
মান্নার বিকল্প আর আসবে না, সেই বিশ্বাসে ঝাঁকুনি দিলেন ‘ইনসাফের’ শরিফুল রাজ
সঞ্জয় সমদ্দারের পরিচালিত ‘ইনসাফ’ চলচ্চিত্রের বিশেষ শো-তে গিয়েছিলাম। সিনেমা দেখে বের হবার পর একজন বিখ্যাত নির্মাতা আমাকে প্রশ্ন করলেন ‘কী নিয়ে বের হলেন?’ আমি উনাকে আমার উত্তর দিয়েছি। তবে উনার প্রশ্নটা স্মার্ট ছিল। বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন ‘সিনেমা দেখে বেরিয়ে আপনি কী নিয়ে ফিরলেন?’ এই প্রশ্নটা আমাকে ঝাঁকি দিয়েছে। ভাবলাম, লিখি তবে।

সিনেমাটা ভালো। কেন ভালো, কোন কারণে ভালো, তা বলছি। তার আগে বলি, শুরু থেকে প্রায় চল্লিশ মিনিট চূড়ান্ত অগোছালো। বিশেষ করে এদেশের অন্যতম সুন্দরী এবং সেরা অভিনেত্রী ফারিণ এই সিনেমায় একটা ভুল সিদ্ধান্ত। এই চরিত্রের জন্য ফারিণ কিছুতেই যথাযোগ্য নয়। বিশেষ করে শরীফুল রাজকে রিমান্ডে নিয়ে তিনি যখন পেটাচ্ছিলেন, মনে হচ্ছিল খুনসুটি করে আঁচড় দিচ্ছেন ‘এই দুষ্টু তুই এত দুষ্টু কেন’ এরকম মিষ্টি করে হালকা মার দিচ্ছিলেন। আমি জীবনে কখনও এমন লিপস্টিক মার্কা রিমান্ড দেখি নাই। অথচ ফারিণ একজন অসাধারণ অভিনেত্রী।
মোশাররফ করিমের মতো এলিয়েন গোত্রের অভিনেতাকে যে চরিত্রে দেখানো হয়েছে, তাকে ভয়ানকের বদলে কমেডিয়ান লেগেছে। কস্টিউম ডিজাইনার এখানে মনোযোগ দিতে পারেন নাই।
শরিফুল রাজ ছাড়া সেরা চরিত্র ফজলুর রহমান বাবু। শুধু এক্সপ্রেশন ধরে রেখে তিনি দর্শককে স্তব্ধ করে দিয়েছেন অনেকবার।

মূল কথায় আসি, এই সিনেমা দেখে আমি কী পেলাম?
উত্তর: ইনসাফে শরিফুল রাজের দুর্ধর্ষ অভিনয় দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম মহানায়ক মান্না অভিনীত আম্মাজান, দেশদ্রোহী, ধর, কষ্ট, আব্বাজান, লুটতরাজ, তেজি, আমরা হয়তো আর কখনই দেখতে পারব না। কারণ, মান্নার বিকল্প আর আসবে না। সেই বিশ্বাসে ঝাঁকুনি দিলেন শরীফুল রাজ। একমাত্র শরীফুল রাজ হতে পারেন মান্নার ঘাটতি পূরণের অন্যতম খুঁটি। বানিজ্যিক সিনেমায় শরীফুল রাজ বিশেষ চরিত্রে মান্নার মতো একচ্ছত্র অধিপতি হতে পারেন। সেই সম্ভাবনা তিনি আগেও দেখিয়েছেন, ইনসাফেও দেখালেন। ইনসাফের পয়সা উসুল হবে শরীফুল রাজের অভিনয় দেখলে।
পয়সা উসুলের কথা আসতেই আরেকটু যোগ করা যায় ইনসাফের একটা গানের প্রসঙ্গে। হাবিব ওয়াহিদের গাওয়া ‘তোমার খেয়ালে’। তন্ময় পারভেজের লেখা আরাফাত মহসীন নিধির সুর ও সঙ্গীতে এই গানটা আসলেই স্পেশাল। নিধির চমক দেখেছিলাম তান্ডবে। গতকাল দেখলাম ইনসাফে। দারুণ একটা গান।
যে কারণে ইনসাফ সেরা হতে গিয়েও হতে পারলো না-
১. সেই যে কেজিএফ, এনিমেল, বরবাদের বহুমুখী নলা থেকে আগ ন বের হচ্ছে। এত প্রভাবিত কেন হতে হবে? ওইটুকু না থাকলে কী এমন ক্ষতি হতো?
২. আচমকা চঞ্চল চৌধুরীর আগমন। মনে হচ্ছে সাউথের বিক্রম দেখতে বসেছি। শেষ দৃশ্যে রোলেক্স। এই ধার করা প্লটের খেলা না দেখালেও ভালো হতো। সমস্যা ছিল না।
সবশেষে বলব, পর্যাপ্ত বাণিজ্যিক মসলা আছে। দেখলে সময় নষ্ট হবে না। শুভ কামনা সঞ্জয় সমদ্দার। আগামী সিনেমায় শতভাগ সফল হবেন, এ আশা করতেই পারি। জয় হোক। ভালোবাসা।