Select Page

মিষ্টি মুখের নায়িকা নিপা মোনালিসা

মিষ্টি মুখের নায়িকা নিপা মোনালিসা

১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’-র মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসে নিপা মোনালিসা

দুজন নদীতে নৌকায় যেতে যেতে দুজনকে প্রেম নিবেদন করছে। নায়ক গাইছে— ‘তুমি আমার মনের মাঝি/ আমার পরাণ পাখি, আমার বাড়ি যাইও দিমু ভালোবাসা’। নায়িকা গাইছে— ‘তুমি আমায় পাগল কইরো না/ যামু তোমার বাড়ি, তোমার পায়ে মরিবার বাসনা রাখি’

দুজন দুজনকে প্রেম নিবেদনে গান শেষ হলে নদীর ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামবাসীও গান ধরে, ‘তুমি আমার মনের মাঝি’; তারপর দুজনই লজ্জায় লাল।

ছবির নাম ‘ঝিনুক মালা’। এ ছবির নায়িকা নিপা মোনালিসা। প্রথম ছবি ছিল এটাই এবং প্রথম ছবি দিয়েই তখনকার দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। নিপা মোনালিসা নামটাই সুন্দর। সুন্দর নামের সুন্দরী অভিনেত্রী। তার সৌন্দর্যটা ছিল খাঁটি বাঙালি গড়নের। তেমন কোনো বাহারী ব্যাপার -স্যাপার ছিল না তবে চেহারায় কিন্তু একটা মাধুর্য ছিল।

১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’-র মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসে। প্রথম ছবি ‘ঝিনুক মালা’।

উল্লেখযোগ্য ছবি – দুই জীবন, ভেজা চোখ, কোহিনূর, ডাকু ও দরবেশ, মা ও ছেলে, সন্ধি, অমর সঙ্গী, পরিবার, অশান্ত সংসার, সাজা, সোনার নাও পবনের বৈঠা, এক দুই তিন, বিবাদ ও অমর।

নায়করাজ রাজ্জাক বোন নিপা মোনালিসার জন্য গাইছেন— ‘ঝিলমিল ঝিলমিল করবে রাত/ মেহেদি রাঙা হবে হাত, একদিন মোদের দুয়ারেতে/ আসবে বারাত’

আদরের বোনকে স্বামীর ঘরে একদিন পাঠাতে  হবে ভেবে রাজ্জাকের মন কেঁদে ওঠে তাই গানের মাঝেই মুহূর্তেই তাঁর চোখ ভিজে যায়। আবার নিজেকে সামলে বলেন, ‘কপালগুণে আমার এ বোন করবে বাজিমাত’। বোন বাজিমাত করতে পারেনি কারণ ভাগ্যচক্রে তার ঠিকানা হয় বাইজিপাড়ায় সেখানে তাকে নাচতে হয়, মাতালরা তার দিকে তাকিয়ে থাকে কুদৃষ্টি নিয়ে। তখন বোন নিপা মোনালিসাও গায়— ‘ঝিলমিল ঝিলমিল করছে রাত/ মেহেদি রাঙা হলো হাত, প্রতিদিনই দুয়ারেতে আসে রে বারাত/ আসে রে বারাত’

একই গানের মধ্যে দুই চিত্রায়ণ। অসাধারণ এ গানে নিপা মোনালিসার অভিনয় অসাধারণ। ছবির নাম ‘সন্ধি’।

বুলবুল আহমেদের সাথে নিপা মোনালিসার কালজয়ী গান— ‘তুমি ছাড়া আমি একা/ পৃথিবীটা মেঘে ঢাকা, জীবন আমার পায় গো জীবন/ তুমি যখন দাও দেখা’

এ গানে তাকে খুবই মায়াবী দেখায়। বুলবুল আহমেদের মতো লিজেন্ডের সাথেও নিপা অত্যন্ত ন্যাচারাল অভিনয় করেছে এ গানে। ছবির নাম ‘দুই জীবন’। এ ছবির আরো একটি সুন্দর গানে নিপা ছিল যখন বুলবুল আহমেদ ও তার সন্তান গানটি গায়— ‘আব্বু আমার বন্ধু/ আম্মু খেলার সাথী, একটি ঘরে জ্বলে যেন/ তিনটি সুখের বাতি’

নিপা মোনালিসা জাত একজন অভিনয়শিল্পী। তাঁর সময়ের প্রতিষ্ঠিত সব অভিনেতাদের সাথে কাজ করেছে। রাজ্জাক, বুলবুল আহমেদ, ফারুক, ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না আরো আছে।

তাঁর ছবির ক্লাসিফিকেশন করলে শহর ও গ্রাম দুটোই মেলে। ‘দুই জীবন’ যেখানে শহুরে কালচারে প্রেম, বিয়ে, সংসার, মৃত্যু এসবকে দেখাচ্ছে তার বিপরীতে ‘ঝিনুক মালা’-তে ফোক কালচার তুলে ধরেছে অসাধারণভাবে। চমৎকার সুইটনেস থাকে তার সে গানে। ফারুকের সাথে দুষ্টুমির মুহূর্তগুলোতে তাকে ন্যাচারাল লাগে। বিশেষ করে গালে হাত দিয়ে ভেংচি কাটা, নৌকার দাঁড় টানা এসব খুব ন্যাচারাল। ‘ঝিনুক মালা’ রিমেক হয়েছিল টলিউডে। কালজয়ী ছবি ‘ভেজা চোখ’-এও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিল।

কম কাজ করেও যারা আমাদের চলচ্চিত্রে স্মরণীয় শিল্পী নিপা মোনালিসা তাদেরই প্রতিনিধি।


মন্তব্য করুন