মানুষের বোধকে নাড়া দেয়ার চেষ্টা করেছেন অমিতাভ
সহজ দৃষ্টিতে থ্রিলার কিন্তু নামের মর্যাদা রেখে সেখানে মানুষের বোধকে নাড়া দেয়ার চেষ্টা করেছেন অমিতাভ …
কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল তা বোঝার জন্য মানুষের ভেতরে যে বিষয়টা কাজ করে তাকে বিবেক বলে। বিবেক বেশ জটিল একটা বিষয়। সে যুক্তি-তর্ক দিয়ে ভাবে। বিশ্লেষণ করে। কিন্তু কোথায় যুক্তি দিতে হবে বা কোথায় ভুল আছে সেটা মানুষকে বা তার বিবেকের কাছে পৌঁছে দেয় তার নাম বোধ। এই জটিলতম বিষয়টি সহজ করে একটি গল্পের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী। বোধের মধ্য দিয়ে মানুষ যে তার পারিপার্শ্বকে সুন্দর করতে পারে এ কথাটি তিনি বুঝিয়েছেন তার আট পর্বের সিরিজের মধ্য দিয়ে।
অমিতাভ রেজা চৌধুরীর বোধে রহস্য আছে। কিন্তু রহস্য কেবল শুধু। তিনি শুরুর গল্পটারই আভাস দিয়েছেন। সেখানে অপরাধ আছে, ক্ষমতা আছে, নারী আছে, প্রেম আছে। যাপিত জীবনের খুব কাছের ঘটনা ও সে ঘটনার ওপাড়ে আরো কঠিন ও জটিল ঘটনা নিয়ে গল্পটি। সহজ দৃষ্টিতে থ্রিলার কিন্তু নামের মর্যাদা রেখে সেখানে মানুষের বোধকে নাড়া দেয়ার চেষ্টা করেছেন অমিতাভ।
শুরুটা হয় একজন জজের স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার মধ্য দিয়ে। পুরনো আসামীর চেহারা স্বপ্নে দেখতে গিয়ে তার মনে হয় তিনি রায় দিতে ভুল করেছিলেন। সেই বোধ থেকে শুধু হয় খোঁজ। আর খোঁজের মধ্য দিয়ে গল্প এগিয়ে গেলে তৈরি হয় নতুন নতুন রহস্য আর সময়ের সঙ্গে গল্পই সে রহস্য ভেদ করতে শুরু করে।
আট পর্বের এ সিরিজে অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, রুনা খান, সারাহ আলম, শাজাহান সম্রাট, রওনক আহমেদ, খায়রুল বাসার, অর্চিতা স্পর্শিয়া প্রমুখ। জজের চরিত্রে আফজাল হোসেনর অভিনয় দেখলে মনে হতে পারে তিনি এলোমেলো বা দুর্বল অভিনয় করছেন কিন্তু সময় গেলে বোঝা যাবে গল্পে তার চরিত্রটিরই বৈশিষ্ট্য ছিল তা। অর্থাৎ আফজাল হোসেন দুর্দান্ত। ভালো করেছেন সারাহ আলম আর ডিবি অফিসার এহসানের চরিত্রে নজর কাড়লেন সম্রাট। এই দুজনের রসায়নটা পর্দায় দেখতে বেশ ভালো লাগে। খায়রুল বাসার খুব কম সময় পেয়েছেন। স্পর্শিয়ার ক্ষেত্রেও তাই। তবে আরেকটি সিজন হলে দুজনেরই ফেরার সম্ভাবনা আছে।
রওনক হাসানকে নতুন করে আবিষ্কার করা যায় এ সিরিজে। বোধে তার খল চরিত্র ভালো লাগার মতো। কন্সট্রাকশন ব্যবসায় যে এ ধরনের মানুষ থাকে, এ ধরনের কারবার হয় সেটা অনেকেরই জানা। রওনক হাসানের চরিত্রে সেটা তো আছেই এর সাথে যেটা আছে তা হলো একটা ক্লাসিক ব্যপার। ওই, যেটা বললাম। কানের পাশে পাকা চুল, সোনালি ফ্রেমের চশমার এই লুকটা ক্লাসিক। এমনকি তার সিগারেটের ব্র্যান্ডও বেনসন। নব্বই দশকের ডনদের মধ্যে বিষয়টা ছিল। এমনকি ব্যবসায়ীদের মধ্যেও। এই ক্রেডিটটা অবশ্য অমিতাভ রেজা চৌধুরীর, ক্যারেক্টার ডিজাইন নিশ্চয়ই তার। রওনক হাসানের কৃতিত্ব হলো ওই চরিত্রে চমৎকারভাবে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া।
মানুষের লোভ তাকে অপরাধপ্রবণ করে ফেলে। সেই অপরাধের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় কিছু মানুষ। সংঘর্ষ অনিবার্য৷ কিন্তু এসবের মধ্য দিয়ে কখনো কখনো বলি হয়ে যায় খুব সাধারণ কোনো মানুষ। একজন বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ অফিসার কিংবা শিক্ষকদের মতো মানুষেরা যদি তাদের বোধ কাজে লাগিয়ে সমাজের এসব দিকগুলো বা নিজের চারপাশের অন্যায়গুলোর দিকে তাকান, কোনো পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করেন তাহলে সমাজের সঙ্কট কমতে পারে। অমিতাভ রেজা চৌধুরীর বোধ আমাদের এই বার্তাটি দিতে চায়। সেদিক থেকে এ সিরিজ অন্যান্য সিরিজের তুলনায় আলাদা হয়ে ওঠে।