
রিভিউ/ অবাস্তব ঘটনার সমন্বয় ‘কঠিন বাস্তব’
[মনতাজুর রহমান আকবর নব্বই ও পরের দশকের জনপ্রিয় বেশকিছু সিনেমার নির্মাতা। তার পরিচালনায় ‘কঠিন বাস্তব’ সিনেমার নায়ক ছিলেন রিয়াজ ও আমিন খান। এর মাধ্যমে রূপালি পর্দায় অভিষেক হয় নায়িকা কেয়ার। ২০০১ সালের ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ‘কঠিন বাস্তব’ সম্পর্কে রিভিউ প্রকাশ করেছিল তখনকার চালু সংবাদপত্র ‘আজকের কাগজ’। এখানে বাণিজ্যিক সিনেমার অনেক কৃৎকৌশল নিয়ে তাচ্ছিল্য লক্ষ্য করা যায়, যা তখনকার একটি ধারাও বটে। তবে এমন নয় যে সব সমালোচনা অগ্রহণযোগ্য। বিএমডিবির হাতে আসা এ ‘চিত্র সমালোচনা’র লেখকের নাম পাওয়া যায়নি। আর লেখা শিরোনামহীন হওয়ায় আমরা লেখার ভেতর থেকই একটি শিরোনাম বেছে নিলাম।]

এবারের ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলির মধ্যে মনতাজুর রহমান আকবরের ‘কঠিন বাস্তব’ ছবিটিও বিভিন্ন হলে মুক্তি পায়। গত ঈদে আকবরের ‘কুখ্যাত খুনী’ ব্যবসায়িক সফল হওয়াতে অনেকে এ ছবিরও সফলতা কামনা করেছিলেন। কিন্তু উদ্ভট কাহিনী, নায়িকার বেরসিক অভিনয় এবং অবাস্তব কিছু দৃশ্যের সংযোজন, ছবিটিকে সমালোচনার মুখোমুখি করে। এমনকি ছবি চলাকালীন সময়ে অনেক দর্শককে বিরক্তিসূচক উচ্চারণসহ হল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
বিশেষ করে ষাট বছরের বুড়ো রাজ্জাক যখন তিনজন তাগড়া জোয়ানের সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়ী হন, তখন অনেক রাজ্জাক ভক্তও বিস্মিত হন। কারণ যুদ্ধের সময় রাজ্জাক বার বার শূন্যে ডিগবাজী দিচ্ছিলেন। এ বয়সে ডিগবাজী খাওয়া কম কথা নয়। ছবির একটি দৃশ্যে ডিপজলের পালানোর দৃশ্যও ছিলো হাস্যকর। ডিপজল যখন ছোটো একটা জিপ নিয়ে পালাচ্ছিলেন তখন তার জিপের আঘাতে বড়ো গাড়ি বাস-ট্রাক, ট্রেন এমনকি বিল্ডিং-এর এক প্রান্তের দেয়াল দিয়ে ঢুকে অন্য প্রান্তের দেয়াল দিয়ে বের হয়ে গেলেন। কিন্তু তার জিপের সামান্যতম ক্ষতি হলো না।
তাছাড়া ছবির নৃত্যদৃশ্যগুলোও ছিলো বেমানান। অপেক্ষাকৃত স্লিম কেয়া’র সঙ্গে মেদবহুল সখিদের নাচের দৃশ্যে কেয়াকে বেমানান মনে হয়েছে। এতে নৃত্যপরিচালকের অদূরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায়। ছবিতে সমুদ্রের পাড়ে রিয়াজ ও কেয়ার ব্যায়ামের দৃশ্যটি দেখে অনেক দর্শক একে ‘তাল’ ছবির নকল বলে অভিযোগ করেছেন।

ছবিটি ত্রিভুজ প্রেমের বলে ঘোষণা করা হলেও আমিন খানের সঙ্গে কেয়ার প্রকৃত কোন প্রেম খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া রিয়াজের সঙ্গে কেয়াকে মানালেও আমিন খানের দীর্ঘ দেহের সঙ্গে কেয়ার কৃশ দেহ বেমানান মনে হয়েছে। তাছাড়া ছবিটিকে প্রেমনির্ভর ছবি না বলে সন্ত্রাসনির্ভর ছবি বললেই যুক্তিযুক্ত হতো। কারণ ছবির আশি ভাগ সময় জুড়েই সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেখানো হয়েছে।
ডিপজলের অভিনয়ে কোনো নতুনত্ব ছিলো না। তার একই ধাঁচের অভিনয় দেখতে দেখতে দর্শকরা বিরক্ত হয়ে। তাছাড়া ব্যাংককের রাস্তায় রিয়াজের পেছনে আশি মাইল বেগে রাজ্জাকের দৌড় দেখে অনেক দর্শককেই মুখ টিপে হাসতে দেখা গেছে। এ ধরনের বেশ কিছু অবাস্তব ঘটনার সমন্বয়ে কঠিন বাস্তব ছবিটি নির্মিত হয়েছে। জ্ঞানবুদ্ধি বিবর্জিত যে কোনো ব্যক্তিই বাস্তবতা বিবর্জিত এ ছবিটি দেখতে পারেন।