Select Page

রিভিউ: জাগো বাহে

রিভিউ: জাগো বাহে

চরকির তিন পর্বের শর্টফিল্ম সিরিজ ‘জাগো বাহে’। ঘোষণা ও বিজ্ঞাপনে বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। ডিসেম্বরে তিন সপ্তাহে মুক্তি পায় তিনটি পর্ব। এরপর বেশ আলোচনার খোরাক জোগায়।

শব্দের খোয়াব; পরিচালক: সিদ্দিক আহমেদ

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন সময়কালীন ঘটনা। ছা-পোষা, সাধাসিধে এক চাকুরের চরিত্রে চঞ্চল। এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসার এক অফিস। সেখানে বস হিসাবে আছেন এক পাকিস্তানি উর্দুভাষী আর বাকি স্টাফরা বাংলাভাষী। কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঘোষণামত অফিসের বস চায় তার অধস্তন সবাই অফিসে সব সময় বলবে উর্দু নয়তো চাকরি থাকবে না।

উর্দু শেখার সময় বেঁধে দেওয়া হয় এক মাস। চঞ্চলসহ বাকিরা পড়ে মারাত্মক অন্তর্দ্বন্দ্বে। এরা সবাই শুধু পেটের দায়ে চাকরি বাঁচাতে উর্দু শেখা শুরু করে। চঞ্চল বাড়িতেও রপ্ত করা শুরু করে, তার স্ত্রী ফারহানা হামিদ স্বামীকে সহযোগিতাও করতে থাকে। কিন্তু এর মাঝেই অফিসের সবচেয়ে ভালো উর্দু বলতে পারা ছেলেটার চাকরি চলে যায়।

এমন গল্পের শেষটা জানতে সিরিজের প্রথম পর্বটি দেখে ফেলতে পারেন। গল্প সাধারণ, তাতে ভাষার চেতনা আর প্রতিবাদের স্বর আছে তবে প্রেজেন্টেশন আর সেট ডিজাইন ছিল চোখে লাগার মতো। একটি বাড়ি, অফিস আর রাস্তায় শুট হওয়া এই পর্বটি বায়ান্নর একটা ভাইব পাওয়া যায়।

চঞ্চলের অফিস রুমে কান্নার একটি সিন আছে যেটা চঞ্চলের দিনকে দিন অভিনয়ের পোক্ত রূপটা তুলে ধরে। লুৎফর রহমান জর্জ তেমন ভালো উর্দু না বলতে পারলেও তার ডেডিকেশন ভালো ছিল। স্টাফদের মধ্যে এ কে আজাদ সেতু ছিলেন বয়স্ক চরিত্রে খাপে খাপ। চঞ্চলের স্ত্রী চরিত্রে ফারহানা হামিদও ভালো করেছেন।

নির্মাতা সিদ্দিক কাজে একটা রুম ড্রামা ফ্লেভার দিয়েছেন, অভিনেতাদের দিয়ে আদায় করেছেন পারফরমেন্স।

লাইট, ক্যামেরা…অবজেকশন; পরিচালক: সালেহ সোবহান অনীম

সত্তর দশকের শেষ দিকের ঘটনা। খ্যাতিমান নির্মাতা জহির রায়হানের আলোচিত, জনপ্রিয় ও একইসঙ্গে সমালোচিত সিনেমা ‘জীবন থেকে নেয়া’ মুক্তি পায়। প্রথমে তৎকালীন পাকিস্তান সেন্সর বোর্ড সিনেমাটিকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দিলেও সিনেমা মুক্তির পর এর মেটাফোরিক মিনিং ধরে ফেলে শাসকগোষ্ঠী। রাও ফরমান আলীর আপত্তি ও সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে সিনেমাটি হল থেকে নামিয়ে জহির রায়হানকে ডাকা হয় বোর্ডে। এবার সুর বদল করে সিনেমার ওপর চাপানো হয় একের পর এক অবজেকশন।

গল্পের প্লট খুব ইউনিক। ব্যক্তিগতভাবে আমার ইচ্ছা জহির রায়হানকে নিয়ে কাজ করার। এই কাজটি অল্প সময়ের একটি কাল্পনিক প্রকাশ হলেও আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে অনেকটাই। সালেহ সোবহান অনীম সেই ‘তাকদীর’ টিম থেকেই পছন্দের পেছনের লোক। তবে তার পরিচালনা ছিল খুব পোক্ত, ফেস টু ফেস ডায়ালগ ছিল অসাধারণ। আর জহির রায়হানকে কালোত্তীর্ণ প্রতিবাদী তবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল যে ক্যারেক্টারাইজেশন করা হয়েছে সেটা বেশ ভালো লেগেছে।

প্রথমদিকে গাজী রাকায়েত, অপর্ণাসহ বোর্ডের লোকদের কথোপকথন কিছুটা ভাসা ভাসা ও বিচ্ছিন্ন লাগছিল। তবে ইন্তেখাব দিনার আসার পরই গল্পে মেজাজ চলে আসে। মোস্তফা মনোয়ার দিনকে দিন যেন আরও ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নিজেকেই। স্পেশাল ধন্যবাদ পাবে যারা সেট ডিজাইন ও পোশাক, মেকআপের কাজ করেছেন।

জাগো বাহে’তে বাংকার বয়ই সেরা; পরিচালনা: সুকর্ণ শাহেদ ধীমান

মাত্র দুজন অভিনেতা, দুজনেই সমান লিড দিচ্ছেন। একটা মাত্র সেট তাও আবার রাতের। মুক্তিযুদ্ধের মতো বড় ক্যানভাসকে দুজন ঘোরশত্রুর চোখ দিয়ে দেখানোর চ্যালেঞ্জ, সেখানে মানবতার আসা-যাওয়া। আধঘণ্টার মতো সময়ে ওপরের এই চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে একেবারের ভাবনার বাইরের এক একাত্তরকে দেখালেন সুকর্ণ শাহেদ ধীমান।

‘বাংকার বয়’ নাম শুনেই বোঝা যায়— এখানে বাংকার আছে, বয়ও আছে। অল্পবয়সী একটি ছেলে যার চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবদুল্লাহ আল সেন্টু, গল্পের শুরুতেই যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাংকারে তার পদচারণা। সেই বাংকারে মৃত পাকিস্তানিদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লাশও। তবে এই ছেলের কাজ খুব অদ্ভুত, সে লাশের জুতা আর এটা-সেটা ব্যাগে পুরছে। তবে সে ধরা পড়ে এক পাকিস্তানি আর্মির কাছে, যে মৃত সেজে সেখানে শুয়ে ছিল। ঘটনাক্রমে ওরা দুজনই ওই রাতে বাংকারে আটকা পড়ে আর নিজেদের অবস্থান  নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধ আর যুদ্ধের পেছনের গল্প নিয়ে যার যার জায়গা থেকে কথাবার্তা বলে শত্রুতা বজায় রেখে। পাকিস্তানি আর্মিটির মূল লক্ষ্য এই বাঙালি ছোকরাকে কাজে লাগিয়ে ইন্ডিয়ান আর্মিদের ক্যাম্পে গিয়ে আত্মসমর্পণ করা। কিন্তু বাঙালি ছেলে চায়, আর্মি লোকটি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করুক।

…..

‘জাগো বাহে’ সিরিজে প্লট, চ্যালেঞ্জ, পারফরমেন্স, সেট ডিজাইন ও গভীরতা বিবেচনায় ‘বাংকার বয়’ সেরা মনে হয়েছে। মঞ্চ থেকে আসা নবাগত সেন্টু পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন মোস্তাফিজুর নুর ইমরানের সঙ্গে। যদিও ইমরানের উর্দুতে ডায়ালগ খুব স্বাচ্ছন্দ্য লাগেনি তবে পারফরমেন্স দুজনকেই লাইমলাইটে রেখেছে। ক্লাইম্যাক্সটা খুব সাধারণ, ভাবনার ভেতরেই রাখা হয়েছে।


মন্তব্য করুন