Select Page

‘মৃত্যুর মুখে’র মধ্যে দিয়ে আমাদের ঠেলে দেন কথিত অশ্লীল ছবির যুগে

‘মৃত্যুর মুখে’র মধ্যে দিয়ে আমাদের ঠেলে দেন কথিত অশ্লীল ছবির যুগে

কিছু সংশয় আমি ফেলে দিতে চাই। যেমন ধরেন, আমি হুট করে বলে ফেলতে চাই ৯০ দশকের বাঙলাদেশের সিনেমার মধ্যে ব্যতিক্রম খুব কম। তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবিগুলো এক গল্পের, উনিশ-বিশ। এক দুর্বল ফ্যান্টাসির জগত। আর আর্ট ফিল্মগুলোও জীবন বর্জিত। ধীর এক কচ্ছপ।

তার মধ্যে মালেক আফসারীর ‘এই ঘর এই সংসার‘ অন্যরকম। এই সিনেমাটা মৌলিক কিনা জানি না। মালেক আফসারী অবশ্য বলেছেন, তিনি মূলত নকল সিনেমার নির্মাতাই, মানে কপিবাজ। আমি অনুমান করি, ‘মৃত্যুর মুখে‘ ছবির মধ্যে দিয়ে তিনি আমাদের ঠেলে দেন কথিত অশ্লীল ছবির যুগে, ১৯৯৮ সালে।

তখন আমি নয় ক্লাসে পড়ি। উঠতি বয়স। শরীর তখন নতুন ভাষা শিখছে। এর মাঝে একদিন স্কুল পালিয়ে রানা সিনেমায় চুপচাপ দেখে ফেলি ‘মৃত্যুর মুখে’। গল্পটা বোধ করি ভারতীয় কোন সিনেমা থেকেই কপি করা। কিন্তু সে সময় তো আর এসব জানতাম না। তাই ভালো লাগে। ডিপফ্রিজে লাশ লুকিয়ে রাখার দৃশ্য দেখে পুলকিত হই। ক্যামেরার কাজ ছিলো ভিন্ন রকম। এই প্রথম ক্যামেরাকে দেখলাম বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে দৃশ্য ধরতে। যেমন ধরেন, নায়কের কোমর থেকে, নায়িকার বুকের পাশ থেকে ইত্যাদি।

সালমান শাহ পরবর্তী সেই শূন্য সময়ে ইলিয়াস কাঞ্চন দীর্ঘদিন পর এই সিনেমায় অভিনয় করে ভালো একটা অবস্থান তৈরি করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে আমরা পরবর্তীতে দেখেছি, নায়ক মান্না সেই ফিল্ড দখলে নিয়ে নেন, মালেক আফসারীর পরবর্তী সিনেমায় নিজেকে যুক্ত করে। আর বোধ করি ইলিয়াস কাঞ্চনও বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে এই ধরণের চলচ্চিত্রগুলোতে অভিনয় করার রুচি হারিয়ে ফেলেন। অভিনয় যেমনই করেন না কেন, ইলিয়াস কাঞ্চন যেহেতু বাঙলাদেশের চলচ্চিত্রের তুলনামূলক শুদ্ধ সময়ের অভিনেতা এবং ভালো মানসিকতা ধারণ করেন, তাই তাকে ছিটকে পড়তে হয়।

যাইহোক, ‘মৃত্যুর মুখে’ সিনেমার একটি দৃশ্যে নায়িকা মুনমুন দৌড়াতে থাকেন, আর প্রচণ্ড ঢেউ উঠতে থাকে সমুদ্রে, গতিশীল হয়ে ওঠা আধখোলা শরীরের অংশ বিশেষ তার শরীর থেকে ছিটকে দূরে কোথাও চলে যেতে চায়। বাঙলাদেশের সিনেমায় এর আগে এমন দৃশ্য ছিলো বলে আমার জানা নাই। এর আগে অশ্লীল বলতে গেলে বৃষ্টিতে ভেজা গানের দৃশ্য ছিলো। যেমন ধরেন, ‘বাংলার কমান্ডো’ সিনেমায় নায়িকা শিল্পীর বৃষ্টি ভেজা গান। কিন্তু এইরকম আধাখোলা বিষয়াদি জীবনের প্রথম দেখা। এবং বয়সটাও একটা বিষয়।

‘মৃত্যুর মুখে’ সিনেমায় সম্ভবত ময়ূরীর অভিষেক। শেষ অবধি যেমন স্থূলকায় হয়ে গিয়েছিলেন ময়ূরী, সে সিনেমায় ততোটা ছিলেন না। তবে যথেষ্ট পুষ্ট ছিলেন। আর গানের দৃশ্যে আঁট-সাঁট ছোট জামায় যেন পৃথিবী ফুঁড়ে বের হয়ে আসতে চাইছিলেন অবাধ্য কুসুম। এক্ষেত্রে অবশ্য ডলি সায়ন্তনীর মাদক কণ্ঠের একটা ভূমিকা থেকে থাকবে, ‘খাপ খোলা তলোয়ার এই রূপে আছে ধার, হয়ে যাবে তুমি খুন’।

এর আগে মানুষের সপরিবারে বাঙলাদেশের সিনেমা দেখতে সিনেমাহলে যেতে ভাবতে হতো না। মানুষ একা সিনেমা দেখতে গেলেও পাশের জনদের সাথে একাত্ম হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু এরপর থেকে মানুষ এইসব সিনেমা দেখতে গিয়ে ক্রমশ একা হয়ে যেতে থাকলো। সিনেমা হলে শতশত মানুষের ভিড়ে ব্যক্তিগত জগতে ঢুকে পড়তে থাকলো মানুষজন।


মন্তব্য করুন