
‘মুজিব’-এ অভিনয়ের জন্য অনুশোচনা করলে পেশার অপমান: নুসরাত ফারিয়া
অনেকেই বলে থাকেন ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় অভিনয়রের জন্য কটাক্ষের শিকার হয়েছেন অভিনেতারা। কিন্তু ঘটনা যে সবার ক্ষেত্রে সত্য নয়, বাস্তবতা থেকেই বোঝা যায়। বিশেষ করে, এ সিনেমায় অভিনয়ের কারণে ক্ষমতাসীন বলয়ে অন্তর্ভুক্ত মনে করা তারকারা ভুগছেন বেশি। যেমন; আরিফিন শুভ। এছাড়া ‘শেখ হাসিনা’ চরিত্রে অভিনয় ও ওই সময়ে করা মন্তন্য নিয়ে কটাক্ষের শিকার হয়েছেন নুসরাত ফারিয়া। সিনেমা মুক্তির সময় তিনি বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক মেয়ের মধ্যেই একজন করে শেখ হাসিনা আছে।’ তবে সম্প্রতি জানালেন, ‘মুজিব’ সিনেমার জন্য অনুশোচনা করলে পেশাকে অবমাননা করা হবে।

আসছে ঈদে নুসরাত ফারিয়া অভিনীত ‘জ্বীন ৩’ সিনেমা মুক্তি পাবে। এ সিনেমাকে সামনে রেখে হাজির হয়েছিলেন এক পডকাস্টে। সেখানে নুসরাতকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি কি শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করার কারণে অনুশোচনায় ভোগেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে নুসরাত ফারিয়া বলেন, ‘এখানে অনুশোচনার মতো কিছুই নেই। আমরা শিল্পীরা সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করি। এর পেছনে অনেক শারীরিক পরিশ্রম যায়। বিশেষকরে এই সিনেমার (মুজিব: একটি জাতির রূপকার) জন্য ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল- এই ৫ বছর আমি একই লুকে নিজেকে মেইনটেইন করেছি। চুলে কোন রঙ করিনি, কালো চুল নিয়ে ঘুরেছি এই চরিত্রটির জন্য। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ শারীরিক ওজনের মধ্যে থাকতে হয়েছে। মোট কথা আমি বলতে চাই, এই সিনেমার জন্য আমি আমার জীবনের দীর্ঘ ৫টি বছর দিয়েছি। ফলে সেই কাজটিকে নিয়ে যদি অনুশোচনা করি তাহলে আমার পেশাকেই অপমান করা হবে।’
এরপর তিনি বলেন, ‘এই সিনেমার জন্য আমি যে পরিস্থিতি পার করেছি বা এখনো করছি তা আমার ভাগ্যে লেখা ছিলো বলেই মনে করি। এটা খণ্ডানোর ক্ষমতা আমার ছিলো না।’
তবে নুসরাত ফারিয়া এ কথাও বলেন, একটি দেশের সরকারি পর্যায় থেকে কোন কাজের প্রস্তাব আসলে তা নিজের অতো পছন্দ না হলেও মানা করা যায় না।
জুলাই আন্দোলনে এ অভিনেত্রী ছিলেন কানাডাতে। তিনি সেখান থেকেই ছাত্রদের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলেন বলে জানান।

‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় শেখ হাসিনা চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে ২০২৩ সালে সংবাদমাধ্যমকে নুসরাত ফারিয়া বলেন, শেখ হাসিনার চরিত্র পর্দায় তুলে ধরা কম চ্যালেঞ্জিং নয়। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সাহস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেই পাওয়া। এক সাক্ষাতে তিনি বলেছিলেন, ‘যা করবে মন থেকে করবে, তাহলেই প্রত্যাশা পূরণ হবে।’ তার সেই কথা আর পরিচালকের নির্দেশ মেনেই সাবলীলভাবে অভিনয় করে গেছি। যে সময়টা ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে আজকের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তখনকার শেখ হাসিনাকে মেলানো যাবে না। একটি পরিবারের সাধারণ মেয়ের মতোই ছিল তার জীবনযাপন। যাকে দেখে মনে হবে, প্রত্যেক মেয়ের মধ্যেই একজন করে শেখ হাসিনা আছে।
ছবিটির জন্য নুসরাত ফারিয়াকে অডিশন দিতে হয়েছিল। তিনি কখনো কোন কাজের জন্য অডিশন দেননি জানিয়ে বলেন, কোনো দিন তো অডিশন দিয়ে কাজ করিনি। প্রথম সিনেমা করার সময়ও সেটি হয়নি। হঠাৎ একদিন ছবিটির অডিশনের জন্য বলা হয়। বলা হলো নির্দিষ্ট তারিখে একটি তাঁতের শাড়ি পরে নো মেঅকাপ লুকে হাজির হতে। সকাল ৮টার দিকে আমাকে বিটিভির কার্যালয়ে যেতে বলা হয়েছিল। একটু টেনশন কাজ করাটাই স্বাভাবিক। কিছুটা ভয়ও কাজ করছিল। কারণ কোন চরিত্রের জন্য অডিশন দিতে বলা হয়েছে, সেটিও আমি জানি না। সেটি জানলে অন্তত একধরনের প্রস্তুতি নিতে পারতাম নিজের মতো করে। আমাকে একটি স্ক্রিপ্ট পড়তে বলা হলো। পড়লাম, কিন্তু তখনই কোনো সিদ্ধান্ত পেলাম না। তারা আমাকে বললেন, অপেক্ষা করুন, পরে জানানো হবে। মনে মনে ভাবলাম, আমার কী আর হবে! কারণ আমি জানতে পেরেছিলাম প্রায় সাড়ে ৩০০ শিল্পী অডিশন দিয়েছেন এই চরিত্রের জন্য। পরে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার শুটিং করতে চলে যাই। যেখানে মোবাইল ফোনের কোনো নেটওয়ার্ক নেই। তাই খবরটি জানানোর জন্য স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ফোন করা হয় যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রে আমাকেই নির্বাচন করা হয়েছে। তখন আমার চিৎকার শুনেছিল সুন্দরবনের বাঘ, ভালুক, হরিণ! এই ঘটনা আমার শিল্পীজীবন শুধু নয়, সমগ্র জীবনের জন্যই অন্যতম প্রাপ্তি।