রায়হান রাফীর ‘ফ্রাইডে’ বৃত্তান্ত…
বাংলা ওয়েবসিরিজের একের পর এক ধামাকার মধ্যে আরো একটি নাম যুক্ত হলো, রায়হান রাফী পরিচালিত ‘ফ্রাইডে’। এমন ভয়াবহ বাস্তব গল্প নিয়ে নির্মিত সিরিজের নাম কেন ফ্রাইডে, এমন প্রশ্ন মনের মধ্যে নিয়ে দেখতে বোসলাম, স্বীকার করতেই হয় ‘ফ্রাইডে’ এক দমে দেখে ফেলার মতো সিরিজ এবং তমা মির্জার বক্তব্য অনুযায়ী এটি একা দেখার মুভি৷
স্পয়লার: লেখার প্রয়োজনে গল্পের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ও টুইস্ট তুলে ধরা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ওয়েব ফিল্মটি না দেখে থাকলে এড়িয়ে চলুন
২০২১ সালে রায়হান রাফীর ‘জানোয়ার’ দেখার পর বহু রাত ঘুমাতে পারিনি, সেই একই রকম ঘর – ডার্ক লাইট – রক্ত – ধর্ষণ – আঘাতের দৃশ্য পুনরায় দেখতে পেলাম ‘ফ্রাইডে’তে।
কদমতলীতে কন্যার হাতে বাবা-মা-বোন খুনের গল্পের প্লট থেকে কাহিনীটি নেওয়া যতদূর আমি পড়েছি। হয়তো শুক্রবার রাতে মুনা তার পরিবারের সবাইকে নৃশংসভাবে খুন করেছিল তাই পরিচালক এই নাম বেছে নিয়েছেন। নাম যাই হোক, সিরিজের অভিনেতাদের অভিনয় দক্ষতা আমাকে শেষ অব্দি বসিয়ে রাখতে বাধ্য করেছিল।
আমি প্রথমেই সাধুবাদ জানাই ফারজানা ছবিকে, শ’খানেক সিরিজ না করে তিনি মুনার মায়ের চরিত্রটা বেছে নিয়েছেন বলে। একজন নারী, দুই কন্যা সন্তানের মা, স্বামী সম্প্রতি অন্যথা বিয়ে করে পালিয়ে গিয়েছেন, কোন উপায় না পেয়ে এক বাড়িওয়ালার কাছে আশ্রয় নেন, নিজের শরীর বিলিয়ে দিয়েও যখন তাকে শান্ত করা যায়নি বাড়ির দলিলের বিনিময়ে নিজের বড় কন্যাকে সেই হায়েনার কাছে দিতে তিনি পিছপা হননি। একদিকে অসহায়ত্ব অন্যদিকে লোভ, ফারজানা ছবি প্রতিটি মুহূর্তে খুবই চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেন।
ধর্ষিতা মেয়েকে বুকের মধ্যে নিয়ে হাসতে হাসতে কাদা পাড়িয়ে শরীর ঝাড়া দিয়ে উঠতে বলেন। তাকে ঘুম পাড়ানির গান শোনান, সংলাপ বলার সাথে সাথে তার চোখ-মুখের অভিব্যক্তি দর্শক কাঁপাতে বাধ্য।
কেন্দ্রীয় চরিত্র মুনা, এক কথায় অনবদ্য। একটি সাধারণ মেয়ে থেকে ধীরে ধীরে খুনি হয়ে ওঠা, বড় পর্দায় তমা মির্জাকে দেখার পর ওয়েবসিরিজে এক নতুন মুনাকে আজ আবিষ্কার করলাম। পুরো সিরিজে তার যথেষ্ট গতি আছে, শিশু কন্যার সাথে কথোপকথন অনেক সময় ভয়ের উদ্রেক করেছে।
মুনার বাবা চরিত্রে মোহাম্মদ বারী, স্বামী চরিত্রে নাসির উদ্দিন, ছোট বোন চরিত্রে নীলাঞ্জনা সবাই স্ব স্ব চরিত্রে সাবলীল।
আমি সত্যি সত্যি ধাক্কা খেয়েছি বৃদ্ধ বাড়িওয়ালাকে দেখে। ইনিই যে সেই জাঁদরেল অভিনেতা মনির আহমেদ শাকিল সেটা ইন্ট্রো না দেখলে আমি বিশ্বাস করতাম না। নারী লিপ্সা যেন বাড়িওয়ালার রক্তে রক্তে, প্রথমে মা পরে তার কন্যাদ্বয়, কারো থেকেই লোলুপ দৃষ্টি তিনি সরান না, যখন যেভাবে চেয়েছেন পুরোটা দিতে বাধ্য করেছেন। মুনার স্বামী যখন দলিলে টিপ সই নিতে গেল একজন প্যারালাইজড যেভাবে প্রতিবাদ করে শাকিল আহমেদ তার পুরোটাই দিতে পেরেছেন বলে আমার বিশ্বাস ওই দৃশ্যে। মুনার মায়ের সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্যপট যথেষ্ট দীর্ঘ ছিল, শেষ অব্দি মুনার মাকে বাড়ির দলিল দিয়ে তার জিতে যাওয়ার হাসিটা মনে রাখার মতো।
সিরিজের কোথাও কেউ ঝুলে যায়নি কেবল মুনা যখন মোহাম্মদ বারীর গলা কাটছিল ছটফট করবার দৃশ্যটা আরো বেশি জোরালো হলে আরো বাস্তব লাগতো।
সে যাই হোক, ‘জানোয়ার’ থেকে ‘ফ্রাইডে’ পরিচালক রায়হান রাফী যথেষ্ট ভয়ংকর সব কাজ দেখিয়ে গেছেন, জানি না এগুলো সমাজ পরিবর্তনের দলিল নাকি কেবল গল্প বলে যাওয়া। উদ্দেশ্য যেটাই হোক পুরো টিমকে অভিনন্দন জানাই এবং নতুন সিরিজের অপেক্ষায় থাকলাম।