রহস্য আর রোমাঞ্চের ‘প্রহেলিকা’
এক সময়ের জমিদার তথা এই সময়ে এসে এলাকার সবচেয়ে বিত্তশালী ও সংগীত অনুরাগী জামশেদের বাসায় আশ্রয় নেয় মনা। সেই বাড়িতে আরো আছেন জামশেদের সুন্দরী বউ অর্পা ও ফুটফরমাশ খেটে দেয়া আবুল। হঠাৎ মনার আবির্ভাবে রহস্য তথা প্রহেলিকার মাঝে পড়ে সম্পর্কের সমীকরণ বদলে যাবার অদ্ভুত গল্প নিয়েই নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী নির্মাণ করেছেন তার দ্বিতীয় সিনেমা ‘প্রহেলিকা’।
পান্থ শাহরিয়ারের লেখা গল্প এই সিনেমার একটি শক্তিশালী স্তম্ভ হলেও দ্বিতীয় সিনেমাতে চয়নিকা চৌধুরীর ডিরেকশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। মনোমুগ্ধকর লোকেশনে সুমন হোসেনের সুন্দর সিনেমাটোগ্রাফি দর্শকদের মুগ্ধ করে। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর এবং কালার গ্রেডিং ও ভালো লেগেছে ‘প্রহেলিকার’।
সেমিক্ল্যাসিক টোনের গানের পাশাপাশি রোমান্টিক ‘মেঘের নৌকা’ গানটি বড়পর্দায় দেখতে যেমন ভালো লেগেছে তেমনি কানেও শান্তি দিয়েছে। মিউজিকের পাশাপাশি টেকনিক্যাল দিক নিয়ে বলতে গেলে এই সময়ের অনেক সিনেমার থেকে ‘প্রহেলিকা’ এগিয়ে থাকবে বেশকিছু জায়গায়।
তবে গল্প,চিত্রনাট্য ও সংলাপের পাশাপাশি এই সিনেমার মূল ইউএসপি অভিনয় শিল্পীদের অসাধারণ পারফরম্যান্স। আট বছর পর বড়পর্দায় মাহফুজ আহমেদের কামব্যাক বেশ ভালো হয়েছে এটা বলতেই হয়। দীর্ঘ সময় পরে ক্যামেরার সামনে দাড়ালেও চরিত্র অনুযায়ী তার ফিটনেস, সাবলীল অভিনয় দক্ষতা এবং সংলাপ ডেলিভারি ছিলো পারফেক্ট। একটা প্রজন্মের কাছে মাহফুজ আহমেদকে স্ক্রিনে দেখাই একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা হবে সাথে বুবলীর সাথে মাহফুজ আহমেদের জুটিও স্ক্রিনে মুগ্ধতা এনে দিয়েছে।
নাসির উদ্দিন খান অসাধারণ অভিনেতা। জামশেদ চরিত্রে আরো একবার সেটার ছাপ রাখলেন তিনি। একে আজাদ সেতু আবুল চরিত্রে জমিয়ে দিয়েছেন। যতোটা স্পেস পেয়েছেন তিনি তাতেই নিজের দক্ষতার জানান দিয়েছেন। তবে তরুপের তাসের মতোই মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন রাশেদ মামুন অপু। তিনি স্ক্রিনে এসেছেন একটু দেরিতে তবে এসেই নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন আমাদের। পুলিশ অফিসার হিসেবে অপু তার সিনেমার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন ‘প্রহেলিকা’র মধ্য দিয়ে।
কোনো রকম সন্দেহ ছাড়াই ‘প্রহেলিকা’ অভিনেত্রী হিসেবে বুবলীর নতুন করে জন্ম দিয়েছে। হোয়াট এ পারফরম্যান্স! চারজন বাঘা বাঘা অভিনেতার সাথে একাই পাল্লা দিয়েছেন চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী। এর আগে কোনো সিনেমায় বুবলীকে এতো সুন্দর লেগেছে কিনা তা আমার জানা নেই। নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর হাত ধরে বুবলীর ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায় শুরু হলো ‘প্রহেলিকা’ দিয়ে এটা বলা নিঃসন্দেহে। ঢাকাই সিনেমায় নায়িকাদের যেখানে অতোটা স্পেস দেয়া হয়না সেখানে বুবলী রীতিমতো ডমিনেট করেছে বেশকিছু জায়গায়। অর্পা চরিত্র দিয়ে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে আগামী বছরের পুরস্কার লিস্টে বুবলীর নাম দেখলে অবাক হবোনা।
‘বিশ্বসুন্দরী’ দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে চয়নিকা চৌধুরী যদি রানের খাতা খুলে থাকেন তাহলে ‘প্রহেলিকা’ দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন তিনি রীতিমতো। না নারী নির্মাতা হিসেবে কোনো শ্রেণীতে ফেলছি না, তবে এই সময়ে নারী নির্মাতার সংখ্যা যেখানে হাতেগোনা বিশেষ করে বাণিজ্যিক সিনেমায় সেখানে চয়নিকা চৌধুরী প্রথম সিনেমার অনেক ভুল-ভ্রান্তি শুধরে ‘প্রহেলিকা’ উপহার দিয়েছেন সাবলীলভাবে এটা আনন্দের বিষয়। তিনি নিয়মিত হবেন আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এটাই কাম্য।