Select Page

‘মাসুদ রানা’ না দেখেই চলে গেলেন কাজী আনোয়ার হোসেন

‘মাসুদ রানা’ না দেখেই চলে গেলেন কাজী আনোয়ার হোসেন

কয়েক বছর ধরে ‘মাসুদ রানা’ নিয়ে তোলপাড় করছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। কিন্তু চরিত্রটি নতুন করে পর্দায় ওঠার আগেই মারা গেলেন স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

বুধবার বিকেলে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন, বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন এ লেখক-প্রকাশক। তার পরিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

কাজী আনোয়ার হোসেনের পুত্রবধূ মাসুমা মাইমুর এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘নিভে গেছে দীপ জনমের তরে, জ্বলিবে না সে তো আর। দূর আকাশের তারা হয়ে গেছে আমার ছেলেটা। আমার ছোট্ট ছেলেটা। আর কোনোদিনও আমার পিছু পিছু ঘুরে খুঁজবে না মায়ের গায়ের মিষ্টি গন্ধ। কোনোদিনই না। কিন্তু মাকে ছেড়ে থাকবে কীভাবে ওই অন্ধকার ঘরে আমার ছেলেটা? একা, শুধু একা? কী সব বকছি জানি না। আব্বা (কাজী আনোয়ার হোসেন) আর নেই। চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। ’

লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। তার পুত্রবধূ জানান, গত ৩১ অক্টোবর প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের। মাঝে পাঁচ বার হসপিটালাইজড ছিলেন। চিকিৎসার সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায়নি। একটা ব্রেন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হয়ে সব শেষ হয়ে গেল। ১০ জানুয়ারি থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন এ লেখক-প্রকাশক।  তার বাবা বিখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ, শিক্ষক ও লেখক কাজী মোতাহার হোসেন।

সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার হিসাবে তিনি ষাটের দশকের মধ্যভাগে মাসুদ রানা নামক গুপ্তচর চরিত্রকে সৃষ্টি করেন। এর কিছু আগে ‘কুয়াশা’ নামক আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র তার হাতেই জন্ম নিয়েছিল। বিদ্যুৎ মিত্র ও শামসুদ্দীন নওয়াব ছদ্মনামেও বই লিখেছেন তিনি।

কাজী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন মারা গেছেন ২০১৫ সালে। তিনি এক মেয়ে ও দুই ছেলে রেখে গেছেন।

কাজী আনোয়ারের অধিকাংশ উপন্যাস ও গল্প বিদেশী কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে রচিত। তবে মৌলিক রচনা রয়েছে বেশ কিছু। বিশেষ করে মাসুদ রানা ও কুয়াশা সিরিজের প্রথম দিকের বইগুলো মৌলিক রচনা। এরপর তার নামে অন্য লেখকেরা সিরিজগুলো চালু করেন, তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৬ সালে ‘ধ্বংস পাহাড়’ দিয়ে বিখ্যাত মাসুদ রানা সিরিজের আবির্ভাব। গোয়েন্দা চরিত্র মাসুদ রানা বাংলাদেশের কয়েক প্রজন্মের অবসর সঙ্গী। এ সিরিজের পাঁচ শতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে।

পেপারব্যাক বইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রকাশনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন কাজী আনোয়ার হোসেন। তার সেবা প্রকাশনী থেকে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার জন্য নানান স্বাদের বই প্রকাশ হয়েছে। তিন গোয়েন্দা, রোমান্টিক, থ্রিলার, অনুবাদ, ওয়েস্টার্ন, ইসলামীসহ নানান সিরিজ প্রকাশ হয়েছে এ প্রকাশনী থেকে। এ ছাড়া কিশোর পত্রিকা ও রহস্য পত্রিকা নামের দুটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন কাজী আনোয়ার হোসেন। মাসুদ রানাকুয়াশা সিরিজ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে সিনেমা।

এক সময় গানে নিয়মিত ছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেন। পরে লেখালেখি ও প্রকাশনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।


মন্তব্য করুন