মাহমুদ কলি : এক নায়ক ছিল
মাহমুদ কলি..
বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের স্বর্ণসময়ের উল্লেখযোগ্য নায়ক। নিজের সময়ে রাজত্ব করা অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক ছিলেন তিনি।
মূলনাম মাহমুদুর রহমান ওসমানী। নায়ক হবার সময় নাম বদলে হন মাহমুদ কলি। জন্ম ৭ এপ্রিল, ঢাকায়। ইংরেজি সাহিত্যে এম এ।
ঢালিউডের নামকরা অন্যতম প্রযোজক, পরিচালক আজিজুর রহমান বুলি তাঁর ভাই। ভাইয়ের পরিচিতি তাঁর জন্য সহযোগিতা করলেও তিনি নিজের আলাদা ইমেজ তৈরি করতে পেরেছিলেন।
১৯৯৭ সালে ‘তাহাদের কথা’ নামে একটি টিভি ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করেন। বর্তমানে টিভির জন্যই নাটক নির্মাণে আগ্রহী হতে দেখা গেছে তাঁকে।
তাঁর মোট অভিনীত ছবি – ৫০টি।
প্রথম ছবি ‘মাস্তান।’ প্রথম নায়ক ছিলেন ‘তুফান’ ছবিতে।
উল্লেখযোগ্য ছবি – মাস্তান, তুফান, পাহাড়ি ফুল, মহা গ্যাঞ্জাম, নেপালি মেয়ে, দেশ বিদেশ, লাভ ইন সিঙ্গাপুর, আপন ঘর, সমস্যা, বিধান, টক্কর, রাস্তার রাজা, রাস্তা, শ্বশুরবাড়ি, গৃহ বিবাদ, মতিমহল, রক্তের বন্দি, গ্রেফতার, গোলমাল, হিম্মতওয়ালী, নিশান, খামোশ, সন্দেহ, অবহেলা, মনের আগুন, সুপারস্টার, দয়ামায়া, রাণী চৌধুরাণী, প্রিয়তমা, নওজোয়ান, নবাবজাদী, নাগমহল, খেলার সাথী ইত্যাদি।
মাহমুদ কলির অভিনয় ছিল প্রাণবন্ত। লম্বা, সুদর্শন ছিলেন।
তাঁর নায়িকাদের মধ্যে শাবানা-র মতো লিজেন্ডও ছিলেন। এছাড়া ববিতা, অঞ্জু ঘোষ, অঞ্জনা, দিতি, নূতন-রা ছিলেন। মাহমুদ কলির জনপ্রিয় ছবির মধ্যে ‘মহা গ্যাঞ্জাম, পাহাড়ি ফুল, নেপালি মেয়ে, দেশ বিদেশ, রাস্তার রাজা, তুফান, লাভ ইন সিঙ্গাপুর, আপন ঘর’ অন্যতম।
শাবানার সাথে ‘দেশ বিদেশ’ ছবিতে তার পারফরম্যান্স চমৎকার। শাবানাকে পছন্দ না হওয়াতে ফেলে রেখে আসে বিদেশে। ঘটনাক্রমে শাবানাও যায় বিদেশে। সেখানে নাটকীয়তা তৈরি হয় দুজনের মধ্যে। ‘মহা গ্যান্জাম’ ছবিতে ববিতার সাথে বিয়ে হয় মাহমুদ কলির। বাবা আবুল হায়াত মাহমুদ কলি ও তার বোন অরুণা বিশ্বাসকে মাতাল অবস্থায় বিয়ের কাবিনে সই করায়। তারা নেশার ঘোরে সই করে ঘরে গিয়ে দেখে দুজনের দুইরকম পরিস্থাতি। মাহমুদ কলির ঘরে স্ত্রী ববিতা বসে আছে সাজানো বিছানায় আর ইলিয়াস কাঞ্চন পাগড়ি পরে অপেক্ষা করছে অরুণার। এ নিয়ে তুলকালাম শুরু হয় ভাইবোনের। বিভিন্ন ঘটনা ঘটতে থাকে। একসময় ববিতা ছদ্মবেশে আধুনিকা হয়ে গেলে মাহমুদ কলি তার প্রেমে পড়ে। এ ছবিতে একটি জনপ্রিয় গান আছে-‘চাক্কু মেরে এই কলিজায়/ বউ আমার পালায় পালায়।’ শিল্পী ছিল আইয়ুব বাচ্চু। ‘রাস্তার রাজা’ ছবিতে মাহমুদ কলি ও জনি ছিল বন্ধু। তাদের দুজনের পর্দা ভাগাভাগি জমত ভালো। ‘নেপালি মেয়ে’ খুবই জনপ্রিয় ছবি তার। জসিম ও মাহমুদ কলি প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যায় ছবিতে। বিখ্যাত ‘চিত্রালী’ পত্রিকায় ছবিটির জোর প্রচারণা হয়েছিল। ‘আপন ঘর’ অসাধারণ ফ্যামিলি ড্রামা ছিল তার। এ ছবিতে নূতনের বিপরীতে মাহমুদ কলির এ গানটি জনপ্রিয়-
‘ও তুই দে রে দে পরাণ আমার
ফিরাইয়া তুই দে
যে মরেছে ভালোবাসায় তারে মারিস নে।’
‘শ্বশুরবাড়ি’ জনপ্রিয় কমেডি ছবি তাঁর। এটিএম শামসুজ্জামানের সাথে তার সাধু ভাষার ডায়লগ ডেলিভারি ইন্টারেস্টিং ছিল।
‘রাস্তা’ ছবিতে মজার একটা সিকোয়েন্স ছিল। জাম্বু মাহমুদ কলিকে মারার জন্য হিস্যা নেয়। এরপর যে পথ দিয়েই যায় জাম্বু গিয়ে পথ আটকায়। জাম্বুর সাথে ফানি ডায়লগ বিনিময়ের পর ফাইটিং হয়।
মাহমুদ কলি বিভিন্ন ধরনের ছবিতে নিজের সক্ষমতা প্রমাণ করেছিলেন। বলতে গেলে পরিপূর্ণ নায়ক বলতে যা বোঝায় তিনি তাই ছিলেন।
দেশীয় চলচ্চিত্রে মহমুদ কলি একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে। রুচিশীল ছবির মধ্যে যাদের ছবি দর্শকের পছন্দের তালিকায় থাকে মাহমুদ কলি সে জায়গাটিতে থাকবেন।