মাহফুজ আহমেদ: সেরা পাঁচ
ধারাবাহিক নাটক:
১. নুরুলহুদা সিরিজ: বাংলা নাটকে যে কয়েকটি চরিত্র স্বমহিমায় উজ্জ্বল,তার মধ্যে এটি অন্যতম। অভিনেতা হিসেবে মাহফুজ আহমেদের যে অনেকদিন শীর্ষস্থানে ছিলেন তার সবচেয়ে বড় প্রভাবক ছিল এই চরিত্রটি। ২০০৪ সালে প্রথম অরন্য আনোয়ারের পরিচালনায় বিটিভিতে প্রথম প্রচারিত হয়েছিল ‘নুরুলহুদা একদা ভালোবেসেছিল। প্রথম কিস্তির ব্যাপক জনপ্রিয়তার পর আবার নির্মিত হয় ‘অত:পর নুরুলহুদা’। এরপর অরণ্য আনোয়ারের সঙ্গে নিজে যৌথভাবে নির্মান করেন দীর্ঘ ধারাবাহিক ‘আমাদের নুরুলহুদা’। এই চরিত্রে তিনি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন যে দর্শক জরিপে তিনি চারবার মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছিলেন।
২. চৈতা পাগল: আরেকটি অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র,আবার তিনি নাম ভূমিকায়। তবে তিনি শুধু এই ধারাবাহিকে অভিনেতাই ছিলেন না, নির্মাতাও। বৃন্দাবন দাসের রচনায় এই নাটকে তিনি চৈত্র মাসে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যাওয়ার অভিনয় করেছিলেন, সঙ্গে ছিল নানান ঘটনাপ্রবাহ। এটিই ছিল মাহফুজ আহমেদ অভিনীত সর্বশেষ জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক।
৩. জনক: অরণ্য আনোয়ারের সঙ্গে মাহফুজ আহমেদের রসায়ন ছিল সব সময় ই ছিল চমৎকার,যার দারুন সূচনা ছিল এই ধারাবাহিকটি। নিজের পিতৃ পরিচয়ের খোঁজে আসা এক যুবকের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। দারুণ সমাদৃত হয়েছিলেন,হুমায়ুন ফরিদীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছিলেন। আরো ছিলেন ঈশিতা, মীর সাব্বির, বিজরীরা।
৪. ৫১বর্তী: আনিসুল হকের রচনায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নির্মাণে অত্যন্ত এই জনপ্রিয় নাটকে পরিবারের মেজ ছেলে প্রফেসরের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময়ের জন্য এটিও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. পান্থজনের সখা: ক্যারিয়ারের প্রথমদিকের কাজ। নির্মাতা ফেরদৌস হাসানের কাছে গিয়েছিলেন অভিনয়ের জন্য, স্ক্রিপ্ট পছন্দ হলে প্রযোজক হয়ে যান মাহফুজ আহমেদ, বিপরীতে পেয়ে যান তখনকার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সারকে। বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।
একক নাটক ও টেলিফিল্ম:
১. শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই: বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি করা বখাটে যুবকের এক মেধাবী ছাত্রীর প্রতি একপাক্ষিক ভালোবাসা ও তার করুণ পরিনতি নিয়ে বুলবুল আহমেদের এই নাটকে অভিনয় করে নব্বই দশকে রীতিমতো আলোচনায় চলে আসেন মাহফুজ আহমেদ, অভিনয়ে দারুণ প্রশংসিত হন। বিপরীতে ছিলেন তৎকালীন সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত
২. এই বৈশাখে: হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে পরপর কয়েকটি কাজের জন্য দর্শক মহলে বিশেষ পরিচিতি পান মাহফুজ আহমেদ, দুইজনের মধ্যে ছিল হৃদ্যতা সম্পর্ক। এই জুটির অনেকগুলো নাটকের মধ্যে অন্যতম সেরা এই নাটকটি। বিচ্ছেদে হতাশাগ্রস্ত এক ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, বিপরীতে ছিলেন অপি করিম।
৩. দেবদাস: বিখ্যাত উপন্যাসের বিখ্যাত চরিত্র। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সৃষ্ট এই চরিত্রের প্রতি মাহফুজ আহমেদের ছিল দারুণ আগ্রহ। অবশেষে এই চরিত্রে সুযোগ করে দেন নামক একজন নির্মাতা। প্রচারের পরেই বেশ আলোচিত হয়, টিভি নাটকে সেইই একমাত্র দেবদাস হয়েছেন। বিপরীতে ছিল তারিন ও তানিয়া আহমেদ।
৪. লীলাবতী: এক দম্পতির গল্প,পৃথিবীতে আসবে তাদের প্রথম সন্তান। অনাগত এই সন্তান নিয়ে তাদের অধীর আগ্রহ কিন্তু এই আগ্রহ, আকাঙ্ক্ষার কি সফল পরিণতি ঘটবে! হুমায়ূন আহমেদের রচনায় শাওনের পরিচালনায় মাহফুজ আহমেদের বিপরীতে ছিলেন জয়া আহসান।
৫. লেখকের মৃত্যু: হতাশাগ্রস্ত এক বিখ্যাত লেখক নিজের জীবনের উপর বিতৃষ্ণার জন্য জন্মদিনের রাতেই আত্বহত্যার সিদ্ধান্ত নেন, সেই সময় হঠাৎ বাসায় আসে এক নারী ভক্ত, তারপর ঘটতে থাকে নানা ঘটনা। হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় এই নাটকে আরো ছিলেন শাওন, এস আই টুটুল।
পরিচালনা প্রিয় পাঁচ:
১. খেলা: হুমায়ূন আহমেদের রচনায় একজন শিক্ষকের জীবনের নির্মম গল্প নিয়ে দুর্দান্ত এই টেলিফিল্ম বানিয়েছিলেন মাহফুজ আহমেদ। নির্মাতা হিসেবে তিনি কতটা প্রতিভাবান তা প্রমান মিলে এই টেলিফিল্মে। এক কাজেই সামলিয়েছেন আবুল হায়াত, মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, সুমাইয়া শিমু, চ্যালেঞ্জার, এটিএম শামসুজ্জামান, আমিরুল হক চৌধুরীদের মত অভিনয়শিল্পীদের।
২. বনলতা সেন: মুহম্মদ জাফর ইকবালের রচিত এই গল্পের পটভূমি নিজের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার অনুপ্রেরণা। এই গল্পের দারুণ চিত্রনাট্য ও নির্মান সাজিয়েছিলেন মাহফুজ আহমেদ। মুখ্য ভূমিকায় মোশাররফ করিমকে দারুণ চরিত্র দিয়েছিলেন, আরো ছিলেন রিচি সোলায়মান, হাসান মাসুদ।
৩. কেবলই রাত হয়ে যায়: মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া এক ছাত্রের গল্প। অন্যান্যদের থেকে বেশ আলাদা, তবে সবাই পছন্দ করে। একদিন জানা যায় অন্য রহস্য। কাউসার খানের রচনায় এই দারুন টেলিফিল্মটি নির্মাণ করেন মাহফুজ আহমেদ। প্রধান চরিত্রে অ্যালেন শুভ্রর সেরা অভিনয় সঙ্গে রিচি সোলায়মান, রুপন্তী, মাজনুন মিজান, সাঈদ বাবুরা।
৪. হ্যালো বাংলাদেশ: অষ্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক তরুনী এসেছে নোয়াখালীর এক গ্রামে,তাকে ঘিরে ঘটতে থাকে নানান ঘটনা,শেষে জানা যায় অন্য গল্প। মাহফুজ আহমেদের নির্মাণে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিফিল্ম। মুখ্য চরিত্রে রুপন্তী বেশ জনপ্রিয়তা পান, সঙ্গে রিচি সোলায়মান ও নির্মাণের পাশাপাশি মাহফুজ আহমেদ ও ছিলেন অভিনয়ে।
৫. শেষের কবিতার পরের কবিতা: অসম প্রেম ও জনপ্রিয় ইংরেজি গান থেকে অনুপ্রানিত হয়ে আনিসুল হকের রচনায় এই টেলিফিল্মটি তখন বেশ জনপ্রিয় হয়। নির্মাতা হিসেবে মাহফুজ আহমেদ তখন ধীরে ধীরে আলোচিত হচ্ছেন,এর মাধ্যমে আরো বাড়িয়ে নেন। বিদ্যা সিনহা মীমের সেরা কাজ, সঙ্গে নোবেল।