রাজশাহীর মেধাবী তরুণদের এক অসামান্য সৃষ্টি ‘শাটিকাপ’
‘শাটিকাপ’ মানে ঘাপটি মেরে থাকা। ‘শাটিকাপ’ নামে ওয়েব সিরিজ প্রকাশ করেছে ‘চরকি’। রাজশাহীর স্থানীয় মেধাবী তরুণদের এ এক অসামান্য সৃষ্টি।
শাটিকাপে মাদক ব্যবসায়ীদের গড ফাদার ‘সোহেল ভাইয়ের’ ভূমিকায় অভিনয় করেছে আমার বহুকালের পুরনো এবং অতি সংক্ষিপ্ত তালিকার গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু মেধাবী গীতিকার ও প্রচ্ছদশিল্পী গালিব সর্দার। আমি পড়ালেখা করেছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময় কেটেছে সেখানে। শুধুই যে পড়ালেখার জন্য রাজশাহী আমার প্রিয়, তা না। রাজশাহীর ভাষা ও আঞ্চলিকতাও আমাকে গ্রাস করে নেয় পুরোপুরি। রাজশাহী আমার বুকের গভীরের অন্য এক প্রেমের নাম। সেই রাজশাহীর ভাষায়, রাজশাহীর লোকাল ক্রাইসিস নিয়ে গল্প, তাও আমার বন্ধু অভিনয় করেছে, সিরিজটাতে জড়িয়ে আছে আরও অনেক প্রিয় নাম, এ তো আমাকে দেখতে হবে আগেভাগেই। রাত জেগে দেখলাম। মুগ্ধ হলাম। স্মৃতি কাতরতা আক্রান্ত করে ছাড়ল।
পদ্মার তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা মাদক ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের জটিল সমীকরণ তুলে এনেছেন নির্মাতা। যে দৃশ্য আমাদের খুব পরিচিত ছিল চব্বিশ পঁচিশ বছর আগেও। পাড়ায় পাড়ায় সিণ্ডিকেট, ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার তাড়নায় জীবন বাজী, সংসারের ছেঁড়াফাটা চিত্র, পড়ার টেবিলে অসাধু হবার ছক নির্ণয়, পালিয়ে বেড়ানো, ইত্যাদি এসেছে একদম নিখুঁত প্রক্রিয়ায়। সিরিজটিতে কিছুই বাদ পড়েনি। একটা ক্রাইসিসের গল্প বলতে গিয়ে সব তুলে আনতে দেখেছি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সিনেমায়। আমাদের দেশে দেখা যায়নি। এবং সাহস করে বলতে হচ্ছে, সিনেমায় পাশের দেশ তুমুল উন্নতির শিখরে পৌঁছালেও মাদক নিয়ে তৃনমূল থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত এভাবে তারাও দেখাতে পারেনি। পর্দায় গল্প এত নিখুঁত হয়, এই যুগে তারা পথিকৃৎ হয়ে থাকবে।
এ তো গেল গল্পের হিসেব। অভিনেতা হিসেবে আমাদের দেশে যখন বড়ো বড়ো অভিনেতাদের বাড়ির সামনে প্রযোজক-পরিচালকেরা খাবার দাবার নিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করেন, এদের ফিল্মে সেসবের বালাই নেই। এখানে যারা অভিনয় করেছে, এদের কাউকে এর আগে কোথাও দেখা যায়নি। আবার মনেও হয়নি এরা অভিনয় জানে না। বরং এরা যেভাবে গল্পে মিশে গিয়েছে, সেটাও অনেকের শিখতে হবে।
এই ফিল্মের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর। এই দিকটা মাথায় রেখে ফিল্ম দেখতে বসলে মনে হবে, এ কোন মাল গো? কার হাতের মুন্সিয়ানা? অসামান্য সব বুক ধুকধুক ব্যাপার ঘটিয়েছেন সাউন্ডে।
সিনেমাটোগ্রাফিতে নান্দনিকতা ও দক্ষতার ছাপ দারুণ থেকেও দারুণ।
মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম ও তার টিমের জয় হোক।
যে মামুর বুটারা শাটিকাপ মাইরে আছেন, এখনও যারা দেখেননি, চরকিতে উঁকি মাইরে ঝেড়ে লিতে পারেন। হেভি শাশপেন্স থাইকছে মনে করেন।