Select Page

দেবী, অথৈ ও ‘রং নাম্বার’

দেবী, অথৈ ও ‘রং নাম্বার’

যে দেবী সেই অথৈ। কথা তার নাম আর প্রেমিক তাকে ভালোবেসে ‘দেবী’ বলে ডাকে। ভালোবেসে কতই তো নাম দেয়া যায় প্রিয় মানুষটিকে। মুঠোফোনে তাদের পরিচয় তারপর মন বদল। মেয়েটি শ্রাবন্তী। এক ছবির নায়িকা। ‘রং নাম্বার’ নাম ছবির। এক ছবিতেই স্মরণীয়।

বুদ্ধদেব বসু-র ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’ উপন্যাস পড়ে আর সম্পর্কের ফাঁদ নিয়ে ভাবে শ্রাবন্তী। রং নাম্বারে কল দিয়ে কতজনকে যে নাজেহাল করে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। মজা করে কিন্তু এ মজা যে অনেকের জীবনে অশান্তির কারণ হয়ে যায় তা আর ভাবে না। বান্ধবীদের নিয়ে দুরন্ত হয়ে ঘোরে। রং নাম্বারে কী শুধুই কল দেয়াই শেষ উদ্দেশ্য? না, যদি মিলে যায় মনের একটা মানুষ! তাই তো বান্ধবীদের নিয়ে গান গায় ‘আমি আমার ভেতর থেকে নামি/নেমে যাকে খুঁজি দেখা নাই তার/রং নাম্বার।’ এভাবেই রং নাম্বার থেকে রিয়াজের সাথে পরিচয়, প্রথমে ঝগড়া তারপর একটু একটু করে কথা বলা নিয়মিত হলে টান বাড়ে এবং মন বদল।

রিয়াজের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতে বলতে শ্রাবন্তী ভালোবেসে ফেলে তাকে। তারপর দেখা যায় শ্রাবন্তী ঘোরের মধ্যে আছে। যেদিকে তাকায় দেখতে থাকে ফোন ভাসছে। কেউ বোধ হয় রিং করেছে আর সে বারবার উত্তর দক্ষিণে তাকাচ্ছে। এরপরই শুরু হয় প্রিয় গান-’প্রেমে পড়েছে মন/অচেনা এক মানুষ আমায় পাগল করেছে…প্রাণেতে দোলা লাগে/এমন তো হয়নি আগে…’

শ্রাবন্তী ফোনে কথা বলছে রিয়াজের সঙ্গে। বলতে বলতে সম্পর্ক নিয়ে কথা ওঠে। শ্রাবন্তী বলে সম্পর্ক একরকমের ফাঁদ। বলে-’এই যেমন স্বামী-স্ত্রীর কথাই ধরুন না। এরা বছরের পর বছর একই ছাদের নিচে থাকে কী করে বলুনতো। সবই আসলে ফাঁদ।সম্পর্কের ফাঁদ।  একজন আর একজনকে জানার ইচ্ছা। কাউকে জানার যে ইচ্ছা তা যদি শেষ হয়ে যায় তবে সম্পর্কই থাকবে না। প্রেমালাপ রূপ নেয় জীবনদর্শনে।

রিয়াজ ফোন না করাতে শ্রাবন্তী অভিমান করে। রিয়াজ বলে-’ফোন আপনার আগে করার কথা ছিল। ‘শ্রাবন্তীর উত্তর-’উম..নিজের বেলায় একেবারে ষোলআনা। এভাবে ভালোবাসা থেকে শুরু হয় অধিকারবোধ।

রিয়াজ: ‘প্রিয় মানুষের জন্য অপেক্ষা করতে ভালো লাগে।’

শ্রাবন্তী: ‘আমি আপনার প্রিয় মানুষ বুঝি?’

জবাবটা আসে গানে গানে— ‘তুমি যদি তুমি যদি চাও একবার ভালোবেসে/ এনে দেব এনে দেব হ্যাঁ দেব এক নিমেষে/ দুনিয়ায় যত আছে অসম্ভব/ সবটাই করে দেব সম্ভব/ তুমি যদি হেসে বলো/ দু’কদম হেঁটে চলো জিতবই অবশেষে’…♥♪

দুজনে দেখা করতে চেয়ে যেই গেল দেখা করতে ঘটল নানা কান্ড। ফোন হারিয়ে ফেলল শ্রাবন্তী আর রিয়াজ তো ভুল বুঝে লোকের ধাওয়া খেয়ে পালাল। ফোন হারিয়ে বান্ধবীরাও মজা করে বলল-’এবার তাহলে দোস্ত শুরু হলো বিচ্ছেদের পালা’।

বিয়ের আগে শ্রাবন্তী খালা ডলি জহুরকে তার অদেখা ভালোবাসার কথা বলে। তার কণ্ঠে আকুতি-’একটা অজানা অচেনা মানুষের জন্য বুকের ভেতরটা কেন এত খাঁ খা করে বলতে পারো? মনে হয় ওকে আমি চাই, ওকে আমি ভালোবাসি’। খালার উত্তর-’বড্ড দেরি করে ফেলেছিস’। পরিস্থিতির চাপে বিয়ে করে রিয়াজকে অথচ তারা জানেই না তারাই পরস্পরকে ভালোবাসে। না দেখে ভালোবাসলে যা হয়। পরিকল্পনা থাকে ঝগড়া বাঁধিয়ে ডিভোর্স দেবে তারপর যে যার মত থাকবে। বিয়ের পরদিন শ্রাবন্তীর বান্ধবীরা যখন চলে যাচ্ছিল তাদের মধ্যে একজন ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে-’জানিনা ব্যাপারটা তুই কীভাবে নিবি, তবুও বলি। মানুষের জীবনে মাঝে মাঝে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যাকে চাইলেও ওভারলুক করা যায় না। আমি কি বলতে চাচ্ছি তুই নিশ্চয়ই বুঝতে পাচ্ছিস।’ রিয়াজ তো পুতুলখেলার মতো বিয়েটাকে ভুলে যেতে বলে যেহেতু তারা আলাদা হয়ে যাবে পরিকল্পনা করেছে তখন শ্রাবন্তী বলে-’পুতুলখেলা? ভালোই বলেছেন’। বিয়ে তো মেয়েদের জীবন বদলে দেয়, সামাজিকতা তাদের কাছে বিরাট কিছু তাই শ্রাবন্তী এটা বলে। ট্রেন থেকে নামার আগে রিয়াজের সাথে শেষ কথা হয়। দুজনেরই প্রশ্ন দুজনকে-’আপনি আপনার সব কথা আপনার তাকে বলতে পারবেন?’ রিয়াজ নেমে গেলে খালার দেয়া চিঠি হাতে আসে শ্রাবন্তীর সেখানে লেখা-’তোমার বিয়ের পোশাকটা দিয়ে দিলাম ওটা পরে স্বামীর কাছে ফিরে যেও ওটাই তোমার আসল ঠিকানা।’ কাঁদতে থাকে শ্রাবন্তী আর রিয়াজের কল আসে তারপর দুজনের সব কথাই দুজন জেনে যায় এবং যথারীতি বিস্ময়। রিয়াজ বলে-’তুমি? আমার দেবী?’ আর শ্রাবন্তীর উত্তর-’হ্যাঁ।’ তারপর দুজনের মিলনের দেখার জন্য কান্ড ঘটিয়ে ফেলে বড়ভাই আব্দুল কাদের।

এভাবেই দেবী, অথৈ বা শ্রাবন্তী ‘রং নাম্বার’ ছবিতে উচ্ছল ষোড়শী থেকে প্রেমিকা ও বধূ, সে না পাওয়ার বেদনায় কাঁদে আবার পাওয়ার আনন্দে ভাষাহীন হয়ে যায়। এভাবে শতভাগ মানিয়ে যাওয়া স্মরণীয় অভিনয় দিয়ে এক ছবিতেই দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছে শ্রাবন্তী। কতজনেরই বা ভাগ্যে জোটে এক ছবিতে দর্শকের মন জয়ের সুযোগ!

ছবি শেষ হলেও কানে বাজে একটি সংলাপ-’নিশিতে কইও কথা’…


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন