‘মৌলিক গল্পে’ মালেক আফসারীর শেষ ছবি, এরপর চলে যাবেন গ্রামে!
শোনা যাচ্ছে, বর্তমানের একজন জনপ্রিয় লেখকের উপন্যাসের কপিরাইট নিয়েছেন মালেক আফসারী। সে উপন্যাস থেকেই করা হবে ছবির চিত্রনাট্য
‘আমার জীবনে অনেক ছবিই বানিয়েছি। এর অর্ধেক ছবিই নকল গল্পের, কিন্তু এটা হবে মৌলিক গল্পে। একটা সময়ে বানানো গেছে নকল গল্পে। এখন তা সম্ভব না। কারণ ইন্টারনেটের যুগে ২ মিনিট লাগবে কোন ছবি থেকে কপি করেছি। তবে আমি হয়তো হলিউডের ছবির মেকিং ডিজাইনটা ফলো করবো। আমি এটা করি। মেকিং ডিজাইন ফলো করি আমি’, সারাবাংলার আহমেদ জামান শিমুলকে এমনটা বলছেন মালেক আফসারী।
‘লাল বাদশা’, ‘মরণ কামড়’, ‘রাজা’, ‘ক্ষতিপূরণ’, ‘হীরা চুনি পান্না’, ‘ঠেকাও মাস্তান’, ‘বোমা হামলা’, ‘আমি জেল থেকে বলছি’, ‘উল্টা পাল্টা’র মত ব্যবসায়িক সফল ছবি যেমন বানিয়েছেন, তেমনি বানিয়েছেন ‘এই ঘর এই সংসার’-এর মতো ক্ল্যাসিক ছবি। তার নির্মিত ২৪টি ছবির বেশিরভাগের ক্ষেত্রে অভিযোগ বিদেশি ছবির নকলের। তিনি সোমবার (৪ জুলাই) ঘোষণা দিয়েছেন ২৫তম ছবি নির্মাণের। আর বলছেন তার এ ছবিটি হবে সম্পূর্ণ মৌলিক গল্পের।
ছবিটির চিত্রনাট্য লিখবেন আবদুল্লাহ জহির বাবু। আগামী ৬ জুলাই থেকে বাবুর সঙ্গে গল্প ও চিত্রনাট্য নিয়ে বসবেন আফসারী। বাবু জানালেন, আফসারীর সঙ্গে তার ছবিটি প্রাথমিক আলাপ হয়েছে। এখন পর্যন্ত কী গল্প নিয়ে তাকে চিত্রনাট্য করতে হবে তা জানেন না তিনি। বাবু বলেন, ‘আফসারী ভাই আমাকে আজ (সোমবার) সকালে কল দিয়ে বলেছে গল্প নিয়ে বসতে চান। ওনার সঙ্গে এর আগে বেশ কয়েকটি গল্প নিয়ে কথা হয়েছিল। এখন কী গল্প নিয়ে স্ক্রিপ্ট করবো তা হয়তো সরাসরি বসার পর বলতে পারবো।’
শোনা যাচ্ছে, বর্তমানের একজন জনপ্রিয় লেখকের উপন্যাসের কপিরাইট নিয়েছেন মালেক আফসারী। সে উপন্যাস থেকেই করা হবে ছবির চিত্রনাট্য। বিষয়টি পুরোপুরি উড়িয়ে না দিলেও সরাসরি স্বীকার করেননি আফসারী। তিনি বলেন, ‘গল্প তো অনেকগুলোই মাথায় আছে। সেটা উপন্যাস হতে পারে, অন্য ছবিও হতে পারে। বাবুর (আবদুল্লাহ জহির) সঙ্গে মিটিং করে ঠিক করবো কোন গল্প নিয়ে এগোবো।’
গল্প কী হবে না জানালেও ছবির ধরন হবে ‘অ্যাকশন’। কারণ আফসারী বিশ্বাস করেন এই মুহুর্তে ইন্ডাস্ট্রির জন্য দরকার বাণিজ্যিক ছবির। আর অ্যাকশন ছবি ব্যবসায়িকভাবে সফল হয় বেশি। তার মতে, এ মুহূর্তে রোমান্টিক ছবি কিংবা ‘এই ঘর এই সংসার’-এর মত সামাজিক ছবি দিয়ে সিনেমা হলে দর্শক খুব একটা ফেরানো যাবে না।
মালেক আফসারীর সবশেষ ছবি ‘পাসওয়ার্ড’। এর আগে তিনি জায়েদ খানকে নিয়ে ‘অন্তর জ্বালা’ নির্মাণ করেন। ওই ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সফল না হলেও আলোচিত। ২৫তম ছবির প্রযোজক কি তাহলে কোন নায়ক? কিংবা এ ছবিতে জায়েদ খানের মতো কাউকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন কি না?
“জায়েদ খান ‘অন্তর জ্বালা’র প্রযোজক ছিলো। সে আমাকে ভালো সম্মানী দিয়েছিল। বাজেটেও অনেক বেশি ছিল। তাই তাকে নিয়ে ঝুঁকি নিয়েছিলাম। এছাড়া আরেকটা কারণ ছিল। ওই ছবির নায়ক ছিল মান্নার ভক্ত। যেখানে আমার একটা আবেগ কাজ করেছিল। আর এ ছবির গল্প লেখা হোক, আমার প্রযোজক বহু পুরাতন। উনি বহু সিনেমা প্রযোজনা করেছেন। উনি জানেন ইন্ডাস্ট্রির কী অবস্থা। ওনার সঙ্গে গল্পে লেখা হলে বসে সিদ্ধান্ত নিবো কাকে নিবো।”
আপনি বলছেন, এটিই হবে আপনার জীবনের শেষ ছবি। এরপর আর ছবি বানাবেন না। এ কথা কেন বলছেন, নাকি অতীতের মত পাবলিসিটি স্ট্যান্ট হিসেবে ধরে নিবো আমরা?
‘আমার জীবনের স্বপ্ন ছিল ২৫টা ছবি বানাবো। সে স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। তাছাড়া আমার বহুদিনের স্বপ্ন শেষ বয়সে গ্রামে গিয়ে বাস করবো। নোয়াখালীর সেনবাগের বসন্তপুর গ্রামে আমার জন্ম। ওখানে একটা বাড়ি করছি। বাড়িতে কৃষি খামার করবো। এ ছবি নির্মাণ শেষে সেখানে গিয়ে থাকার ইচ্ছে। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন যেন সে ইচ্ছে পূরণ হয়’, — বলেন মালেক আফসারী।
এ শীতে অর্থাৎ অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ নিজের সবশেষ বা ২৫তম ছবির শুটিং শুরু করতে চান আফসারী।
মালেক আফসারী ১৯৮০-এর দশকের প্রথম দিকে সহকারী পরিচালক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ‘পিয়াসী মন’ ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে প্রথম কাজ করেন। এরপর তিনি ‘লুটেরা’ ছবির কাহিনি রচনা করেন এবং ‘কার পাপে’ ছবির সংলাপ রচনা করেন। ১৯৮৩ সালে ‘ঘরের বউ’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।