রাত আটটার বাংলা সংবাদের পর ‘শাটিকাপ’
আমরা যখন ছোট ছিলাম টিভিতে যাবতীয় চমক ছিল (শুক্রবার দুপুরের সিনেমা ছাড়া) রাত আটটার পর। সেটা হলো নাটক। ছোটবেলায় একবার আমি হারিয়ে গেছিলাম। বলা যায়, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা। আমাকে এক ভদ্রলোক উদ্ধার করেছিলেন। উনি যখন আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন, একবার মৃদৃ অনুযোগ করেছিলেন এই বলে যে, ‘তোমার জন্য নাটক মিস হবে।’ নাটকের এ প্রতাপ এখনো বহাল।
এত চ্যানেল আসলো, তা সত্ত্বেও বিটিভির সেই ফর্মেট দিয়ে করে খাচ্ছে তারা ও ইউটিউব চ্যানেল। হালে বাংলা ‘ওটিটি’। এমনও আলাপ বোধহয় ছিল যে, যেহেতু সারা দুনিয়ায় এভাবে নাটক বলে কিছু নাই, টেলিফিল্ম একটা ব্যাপার আছে, মূলত এগুলো সিনেমায় (বিজ্ঞাপনও সিনেমা)। কিন্তু বাংলাদেশে এ আলাপ চলে না। এখানে সিনেমা ‘নাটক’ হয়ে ওঠার একটা ব্যাপার আবিষ্কার ফেলছে দর্শক, সেখানে আবার নাটক ‘সিনেমা’ হবে! যাই হোক, এক সময় টেলিছবি বা টেলিফিল্ম বলে একটা জিনিস আবির্ভুত হলো। এর মূল বৈশিষ্ট্য বেশি না, ডিউরেশন মানে কাহিনির আরেকটু ডিটেলিং। হয়তো গান-টান থাকলো। এই যা! এবং ক্রমশ এ সব জিনিসের বিপণনের একটা ভালো মাধ্যম হয়ে উঠলো ইউটিউব। এবং লেজে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার মতো ইউটিউব ভিউ নাটককে নিয়ন্ত্রণ করলো। যাই হোক, সেটা অন্য আলাপ।
মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম পরিচালিত ‘শাটিকাপ’-এর ব্যাপার আসলে কী! ওটিটি বলে ব্যাপারটা বাংলাদেশে শুরু থেকে আরেকটা ইউটিউব বইলা যেন বিবেচিত হচ্ছিল। শুরু থেকে। গল্পের ব্যাপারগুলা ধরেন। ক্রাইম বা খুন-খারাপিকে মুখ্য করে তুললেও আসলে ফারাক কী হইলো তত! একটু গালিগালাজ-একটু বেশি জড়াজড়ি বা বেশি ড্রোনশট বা বাংলা সিনেমার মতো লাউড। মানে এগুলা বাদ দিলে টিভি নাটক হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটা এমন যে, আমাকে সংজ্ঞা দিয়ে বুঝতে হবে কেন? জিনিসটার চরিত্র দিয়ে বুঝতে হবে।
আরেকটা ব্যাপার হলো, টিভি বা ইউটিউব কেন্দ্রিক নির্মাণে ‘সিন্ডিকেটের’ কথা আমরা প্রায় শুনি। এটারে ভালো বা খারাপ সাব্যস্ত করার উদ্দেশ্য আমার নাই। ‘ওটিটি’র স্বল্পদিনের মধ্যে এই ব্যাপারটা যেন ঢুকে পড়লো। টিভি বা ইউটিউবের লোকেরাই এখন সেই ‘ম্যাড়ম্যাড়ে গল্প’ দিয়ে ওটিটি কনটেন্ট বানাচ্ছেন। দু-একটা তো ভালো লাগছে, মনে হচ্ছে,’আচ্ছা, এই গল্প টিভি বা ইউটিউবের নয়’! মানে ক্রিয়েটিভ ইনপুটে নতুনত্ব কিছু নাই। গল্প থেকে নির্মাতা বা অভিনেতা— সবই বিটিভির এক্সটেশন।
এখন ‘শাটিকাপ’ যখন দেখলাম, মনে হইলো, এখান থেকে কোনো কিছু সম্পাদনা করে দিলে টিভি বা ইউটিউব বা রাত আটটার বাংলা সংবাদের পরের অনুষ্ঠান করা সম্ভব না। বরং, এর গুনটা এমনই। এবং কনটেন্টের মর্যাদাটা আমরা এভাবেই ধরতে চাই। গল্পের দিক থেকে সত্য করে বলতে চাইলে, ক্রাইম নিয়ে এখন অনেক কাজ হইলেও এর সম্পর্কে ঢাকার নির্মাণগুলা ভাসা ভাসা। তারা বড় কোনো ক্রাইম সিন্ডিকেটের গল্প বলতে গেলে মনে হয় পাড়ার চোর-চ্যাচড়দের নিয়ে কথা বলছে। অথচ গল্প এই রাজধানীর! সে জায়গায় ‘শাটিকাপ’ তার আঞ্চলিক জায়গা থেকে গল্প বলা বা ঢাকার ক্রিয়েটিভ সাজেশনের বাইরে গিয়া কথা বলছে। গালিগালাজ বহুত, বাট সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স ছাড়া এমন কিছু হইতে পারে সেটা রাজধানীর লোকেরা বুঝতে পারতো কিনা, আমার সন্দেহ আছে! স্টার কাস্ট বা বলিউড ফলো করতে গিয়ে নেটফ্লিক্স বা আমাজন যেভাবে ব্যর্থ সেটাও বলা যাইতো। এখন যেটা থাক। এবং আমার বিশ্বাস, আগের ভালো কিছু কাজ সত্ত্বেও, ‘শাটিকাট’ ষোলআনা ওয়েবের জিনিস। কোনোভাবে রাত আটটার সংবাদের পরের গল্প এতে নাই!