Select Page

মারা গেছেন সর্বাধিক জাতীয় পুরস্কারে পাওয়া চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান

মারা গেছেন সর্বাধিক জাতীয় পুরস্কারে পাওয়া চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান

নয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান আর নেই। শুক্রবার দিবাগত ১২টা ২৬মিনিটে তিনি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

শুক্রবার বিএফডিসিতে মাহফুজুর রহমান খানের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুরে পুরান ঢাকার শাহী মসজিদে জানাজা শেষে আজিমপুর গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে জানা যায়।

গত ২৬ নভেম্বর রাত দশটার দিকে খাবার খেতে গিয়ে ফুসফুসে খাবার ঢুকে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বজনরা তাকে রাজধানীর গ্রিনলাইফ হাসপাতালে নিয়ে যান। তারপর সেখানে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি। এরপর রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল তাকে।

মাহফুজুর রহমান খানের স্ত্রী ড. নিরাফাত আলম শিপ্রা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০০১ সালের ২৭ আগস্ট মারা যান। দাম্পত্য জীবনে তারা নিঃসন্তান ছিলেন। তাঁর বাসা চকবাজারের হাকিম হাবিবুর রহমান খান সড়কে। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে মাহফুজুর রহমান খান ছিলেন সবার বড়।

মাহফুজুর রহমান ১৯৪৯ সালে ঢাকার লালবাগে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম হাকিম ইরতিজা-উর-রহমান খান ছিলেন ব্যবসায়ী। তাঁর পৈতৃক বাড়ি লালবাগের চকবাজারের হাকিম হাবিবুর রহমান খান সড়কে। এই সড়কের নাম তাঁর দাদা হাকিম হাবিবুর রহমান খানের নামানুসারে করা হয়। তাঁর চাচা ই আর খান (ইরতিফা-উর-রহমান খান) ছিলেন গত শতকের ষাট থেকে আশির দশকে বাংলা চলচ্চিত্রের একজন খ্যাতনামা পরিচালক ও প্রযোজক। প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক এহতেশাম ও মুস্তাফিজ ছিলেন তাঁর ফুফাতো ভাই।

স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তিনি চিত্রগ্রহণে আগ্রহী হন। বাবার ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে তার চিত্রগ্রহণে হাতেখড়ি হয়। চিত্রগ্রহণ শেখার উদ্দেশ্যে তিনি প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক জহির রায়হানের ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ছবির সেটে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া রফিকুল বারী চৌধুরী ও আবদুল লতিফ বাচ্চুর কাছ থেকে চিত্রগ্রহণের বিভিন্ন বিষয় শিখেছেন।

মাহফুজুর রহমান খান ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক আবদুল লতিফ বাচ্চুর শিষ্য। তাঁর অধীনে সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে ১৯৭০ সালে ‘দর্প চূর্ণ’ ও ১৯৭১ সালে ‘স্বরলিপি’ চলচ্চিত্রে কাজ করেন। প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে তাঁর প্রথম কাজ আবুল বাশার চুন্নু পরিচালিত ‘কাচের স্বর্গ’ (১৯৭২)। একই সময় তিনি আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘জল্লাদের দরবার’ (১৯৭২), আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘আমার জন্মভূমি’ (১৯৭৩), মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘আলোছায়া’ (১৯৭৪), নুর-উল-আলম পরিচালিত ‘চলো ঘর বাঁধি’ (১৯৭৪), দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত ‘দাবি’ (১৯৭৪), সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া পরিচালিত ‘একালের নায়ক’ (১৯৭৫) চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অসংখ্য ছবিতে চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন মাহফুজুর রহমান খান।

রাজ্জাক পরিচালিত ‘অভিযান’ (১৯৮৪) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক বিভাগে মাহফুজুর রহমান খান প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। পরে আজহারুল ইসলাম খানের ‘সহযাত্রী’ (১৯৮৭), আখতারুজ্জামানের ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ (১৯৯৬), হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ (১৯৯৯), ‘দুই দুয়ারী’ (২০০০), ‘আমার আছে জল’ (২০০৮) ও ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ (২০১২), কোহিনূর আক্তার সুচন্দার ‘হাজার বছর ধরে’ (২০০৫), গোলাম রাব্বানী বিপ্লবের ‘বৃত্তের বাইরে’ (২০০৯) চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি আটবার বাচসাস (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি) পুরস্কার এবং একবার ‘হাজার বছর ধরে’ (২০০৫) ছবির জন্য বিশেষ বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার পেয়েছেন। আরও পেয়েছেন এম আবদুস সামাদ স্মৃতি সম্মাননা (২০১৫)।


মন্তব্য করুন