‘আগুনের পরশমনি’র সাথে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’-এর তুলনা চলে না। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া একই বছরের দুই সেরা ছবি ‘অজ্ঞাতনামা’র সঙ্গে ‘আয়নাবাজি’র তুলনা চলে না। ‘মনপুরা’র সাথেও ‘স্বপ্নজাল’-এর তুলনা করা উচিত নয়।
তবে যদি তুলনা আসে, সেটিও অস্বাভাবিক নয়। দর্শক মনে প্রশ্ন, ‘মনপুরা’ যেমন মন পুড়িয়েছিল, ‘স্বপ্নজাল’ কি স্বাপ্নিক আবেশ তৈরি করে ভালোবাসার নতুন জালে আমাদের বন্দী করতে পারবে? এ ক্ষেত্রে আমার উত্তর ইতিবাচক। হ্যাঁ, ‘স্বপ্নজাল’ পেরেছে আমার স্বপ্ন দেখার জালটা আরো বিস্তৃত করতে। মনটা এত ‘ভয়ংকর’ ভাবে পুড়েছে যে, ২ ঘন্টা ২০ মিনিটের শুভ্রা-অপু’র গল্প শেষ হবার পরও ঠায় বসে ছিলাম প্রেক্ষাগৃহের রঙিন আসনে। আবেগের ডুবসাঁতারে খেই হারিয়ে অস্ফুটে বলে উঠছিলাম-এমন চলচ্চিত্রই তো দেখতে চেয়েছি!
‘মনপুরা’র মত ‘স্বপ্নজাল’-এও চেনা-জানা এক গল্প আছে। এই গল্প স্বমহিমায় উজ্জ্বল হলেও ছবির প্রধান নায়ক আমি বলবো চারজনকে: নির্মাতা ও গল্পস্রষ্টা গিয়াস উদ্দিন সেলিম, অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু, চিত্রনায়িকা পরী মনি এবং চিত্রগ্রাহক কামরুল হাসান খসরু। গিয়াস উদ্দিন সেলিম চাইলেই তার দ্বিতীয় ছবিতে মাথার ওপর দিয়ে যাওয়া নতুন ভাষা সৃষ্টি করার কোনো গল্প শোনাতে পারতেন। কিন্তু ‘স্বপ্নজাল’-ছবিতে তিনি নতুন কিছু প্রমাণ করতে চাননি। শুধুমাত্র একটি স্বচ্ছ, নিটোল, একদম পানির মত গল্প শোনাতে চেয়েছেন। নদীতে, চোখে, মনের গহীনে সবখানে শুধু টালমাটাল পানি। নদী ও তার চারপাশকে সিনেমার ক্যানভাস হিসেবে ব্যবহারে সেলিমের জুড়ি নেই। ‘মনপুরা’র মত এ ছবিতেও নদীর বয়ে চলার সঙ্গে জীবনের বয়ে চলাকে তিনি এক করেছেন দারুণ দ্যোতনায়।
মফস্বলের দুই কৈশোরোত্তীর্ণ তরুণ-তরুণীর ল্যান্ডফোনের দিনগুলোর আবেগ, অনুভূতি, অবুঝ প্রকাশভঙ্গি স্বস্তি দিয়েছে এই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যপ, ভাইবার, হ্যাকিং, সেলফি’র অস্থির সময়ে। ল্যান্ডফোনের একটি কল কিংবা ডাকপিয়নের একটি চিঠি যে কতটা আরাধ্য হতে পারে- এই আবেগ তো এখন প্রায় বিলুপ্ত। সেই সোনালী অতীতের নিটোল প্রেম বার বার ছুঁয়ে গেছে আমার মন। কড়া নেড়েছে আমার মনন। চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীর তীরবর্তী একটি এলাকার দুই মৎস্য ব্যবসায়ীর দ্বন্দ্ব এবং পরবর্তীতে গুম, হত্যা, সম্মান ও মর্যাদার স্নায়ুযুদ্ধ-এটিই ‘স্বপ্নজাল’ ছবির মূল গল্প। মাঝে দুই ধর্মের দুই অবুঝ প্রেমিক মন সমাজের চিরাচরিত শেকলের যাতাকলে পিষ্ট হয়। কিন্তু মানুষ মারা গেলে কি প্রেমও মরে যায়? যায় না! শুভ্রা এবং অপুর গল্পও ঠিক তেমনই। তাদের গল্প শুনে, অপরিপক্ক বয়সের সরল অনুভূতি শুনলে বুক ভেঙে যায়। তবে চোখ ভরে মুগ্ধতায়, ভালোবাসায়।
হিন্দু-মুসলিমের চিরায়ত পটভূমির মাঝে নির্মাতা সেলিম চাঁদপুর, কলকাতা আর কিছুটা সময় আগরতলাকে সুচিন্তিতভাবে সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে দেখিয়ে আমাদের মুগ্ধ করেছেন। যেমন: চাঁদপুর ছেড়ে শুভ্রার কলকাতা যাবার সময় অপুর সাথে বিদায়ের দৃশ্য, যাবার আগে শুভ্রার ভাইয়ের খাঁচার পাখি দিয়ে যাবার দৃশ্য, দুই দেশের দুই প্রান্তে বসে চিঠিতে সমস্বরে একই আবেগ ঠিকরে বের করার দৃশ্য, মৃতদেহকে চিতায় পুড়িয়ে ফেলার দৃশ্য, আয়নাল গাজীর পরিণতির দৃশ্য, আল অ্যারাবিয়া লঞ্চ থেকে অপুর ধর্মের বাধাকে অতিক্রম করে এগিয়ে যাবার দৃশ্য-পুরো ছবিতে মুগ্ধ হবার মত দৃশ্যের অভাব নেই। কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ দৃশ্যও চিত্রগ্রাহক কামরুল হাসান খসরু আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন কবিতার মত করে। রূপসী বাংলা, আমার বাংলাদেশ যে কত সুন্দর দুই চোখ ভরে আবারো দেখলাম ‘স্বপ্নজাল’-এ। নৌকা, দিন, রাত, বৃষ্টি, চর, রেললাইন, নীরবতা-সব কিছুই স্বপ্নের অনুষঙ্গ হয়ে জাল বিছিয়েছে আমাদের মনে। একেকটি দৃশ্য যেন একেকটি পেইন্টিং। ক্যামেরার কবি কামরুল হাসান খসরু এ ছবিতে তার সেরা কাজ উপহার দিয়েছেন।
সংলাপে ‘স্বপ্নজাল’ বেশ এগিয়ে। পরী মনি’র কণ্ঠে ‘আমার মনটাকে তোমাকে কাছে রেখে গেলাম, মনটাকে মোর বসতে দিও, মুড়ি মুড়কি খেতে দিও। জলের গ্লাস দেয়ার ছলে একটু শুধু ছুঁয়ে দিও’ প্রত্যক্ষ করার পর মনের অজান্তে চোখ ঘোলা হয়ে গেছে। অবুঝ কিশোরের কণ্ঠে, ‘মা, বাবার নতুন বৌকে কি বলে ডাকবো?’ কিংবা শুভ্রার কণ্ঠে, ‘পিয়ন কাকুকে চিঠির বান্ডেল হাতে দেবদূতের মত লাগে’ কিংবা ‘প্রেম তো অমর, মরলেই বা কি?’/ ‘খুনের অভিজ্ঞতার জন্য খুনের অভিনয় করতে হবে?’ কিংবা আয়নাল গাজীর সেই বিখ্যাত সংলাপ-‘অপু না?? আব্বায় কই???’-এক রঙিন সুতোয় আমাদের বেধে রেখেছিল পুরোটা সময়।
তবে ‘স্বপ্নজাল’ ছবির সবচাইতে বড় প্রাপ্তি অভিনয়শিল্পীদের অভিনয়। আর কিছু ভালো না লাগলেও শুধুমাত্র ফজলুর রহমান বাবুর অভিনয় প্রত্যক্ষ করার জন্য হলেও সব শ্রেণীর সব দর্শকের ‘স্বপ্নজাল’ দেখাটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অবিশ্বাস্য, অদ্ভুত, অপ্রতিদ্বন্দ্বী-এসব শব্দও কম পড়বে বাবুর অভিনয়ের মূল্যায়ণ করতে গিয়ে। ‘অজ্ঞাতনামা’ দেখে মনে হয়েছিল ফজলুর রহমান বাবু এর চেয়ে ভালো অভিনয় কি আর কখনো করতে পারবেন? ‘স্বপ্নজাল’ দেখবার পর মনে হয়েছে-এটি শুধু বাবুর অভিনয়জীবনের সেরা অভিনয় নয়, বাংলা চলচ্চিত্রের খল চরিত্রের অন্যতম সেরা অভিনয়, সেই সঙ্গে বিশ্ব সিনেমার সেরা অভিনয়ের একটি। বাবু যতবার বলেন-‘অপু না?? আব্বায় কই?’-দর্শক হাসেন। একজন খল চরিত্রও যে হাসাতে পারেন, বাবু আবারো সেটি দেখিয়ে দিয়েছেন। ফজলুর রহমান বাবুকে ভুলিয়ে দিয়ে বাবুর আয়নাল গাজী হতে পারা, অভিব্যক্তি, সংলাপ বলার ভঙ্গি, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, ম্যানারিজম-সবকিছুর জন্য অভিনয়ের সর্বোচ্চ সম্মান, পুরস্কার পাবার যোগ্যতম নাম ফজলুর রহমান বাবু।
যদিও ‘স্বপ্নজাল’ ছবির শক্তি বাবু একা নন, এ ছবির প্রাণ শুভ্রা; মূলধারার বানিজ্যিক ছবির নায়িকা পরী মনি যে চরিত্রে রং ছড়িয়েছেন। ‘স্বপ্নজাল’-এর স্বপ্ন তো পরী মনিই। তিনি ব্যর্থ হলে পুরো ক্যানভাসটিই ব্যর্থ হতো। তবে পরী মনি হতাশ করেননি। খুব সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে নতুন ইতিহাস গড়েছেন। একজন গুণী নির্মাতার হাতে পড়লে চরিত্রের প্রতি সৎ, আন্তরিক একজন অভিনয়শিল্পী যে কোথায় পৌছে যেতে পারে, পরী মনিকে দেখে বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছি। তিনি এ ছবিতে ভীষণ বাস্তববাদী। বৃষ্টি আহ্বান করলে তা তা থৈ থৈ নৃত্যে তার পা নাচে। ভালোবাসার উষ্ণতায় কাশফুলের শুভ্রতায় হারিয়ে যায়। নৌকায় ঘোরে, পানিতে দুষ্টুমি করে, বাইকের পেছনে বসে থেকে প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেয়, হারিয়ে যায়-সব মিলিয়ে একজন অভিনেত্রীর জন্য ‘শুভ্রা’ স্বপ্নের চরিত্র। আর এ চরিত্রে পরী মনি ভুলিয়ে দিয়েছেন তার নায়িকা সত্তা। এ ছবিতে তিনি সাধারণ থেকেই অসাধারণ হতে পেরেছেন। শতভাগ ‘শুভ্রা’ হতে পেরেছেন। ‘অপু দা, বাবা কি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল?’ কিংবা ‘অপুদাকে বলো আমাদের বাসার সামনে আসতে’ কিংবা ‘জলের গ্লাস দেয়ার ছলে একটু শুধু ছুঁয়ে দিও’-পরিমনির কণ্ঠ ও সংলাপ প্রক্ষেপণ ছিল বুনো টিয়া পাখির মত। সৌন্দর্য, অভিনয়ে এত পরিমিত বোধ ইদানিংকালে অন্য কোনো বাংলা সিনেমায় দেখা যায়নি। এমনকি পরী মনিকেও এর আগে কোনো সিনেমায় এবং ভবিষ্যতেও ‘টেরাম টেরাম’ জাতীয় গানের সিনেমায় এতটা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, শক্তিশালী লাগবে কিনা সন্দেহ থেকেই যায়। ‘স্বপ্নজাল’ এর মত আরেকটি স্বপ্নের সিনেমা পরী মনি পাবেন কিনা-প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ স্বপ্নজাল ছবিতে শুধু পরী মনি কিংবা ফজলুর রহমান বাবুই নয়, তাদের যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন প্রায় সব অভিনয়শিল্পী।
ইরেশ যাকের যেমন ছোট্ট চরিত্রে তার জাত প্রমাণ করেছেন আরেকবার। সাত মাস দাড়ি না কামিয়ে, চরিত্রের প্রতি নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার সাধনা ফুটে উঠেছে প্রতিটি ফ্রেমে। যতবার ইরেশ পর্দায় এসেছেন, বুক চিড়ে বেরিয়ে এসেছে একটি শব্দ-‘ওয়াও’! শিল্পী সরকার অপু, শহীদুল আলম সাচ্চু, ফারহানা মিঠু, শাহেদ আলী-প্রত্যেকে আবারো এ ছবিতে প্রমাণ করেছেন অভিনয়ের ময়দানে তারাও পিছিয়ে নেই। ভীষণ শক্তিশালী একেকজন। মিশা সওদাগর স্বল্প উপস্থিতিতে আক্ষেপ বাড়িয়েছেন। মনে হয়েছে আরেকটু বেশি পর্দা উপস্থিতি থাকলে আমাদের মনের খিদে মিটতো। যতটুকু ছিলেন, তার বলিষ্ঠ পদচারণা ছিল মনোমুগ্ধকর। বিশেষ চরিত্রে মুনিয়া ইসলাম, শাহানা সুমী এবং অন্য সবাই (ওপার বাংলার অভিনেতারাও) ছিলেন জীবন্ত, বাস্তবিক।
নতুন নায়ক ইয়াশ রোহানকে নিয়ে ‘স্বপ্নজাল’ দেখবার আগে আমার কোনো প্রত্যাশা ছিল না। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, কিছুটা হতাশও হয়েছিলাম তখন। তবে ‘স্বপ্নজাল’-এর ভাঁজে ভাঁজে ইয়াশের ছেলেমানুষী, বয়স উপযোগী আবেগ, কণ্ঠস্বর ভীষণভাবে স্বস্তি দিয়েছে। কিছু দৃশ্যে ইয়াশের সাথে বলিউডের আলী ফজল-এর চেহারার মিল পেয়েছি। তবে প্রথমবার অভিনয়ে ইয়াশ আমার তরফ থেকে হাত তালি পেয়েছেন। পরী মনির সঙ্গে তার রসায়ন বাস্তবিক মনে হয়েছে। সঠিক পরিচর্যা এবং সঠিক নির্মাতার হাতে পড়লে ইয়াশ অনেক দূর যাবার যোগ্যতা রাখেন-এ ছবিতে তার ইঙ্গিত পেয়েছি।
‘স্বপ্নজাল’ ছবির আরো কিছু স্বপ্নদ্রষ্টা, যেমন: আবহ সংগীত পরিচালক, রূপসজ্জাকর, পোশাক পরিকল্পনাকারী, শব্দগ্রাহক, শিল্প নির্দেশক প্রত্যেকেই ছিলেন উজ্জ্বল। সম্পাদনা আরো নিখুঁত হতে পারতো। বিরতির পর অনেক দর্শকের কাছে ছবির গতি কিছুটা স্লথ মনে হলেও আমি বলবো, চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছুবার জন্য এই গতিটিও প্রয়োজন ছিল। বিশেষ করে ছবির শেষ পরিণতি ‘মনপুরা’ কিংবা ‘রোমিও জুলিয়েট’-এর মত না হওয়ায় আমি যারপরনাই মুগ্ধ হয়েছি। তবে একটি বিষয় নিয়ে আমার গুরুতর অভিযোগ, আর সেটি হলো ছবির সংগীত। ‘মনপুরা’ ছবির সবচাইতে বড় শক্তি সংগীত ‘স্বপ্নজাল’ ছবির সবচাইতে দুর্বল এবং অবহেলিত দিক। একটি রবীন্দ্র সংগীত ছাড়া এ ছবিতে রয়েছে তিনটি গান। তবে একটি গানও কানে লাগেনি। স্পর্শ করতে পারেনি মন। এত অসাধারণ চিত্রায়ণের একটি চলচ্চিত্রে অসাধারণ গান ‘স্বপ্নজাল’কে কোন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারতো! ভীষণভাবে হতাশ হয়েছি। যদিও ‘এমন করে বলছি’ গানের চিত্রায়ণে মুগ্ধ হয়েছি। স্বাপ্নিক আবেশে মন ডুবিয়েছি। তবে চোখ জুড়ালেও মন জুড়ায়নি। প্রেমের ছবিতে গানের ভূমিকাকে এতটা অবহেলা না করলেও পারতেন নির্মাতা।
অবশ্য চাঁদের কলঙ্ক না থাকলে সে চাঁদের সৌন্দর্যই বা কি? ৯ বছর পর বড় পর্দায় ফিরে এসে গিয়াস উদ্দিন সেলিম প্রমাণ করেছেন তিনি ফুরিয়ে যাননি। অবশ্যই ‘স্বপ্নজাল’ আরেকটি ‘মনপুরা’ নয়, তবে ভালো ছবির তালিকায় গিয়াস উদ্দিন সেলিমের এই দুটি চলচ্চিত্রই আমার তালিকায় থেকে যাবে আজীবন। স্বপ্নের জাল নতুন করে বিছিয়েছি, আশায় বুক বেঁধেছি এখন থেকে নিয়মিতভাবে নির্মাতা সেলিম আমাদের চমকে দেবেন। নতুন নতুন চলচ্চিত্র উপহার দেবেন। এমন স্বপ্ন তো আমরা দেখতেই পারি, তাই না?
*রিভিউটি সমকাল ১২ এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত।