রিভিউ/ স্বাভাবিক বিনোদনের ছবি ‘প্রিন্সেস টিনা খান’
আখতারুজ্জামান পরিচালিত ‘প্রিন্সেস টিনা খান’ মুক্তি পায় ১৯৮৪ সালে। যাত্রাশিল্পীদের জীবনকাহিনি অবলম্বনে এ ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাও করেন টিনা খান। ১৯৮৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সংখ্যা বিচিত্রায় সিনেমাটির রিভিউ লেখেন নীনা ইব্রাহিম। পড়ুন সেই রিভিউ-
স্বাভাবিক বিনোদনের ছবি হিসেবে ‘প্রিন্সেস টিনা খান’ এদেশের চলচ্চিত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। প্রতিটি সিকোয়েন্স এবং প্রতিটি দৃশ্যে আছে সুন্দর কম্পোজিশন ঘটনায় আছে বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গতিময় ক্যামেরা।
এখানে নাচ আছে, গান আছে কিন্তু তা এসেছে ঘটনার অনিবার্যতা নিয়ে। ধান- ক্ষেতে মোড়লের মেয়ের লম্ফ নৃত্যের গান এখানে নেই। যাত্রা দলের প্রিন্সেসের নাচ আর গান এসেছে চরিত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
প্রিন্সেস টিনা খানের ব্যক্তি জীবনের পরিচয় দিতে গিয়ে পরিচালক একই সঙ্গে দেখালেন আমাদের সমাজে নারীর অসহায়ত্ব। যাত্রা দলের নর্তকীর ব্যক্তি জীবনে যে ট্র্যাজেডি থাকে সেটা অনেকেরই কম-বেশি জানা। কিন্তু এই ট্র্যাজিক উপাদান নতুন ব্যাখ্যায় উপস্থিত করেছেন পরিচালক আখতারুজ্জামান।
কাহিনী সংক্ষেপে এরকম: বাল্য প্রেমিক মজিদের সঙ্গে বিয়ে না হয়ে তসলিমার বিয়ে হয় মামাতো ভাই আব্বাসের সঙ্গে। বিয়ের পর তসলিমা ঢাকা আসে স্বামী যেখানে একটি কলেজের শিক্ষক। স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর পর ঢাকায় একমাত্র পরিচিত স্বামীবন্ধু আসাদের বাড়িতে চলে আসে তসলিমা একান্ত বাধ্য হয়ে। কিন্তু আসাদের দাম্পত্য জীবন মোটেই সুখের নয়। তসলিমার এখানে আসার পর আসাদ ও তসলিমার যৌন অনুভূতি অত্যন্ত মার্জিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে তাদের মনের গোপনে যে আকাঙ্ক্ষা ঝড় তোলে তা একদিন আসাদের স্ত্রী আসাদের মাঝে আবিষ্কার করলে তসলিমা এই আশ্রয় ছেড়ে আগের বাড়িতে চলে যায়। পরিবেশ আর পারিপার্শ্বিক প্রয়োজনে তসলিমা নারী ব্যবসায়ীর হাত ঘুরে যাত্রা দলে নর্তকী হয় প্রিন্সেস টিনা খান নামে। মজিদ একই যাত্রাদলের পালা লেখক, তসলিমার পরিবর্তনে সে মনে মনে দগ্ধ হয় কিন্তু কিছুই করতে পারে না। হঠাৎ সরকারি নির্দেশে যাত্রা দলে প্রিন্সেস নৃত্য বন্ধ হয়ে গেলে তসলিমা এবার আশ্রয় তবে নেয় অর্থ ও নারীলিপ্সু চৌধুরীর কাছে। চৌধুরীর বন্ধুর বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে আসাদের সঙ্গে দেখা হলে তসলিমা তাদের আলাদা হয়ে যাওয়ার খবর পেল। জন্য নিজেকে অপরাধী মনে করে সে আসাদের স্ত্রীর কাছে যায়। আসাদের স্ত্রী তসলিমার ভাগ্যবিপর্যয়ে সহানুভূতি নিয়ে এগিয়ে আসে, সে মজিদের সঙ্গে দেখা করে সব খুলে বললে মজিদ শহরে এসে তসলিমাকে নিয়ে যায়। আয়োজন হয় বিয়ের। কিন্তু চৌধুরীর দল তসলিমাকে অপহরণ করতে এসে ব্যর্থ হয়ে তার মুখে ছড়ে দেয় এসিড। তসলিমার সুন্দর মুখ পুড়ে যায়। তাকে মুমূর্ষ অবস্হা নেয়া হয় হাসপাতালে। মজিদ প্রতিশোধ নিতে হত্যা করে চৌধুরীকে। মজিদ খুনের মামলার আসামী হিসেবে বন্দী হয়। আসাদ তাকে বাঁচাবার চেষ্টা করে।
ঘটনা বিন্যাসে হয়ত দু’একটা অসঙ্গতি ধরা পড়বে যেমন; নারীর প্রতি চরমভাবে আকৃষ্ট হিসেবে চিহ্নিত চৌধুরী তসলিমাকে একা পেয়েও ওভাবে ছেড়ে দেবে তা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না, আসাদের স্ত্রী রানু যেখানে নিজেই বলছে সে তার স্বামীকে সুখী করতে পারে না সেখানে আসাদ অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে দেখে রানুর রাগ করে সংসার ত্যাগ এবং আসাদকে ক্ষমা না করা মোটেও স্বাভাবিক নয়।
তবে ‘প্রিন্সেস টিনা খান’ একটি সুস্থ বিনোদনের ছবি এ কথা ঠিক। ‘স্থুল লম্ফ বিনোদনের’ এবং মারদাঙ্গার অত্যাচারের বিরুদ্ধে এটি যেন নীরব প্রতিবাদ। দর্শকের জন্য এক ঝলক আশার ইঙ্গিত।
*রিভিউর কোনো শিরোনাম ছিল না। নতুন শিরোনামটি বিএমডিবির দেয়া।