Select Page

লাভার নাম্বার ওয়ান – দরকার নেই এমন মানহীন ছবির

লাভার নাম্বার ওয়ান – দরকার নেই এমন মানহীন ছবির

lover-no-1-bappy-pori-moni-bangla-movie-2বাপ্পী এক মাজারের খাদেম। মিশার সাথে তার পুরনো শত্রুতা। তার সূত্র ধরে মিশার লোকেরা রাস্তায় সবার সামনে বাপ্পীর হবু বউ তানিয়া বৃষ্টিকে নগ্ন করে ধর্ষণ করতে যায়। বাপ্পী তার প্রতিবাদ করতে পারে না। শুধু মনে মনে ফুঁসতে থাকে। ছবির ভাষায়, এক সময়ের সিংহ বাপ্পী এখন বিড়াল হয়ে গেছে। পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও বেঁচে আছে নারীদের মত। কিন্তু কেন? তার উত্তর জানতে ফিরে যেতে হবে তিন মাস আগে, যখন থেকে শুরু হয়েছিল বাপ্পী আর পরী মনির প্রেম। এমনই কাহিনী নিয়ে ‘লাভার নাম্বার ওয়ান।’

কাহিনী সম্পর্কে কি আর বলব? আসলে কি ছবিতে কাহিনী বলতে কিছু আছে? দর্শক হিসেবে আমার পক্ষে তা বুঝে ওঠা সম্ভব হয় নাই। শুধু এটুকু বুঝেছি, পরিচালক বাংলা ছবির চিরাচরিত ফর্মুলায় কিছু একটা বানাতে চেয়েছেন, যাতে কাহিনী না থাকলেও কিছু গান থাকবে, একশন থাকবে, আইটেম নাম্বার থাকবে – আর এই সব কিছু ছবিটাকে আড়াই ঘন্টার মত টেনে নিয়ে যাবে।

ছবির সংলাপ খুবই হাস্যকর। চিত্রনাট্য সে তুলনায় কিছুটা ভাল যে কারণে কাহিনীহীনতা সত্ত্বেও দর্শক মাঝেমধ্যে ছবির ওপর একটু আধটু ইন্টারেস্টেড হবে। পরিচালনাও ছবির অন্যান্য সব দিকের মতই তথৈবচ। ছবি দেখে মনে হল, ছবিটাকে একটা নির্দিষ্ট ফর্মুলায় ফেলেই পরিচালক খালাস। সে কারণে গোটা ছবিতে কোথাও একটু যত্নের ছাপ চোখে পড়ল না। নির্মাণের ভুলত্রুটি ও দুর্বলতার কথা না বলাই ভাল, কারণ একবার শুরু করলে থামতে থামতে সন্ধে ঘনিয়ে আসবে।

এই ছবির গানগুলো খুব ভাল না তবে একেবারে খারাপও না। কিন্তু গানে নায়িকাদের বাজে কস্টিউম, নাচের উরাধুরা কোরিওগ্রাফি আর সার্বিকভাবে দুর্বল পিকচারাইজেশনের ফলে গানগুলো শেষ পর্যন্ত আর রুচিসম্মত থাকেনি। তবে ‘তুমি ছাড়া একদিন’ গানটা ব্যতিক্রম। এই গানের রোমান্টিক ও স্যাড – দুই ভার্সনই ভাল লেগেছে।

এবার আসি অভিনয়ে। এটা বোধহয় বাপ্পীর ১৮ নম্বর ছবি। কিন্তু এ ছবিতে তিনি যে অভিনয় দেখিয়েছেন, তা দেখার পর কেউই সে কথা বিশ্বাস করতে চাইবে না। যে ছেলেটাকে ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম ভবিষ্যৎ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সে অভিনয়ে এতটা ক্যালাস কিভাবে হয়? তবে তার নাচ ও একশন বেশ ভাল। বিশেষ করে তার একশন সত্যিই ইমপ্রেসিভ। কিন্তু তার চেহারা ও অভিনয়ই তার একজন পূর্নাঙ্গ একশন হিরো হয়ে ওঠার পথে প্রধান অন্তরায়। পরীমনির অভিনয়ও হতাশাজনক। তার ডায়লগ ডেলিভারিতে অনেক সমস্যা আছে। তবে তার এক্সপ্রেশনগুলো বেশ ভাল ছিল। আমার বিশ্বাস, পরিচালক যদি ইচ্ছা করতেন তাহলে সহজেই পরীমনির কাছ থেকে ভাল কিছু বের করে আনতে পারতেন। কিন্তু তা পরিচালক করেন নাই। তাই গোটা ছবিতে পরীমনির ক্লিভেজ যতটা না নজর কেড়েছে, তার অভিনয় তার এক-তৃতীয়াংশও নজর কাড়তে পারেনি। আর তানিয়া বৃষ্টি… এই মেয়েটার ছেলেমানুষি অভিনয় নিয়ে কি আর বলব। তার অভিনয় একটিবারের জন্যেও সাবলীল লাগেনি।

এছাড়াও এ ছবিতে রয়েছেন আরও তিনজন গুনী অভিনেতা – মিশা সওদাগর, আলীরাজআফজাল শরীফ। মিশা বরাবরের মত ভাল। তিনি একাই ছবিটাকে অনেকাংশে দর্শনযোগ্য করে তুলেছিলেন। আলীরাজও নিজগুণে ভাল। কিন্তু ছবিতে তার কাছ থেকে যতটা দরকার, ততটা আদায় করতে পারেননি পরিচালক। এটা পরিচালকের ব্যর্থতা। আফজাল শরীফকেও খুব একটা সপ্রতিভ লাগেনি। তারপরও তিনি নিজের উপস্থিতি মোটামুটি ভালভাবেই জানান দিয়েছেন।

সবমিলিয়ে অনেকাংশে মানহীন একটা ছবি লাভার নাম্বার ওয়ান। এত নেগেটিভ রিভিউ দিয়ে হয়ত অনেক তথাকথিত চলচ্চিত্রপ্রেমীর রোষানলে পড়ব। কিন্তু আমি আমার নিজের জায়গা থেকে পরিষ্কার। বাংলা চলচ্চিত্র যখন ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন একটা বি গ্রেডের ছবিকে ভাল বলা আত্মহত্যার সামিল। এই ছবি হিট করলে যতটা না মঙ্গল হবে বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য, ফ্লপ করলে তারচেয়ে বেশিই মঙ্গল। কারণ এই ছবি ব্যবসায়িকভাবে মার খেলে ওমর ফারুক বা তার মত পরিচালকেরা পুনরায় এইধরণের ছবি বানানোর সাহস পাবেন না।


Leave a reply