‘মুসাফির’ : ঢালিউডের নতুন দিনের ইউটার্ন
চলে মুসাফির…
‘মুসাফির’ নামটা শোনার পরেই আরো দুই মুসাফিরের নাম মাথায় আসে।কবি জসীমউদ্দীনের ভ্রমণকাহিনী ‘চলে মুসাফির’।আর একটি হলো শওকত ওসমানের নামকরা গল্প ‘দুই মুসাফির’।পথিক যদি পথের সৃষ্টি করে তবে জীবনপথে আমি, তুমি, সে আমরা সবাই মুসাফির।এ মুসাফিররা তাদের যার যার সংগ্রাম করে যাচ্ছে নিজের মতো।নির্মাতা আশিকুর রহমানও মুসাফির-এর গল্প শুনিয়ে জানালেন এরকম গল্প অনেকের আছে যাদের জীবনটা অ্যাডভেঞ্চারাস।
নামকরণের সার্থকতা..
পড়াশোনা করতে গিয়ে নিশ্চয়ই দেখেছেন এটা।অমুক গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো, তমুক চরিত্র কতটুকু সার্থক ইত্যাদি।সিনেমায় এসেও যদি বলি ‘মুসাফির’ নামটি কতটুকু সার্থক তবে সবার জীবনের সাথে দর্শন মেলাতে গেলে বলতেই হবে আমরা সবাই যেহেতু জীবনকে কড়ায় গণ্ডায় বুঝতে বুঝতে এসেছি তাই নামটা অালবত সার্থক।
ক্যাপ্টেন অব শিপ..
‘মুসাফির’ সিনেমার ক্যাপ্টেন অাশিকুর রহমান যিনি হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে আবার উঠে দাঁড়ানো নির্মাতা।লোকে সমালোচনা করলে সেটা স্বাভাবিক হিশেবে নিতে জানে।তাই ‘কিস্তিমাত, গ্যাংস্টার রিটার্নস’-এর দর্শক – সমালোচক মিশ্র প্রতিক্রিয়া হজম করে এবার নিজের জাত চিনিয়েছেন।তিনি এগিয়ে যাবেন না তো যাবেনটা কে! সিনেমাটির বাণিজ্যিক সব উপাদানকে ঢেলে সাজিয়ে একটা ককটেল বানালেন আর সেটাই দর্শককে বহুদিন বাদে উৎসবের আমেজ দিল।
গল্প ও মুসাফির..
সিক্রেট এজেন্সি নিয়ে দেশের সিনেমায় নতুন একটা সিনেমা যোগ হল এটা ভাবতেই ভালো লাগে।’অপারেশন’-এর দিক থেকে বিশ্বের অনেক সিক্রেট এজেন্সি তাদের কার্যক্রম চালায়।এ সিনেমায় সেটা ছিল ‘কভার্ট অপারেশন।’ তার মূল হোতা ছিল মিশা সওদাগর।শুভর মিথ্যা সাজানো মামলায় জেল খেটে বের হওয়ার পর প্রেমিকাকে খুন করার জন্য যে শপথ ছিল সেটার মোড় নেয়া গল্পই মুসাফিরের গল্প।সেদিক থেকে মারজানকে কিডন্যাপ করা এবং শুভর গন্তব্যের পথে একের পর এক বাধা এসবই সিনেমার টান টান উত্তেজনার অংশ।
মুসাফির শুভ..
সেদিন অফিসের কলিগের সাথে বাসে যেতে যেতে কথা হচ্ছিল।কথা প্রসঙ্গে বলছিল বর্তমান দেশের সিনেমা নিয়ে।উনি আরেফিন শুভর ভক্ত।বললেন ‘বহুদিন বাদে একটা জব্বর নায়ক পাইছি।’
আরেফিন শুভর এখন উত্তরণকাল।তাই তার সিনেমা নিয়ে, স্টাইল নিয়ে, অভিনয় নিয়ে সীমাবদ্ধতা বিচারের থেকে দরকার অ্যাপ্রিশিয়েট করা।’কিস্তিমাত, ওয়ার্নিং’-এর সমালোচনার পরে শুভ ‘ছুঁয়ে দিলে মন’-এ স্পষ্ট করেই দেখিয়েছে ঢালিউডে তার পথটা লম্বা।আজকের শুভ একটা ক্রান্তিকালের মুসাফির তাই তার সবকিছুতে একটা শব্দই হতে পারে সবচেয়ে দরকারি আর তা হলো ‘ডেডিকেশন।’এটুকু সম্বল করে শুভ এগিয়ে যাচ্ছে।তার সামনের সিঁড়িগুলো এগিয়ে যেতে হবে তাকে।
শুভর অভিনয় সিনেমায় এককথায় পরিণত।এক্সপ্রেশনগুলো দেখার মতো।সেগুলো ভাগ করলে এভাবে দাঁড়ায়
১.অ্যাকশন এক্সপ্রেশন – দৌড়ের সময় শুভর একটা ভিন্নতা আসে।বিশেষ করে ‘running movement’-এ তার চোখমুখের ভঙ্গি কিভাবে যেন অসাধারণ হয়ে ওঠে।এ সিনেমাতেও ছিল অনেকটাই ‘কিস্তিমাত’-এর ‘স্বপ্নেই ভেসে গেলে’ গানের মতো।অ্যাকশনের মধ্যে সবগুলো বলার দরকার নেই শুধু একটাই যদি বলি কভার হয়ে যায়।ট্রেনে জাদু আজাদকে বইয়ের পাতা মুড়িয়ে মাথায় কাপড় পরা যে মাথা ঘোরানো এক্সপ্রেশন ওটা সিম্পলি এক্সেলেন্ট।অভিজ্ঞ হচ্ছে শুভ এটা তারই লক্ষণ।
২. অ্যাঙ্গার এক্সপ্রেশন – রোমেলের সাথে মার্শাল ফাইটের সময় একদম শেষের দিকে যখন রোমেল মাটিতে পড়ে গেছে শুভ অাঙুল ডান বাম করে বুঝিয়ে দেয় এসব তার সাথে যেন না করে।ঐ অ্যাঙ্গার এক্সপ্রেশন দুর্দান্ত।
৩. রোমান্টিক এক্সপ্রেশন – রোমান্সে শুভ বরাবরই ভালো।মারজান জেনিফার সাথে খুনসুটিতে পেছন ফিরে তাকানো বা ‘আলতো ছোঁয়াতে’ গানের সবকটি এক্সপ্রেশন জাস্ট ওয়াও।
শুভর ব্যক্তিত্ব কোন লুকে বেটার লাগে? অনেক উত্তরই আসবে তবে এ সিনেমায় জেল খেটে বের হওয়া দাড়িগোঁফের শুভ ছিল অালাদা ব্যক্তিত্বের অধিকারী।দেখে মনে হবেই সে ক্যারেক্টারের সাথে মানাতে পরিশ্রমটা ভালোই শুরু করেছে।
নায়িকা সংবাদ..
মারজান জেনিফাকে নিয়ে সমালোচনায় মুখর সমালোচকরা।এর মধ্যে আক্রমণাত্মক সমালোচনাই ছিল বেশি।মেয়েটি নতুন তাই সময় দরকার তার এতটুকু বললেই চলে।রোমান্টিক এক্সপ্রেশন ভালো দিলেও কান্নায় সে আনকোরা।এ নিয়েই তো যত অভিযোগ।আরে ভাই কাঁদতে পারাটা কি এত সস্তা নাকি! সময় দেন শিখুক।যত সমালোচনা হয়েছে সে যদি শিখতে পারে তবে তার মঙ্গল।তবে মারজানের গ্ল্যামার প্রথম কাজ হিশেবে ভালো ছিল।’অালতো ছোঁয়াতে’ গানে সবচেয়ে ভালো ছিল।রোমান্টিক জায়গাগুলো তার সুন্দর হাসির কারণে অনেকটাই মানিয়ে গেছে।
স্ট্যান্ডিং কমেডি ও হারুন রশীদ..
এখন টলিউড, বলিউডের বেশিরভাগ সিনেমায় ‘স্ট্যাডিং কমেডি’-র ব্যবহার হচ্ছে।এর চাহিদা ব্যাপক।আমাদের এখানে তত অায়োজন করে শুরু হয়নি।এবার এ সিনেমায় নতুন আর্টিস্ট যা দেখালেন এককথায় সিনেমার প্রাণ হয়ে গেলেন হারুন রশীদ।তার উপস্থিত বুদ্ধির জায়গায় বিভিন্ন সময় বাচালতার স্বাদে কমেডি ছিল সুপার।তার লুক কমেডিয়ানের না তবে পরিচালক মানিয়ে নিয়েছেন।পরিচালক এক্সপেরিমেন্টটি ভালোমতই করেছেন কমেডিতে।স্ট্যান্ডিং কমেডিতে ‘time and place’-এর কম্বিনেশনে হারুন রশীদ হাঁটতে হাঁটতে, শপিং মলে, খোলা বাজারে, গোপন আস্তানায় তার কমেডি স্বাদ দিয়েছেন দর্শক।তাকে দেখে খুব সাবলীল মনে হয়েছে।কমেডির সময় অনেক সময় কমেডিয়ান নিজেই হাসে যেটা বিরক্তির সৃষ্টি করে।অাফজাল শরীফের এরকম সীমাবদ্ধতা আছে।হারুন রশীদ সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুনত্ব আনলেন।তার ট্যালেন্টও দেখানোর জায়গাটা তিনি পেলেন।এবার ইন্ডাস্ট্রি তাকে নিয়ে ভাবলেই তার জন্য পয়মন্ত।
ভিলেনের স্পেসিফিক ক্যারেক্টারাইজেশন..
পরিচালক ভাইয়ের সাহস আছে বলতে হবে।নইলে এত ভিলেন এনে জড়ো করলেন কেন! সব ভিলেনকে স্পেসিফিক ক্যারেক্টার দেয়া টাফ কাজ।অথচ তিনি তা করেছেন।ভিলেনের ক্যারেক্টারাইজেশনে এক্সপেরিমেন্ট করলেন ‘প্রফেশনাল + নিউকামার’ কম্বিনেশনে।এর জন্য একটা ঝুঁকি তো ছিলই তবে তিনি কাটিয়ে উঠেছেন।যেহেতু স্পেসিফিক তাই সেভাবেই বলা দরকার।
* মিশা সওদাগর – তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।ইন্ডাস্ট্রিকে যা দিয়েছেন তাতে ঋণের শেষ নেই।মিশার অভিনয়ের অনেকগুলো বাঁক ছিল।যখন যে পরিস্থিতি এসেছে জাস্ট অ্যাটাচমেন্ট করেছেন।সেজন্য একটা সিকোয়েন্সই যদি বলি একেবারে পুরো স্বাদটা মেলে।শুভকে ধরে আনার পরে তাকে বেঁধে জেরা করার সময় মিশা রিভলবার তাক করে গুলি না থেকেও ভয় দেখানোর যে চেষ্টা চালান সেখানে এক একটা সেগমেন্ট এক একরকম ছিল শুভকে যখন বলছে ‘আমার কাজকর্ম দেখে কি ভালো মানুষ মনে হচ্ছে?’ এ সংলাপে কুল থাকলেও শুভর ‘না’ জবাব শোনার পরে ট্রিগারে চাপ দেয়া পর্যন্ত রাগী ভাব আসে।মিশা এত দ্রুত ক্যারেক্টারের নানা জায়গায় সুইচ অন/অফ করতে পারে যে সেটাকে বিরল না বলে উপায় নেই।সিক্রেট অ্যাজেন্টদের সাথে তার যেমন অাচরণ ছিল সেখানেও ভিন্নতা।অন্যদের সাথে স্বাভাবিক থাকলেও ইলায়াস কোবরার সাথে সম্পর্ক শীতল ছিল না।শেষের মিনিট বিশেক তো মিশার ফোকাস দিয়েই সিনেমা শেষ হলো।টাইগার রবিকে মারার সময় মিশার নাটকীয় কৌশল দেখার মতো। মারজানকে বেঁধে নিজের বদলে যাবার গল্পটা বলে যখন ওটা ছিল অসাধারণ।মারজানের বলা ‘শুধুমাত্র স্ত্রীকে হারানোর জন্য নিজের ওপর পাওয়া কর্তব্যের এতবড় অপমান?’ তখন মিশা বলে ‘ভুল, ভুল..আমার স্ত্রীর পেটে আটমাসের শিশুসন্তান ছিল।’ঐ সময় কান্নার অভিনয় অনবদ্য ছিল।মিশার অভিনয়যুদ্ধটা মূলত নিজের সাথে নিজের।
* ইলিয়াস কোবরা – অভিজ্ঞতায় কোবরা পুরনো তাই অভিনয় সাচ্চা।তাকে দেখা গেছে মিশার কাজে নাক গলানোর ভূমিকায়।সেটা ভালোই পেরেছে।
* টাইগার রবি – ‘ভাই, আমার ছোট ছোট দুইটা বাচ্চা আছে।আমি মারা গেলে ওরা এতিম হয়া যাবে, ভাই’….তার স্টার্টিং সসিকোয়েন্স দেখে মনে হচ্ছিল হাঁটু গেড়ে টাইগার রবি নিজেই কাকুতি মিনতি করছে জীবন বাঁচানোর জন্য।কিন্তু ঘটনা উল্টো।অন্যেরটাই নিজে করে দেখালো।নাটকীয়তা।অতঃপর তাকে মেরে সুইমিংপুলে ফেলে দেয়।টাইগার রবি সময়ের আশা জাগানিয়া ভিলেন।তার বডি ল্যাংগুয়েজ ভিলেনের সাথে মানানসই।তবরেজ ক্যারেক্টারে টাইগার খেটেছে অনেক।
* শিমুল খান – তাকে নিয়ে কিছু বলার দরকার কমই অাছে।’দেশা দ্য লিডার’-এ টিভি চ্যানেলের মালিকের গলা কাটার জন্য জাস্ট একটা দৃশ্যে যেভাবে কোনো ডায়লগ ছাড়াই রুদ্রমূর্তিতে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল সেটা ছিল তার নিজস্বতা।’মুসাফির’-এও নতুন স্বাদ।মেয়েলি ভঙ্গিতে কথা বলতে বলতে আর রুটিতে জেলি মাখিয়ে খেতে খেতে নিজের ভয়ংকর রূপ দেখাল দেবাশীষ বিশ্বাসের পরিবারকে মেরে।শুভর সাথেও জমেছে ফাইটটা।
* জাদু আজাদ – বেশকিছু সিনেমা করে নিজের অবস্থান পাকা করেছে।ট্রেনের মধ্যে শুভর সাথে তার সিকোয়েন্স দর্শক পছন্দ করেছে।
* সোহেল রানা – নিউকামার থিয়েটার থেকে সিনেমায় আসা ভিলেন।প্রথম কাজ হিশেবে রাফ ক্যারেক্টার প্লে করে জাত চিনিয়েছে ছেলেটা।মিশা যখন টাইগার রবিকে গ্রেফতার করতে আসে ঐ সিকোয়েন্সে তার হালকা নৃত্য করা ভঙ্গির কমেডি টাইপের অভিনয়ে ভিলেন স্বাদ জোস।প্লাস্টিক সার্জারির পরে ব্যাণ্ডেজ খুলে টাইহার রবিকে বলা ‘ভাই মাইয়াটারে আমার চাই-ই চাই’ সংলাপটির ডেলিভারি চমৎকার।উদীয়মান ভিলেন হিশেবে চমক হতে পারে সে ঢালিউডে।
* সিন্ডি রোলিং – ফিমেল ভিলেনের অভাবটা ভালোই যাচ্ছিল ঢালিউডে।সেখানে সিন্ডি রোলিং নিঃসন্দেহে সম্ভাবনা দেখাল।কিছুক্ষণের জন্য এসে ঝড়ের মতোই নিজের শক্তির জানান দিল।তাকে সামনের দিনগুলোতে ঢালিউডে দরকার হবে।
ডায়লগ বেইসড মুসাফির..
সিনেমায় এত এত ডায়লগ আছে যে কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব তল পাওয়াটা মুশকিল।ক্যাটাগরি করে সিলেক্টিভ ডায়লগ বলা যায়য় :
* অ্যাকশন – অ্যাকশন ডায়লগই এ সিনেমায় চালকের ভূমিকায় ছিল।নায়ক, ভিলেন মিলিয়ে ছিল।যেমন-
– শুভকে গুলি করে মারজানকে নিয়ে যাওয়ার পরে অজ্ঞান থেকে ওঠা শুভর ডায়লগ ‘মনের গহীনে ভালোবাসা নামক শব্দটা কখন যে বাসা বেঁধেছে বুঝতেই পারিনি।সেই অনুভূতিটাকে বাঁচাতে আজ আমি যে কোনো কিছুকে বরণ করতে পারি এমনকি মৃত্যুকেও।’
– মিশাকে বলা শুভর সংলাপ ‘গল্পের শেষ যে করে সেই হয়,নায়ক।’
– ‘মুসাফিরের জীবনে শেষ বলে কিছু নেই’- মারজানকে বলা শুভর ডায়লগ।
– ‘আমার পথ থেকে তুমি সরে দাঁড়াও নইলে পথ তোমার পায়ের নিচ থেকে সরে যাবে’- কোবরাকে মিশার বেস্ট ডায়লগ।
– ‘আইন পোশাকে থাকে না, আইন থাকে মনে’- মারজানকে বলা মিশার ডায়লগ।
– তোরে অামি এতগুলা টুকরা করুম যাতে কেউ ভাগে না পায় – টাইগার রবির ডায়লগ।
– গ্যারান্টি আর তবরেজ একই শব্দ – টাইগার রবির ডায়লগ।
– ‘মানুষের তো একটা কলিজা থাকে, তোর তো সারা শরীরে কলিজা- টাইগার রবি।
* রোমান্টিক :
– ‘বাচ্চা আর বাবা এক টিম, মা আর এক টিম’- মারজানের সাথে খুনসুটিতে শুভর ডায়লগ।
* রিয়েলিস্টিক :
– ‘আমি আর কি করেছি বলো, তোমাকে মানুষ থেকে পশু বানিয়েছি’- শুভকে বলা প্রসূন আজাদের ডায়লগ।ফ্যান্টাসিতে শুভ দেখে এটা।
* কমেডি : হারুন রশীদের একচ্ছত্র অাধিপত্যে কমেডি ডায়লগগুলো সুপার।স্ট্যান্ডিং কমেডির ভরপুর স্বাদ দিয়েছে সেগুলো।
-‘ খুন আর কিলিং কি এক হইলো বস? খুন করলে হয় খুনী আর কিল করলে বলে কিলার।আপনি আমাদের ভরসা’ – শুভর সাথে প্রথম দেখায় বলা ডায়লগ
– বস, ঐ মাইয়ারে আপনি পাইবেন না।দ্যাখেন বাজার থাইকা ইলিশ কিনা সরিষা দিয়া রাইন্ধা খাইব- শপিং মলে শুভকে বলা।
-‘বাহির বলে দূরে থাকুক, ভিতর বলে আসুক না’ যেই বলুক বস মনের মধ্যে অনেক কষ্ট নিয়া বলছে বস’- মারজানকে বেঁধে শুভকে বলা জোস ডায়লগ।
– ‘ডাকে পাখি খোলো আঁখি’- রোমেলকে জাগানোর জন্য বলে।দর্শক খুব মজা পেয়েছে এটাতে।
– ‘কাহিনী তো ঘটনা হয়ে গেছে বস’- সবচেয়ে মজার ডায়লগ।
– ‘আপনি আমারে ছাড়া খাবার কিনবেন বস, খাবারের মধ্যে তো কোনো প্রোটিনই থাকব না’- আর একটা মজার ডায়লগ।
এভাবে পরিস্থিতি বিচারে স্ট্যান্ডিংয কমেডিতে মাতিয়েছে হারুন রশীদ।জানান দিয়েছে ঢালিউডে তার লম্বা জার্নি শুরু হচ্ছে।
আইডিয়া + টেকনিক…
এ দুটো চলে হাত ধরাধরি করে চলে।আশিকুর রহমান আগের সিনেমা থেকে নিজেকে আপডেট করতে অ্যাকশন, কমেডি যোগ করে দৃটোকে ব্যালেন্স করে দর্শকের চাহিদাকে বোঝার চেষ্টা করেছেন।তিনি সফল সে জায়গায়।যে আইডিয়া সাধারণত বাইরের দেশের সিনেমায় দেখা যায় তাকে স্টাডি করে একজন পেশাদার খুনীর জীবন তুলে ধরেছেন সিক্রেট এজেন্সির আলাদা গল্পের সাথে ইন করে।এ আইডিয়ার সাথে অ্যাকশনে মার্শাল আর স্ট্যান্ডিং কমেডির সাথে মাল্টিপারপাস ভিলেন এনে একসাথে টেকনিক সাজিয়েছেন।এ বড় কাজটা প্রথম দেখা গেল।আশিকুর রহমান এখানে অনেকের থেকে অনেক এগিয়ে থাকলেন।
ক্যামেরাওয়ালা…
অবাক করা ব্যাপার ক্যামেরায় ঢাকা শহর এত গর্জিয়াস লাগল দেখে। ড্রোন ক্যামেরার শটগুলোতে আকাশ থেকে দেখানো ঢাকা শহর অালাদা লেগেছে।কাঁপা কাঁপা ইমেজের শটগুলো মাঝে মাঝে খানিকটা চোখে ধরলেও এ সিস্টেমটা তামিল বা অাজকালকার সালমান খানের ‘ওয়ান্টেড’ এর মতো কিছু স্বাদ দেয়।
তবে বলতেই হয়, ক্যামেরার কাজ দেখার জন্যও এখন সিনেমা দেখা দরকার এ প্রজন্মের।
গান গেয়ে পরিচয়..
সব কটা গানই ভিন্ন।চাহিদা অনুযায়ী বানানো।টাইটেল ট্র্যাক যেভাবে গুরুত্বপূর্ণ, আলতো ছোঁয়াতে* তার থেকে ভিন্ন।পথ জানা নেই* অ্যাডভেঞ্চারাস গান।স্যাড ভার্সনের ‘ফিরে আয়’ তাহসিনের ডিফারেন্ট ভয়েসের জন্য আলাদা স্বাদ দিয়েছে দর্শককে।এর প্রমাণ নিতে ইউটিউব কমেন্ট দেখা যেতে পারে।
এভাবে না হয়ে যদি ওভাবে হত..
ভুল ধরাধরির মতো ব্যস্ততা থেকে নয় জাস্ট আরো ভালো করার অপশন ছিল এমন চিন্তা থেকে বলছি কিছু কথা –
* যদি প্রসূন আজাদ মূল নায়িকা হত তবে প্রধান ফিমেল ক্যারেক্টার নিয়ে কেউ টু শব্দটিও করতে পারত না
* যদি ফিনিশিং আর একটু টুইস্টে হত তবে শুভ+মিশা দুজনের ক্যারেক্টারাইজেশন আরো একটু mysterious হত।
* সিন্ডি রোলিংকে আর একটু বড় স্পেস দিলে তার কাজের জায়গাটা আরো উপভোগ্য হত।
* স্টান্ট টেকনিক আরো ভালো হতে পারত
মুসাফির-২…
কোবরা ও সোহেল রানার অসমাপ্ত গল্পই শেষে জানান দিচ্ছিল মুসাফির-২ এর।সেটাই ভাসল পর্দায়। এত অসাধারণ ফুল প্যাকেজ বাণিজ্যিক সিনেমার দ্বিতীয় কিস্তির জন্য প্রতীক্ষাটা দর্শকের ভালোই থাকবে।তবে সে কিস্তির জন্য নির্মাতার আরো যত্ন দরকার কাজেকর্মে।দ্বিতীয় কিস্তি অনেক সময় ভালো হয় না তাই বলা আর কি..
মুসাফির* ঢালিউডের নতুন দিনের ইউটার্ন।এ যাত্রা অব্যাহত থাকুক আপকামিং অন্যান্য ফুল প্যাকেজ সিনেমার মাধ্যমে…
ঢালিউড এবার জাগল বলে