‘লাভ ম্যারেজ’র নির্বোধ তুলনা
বর্তমান বাংলা চলচ্চিত্রে শাকিব খান নিঃসন্দেহে বড় একটি বিষয়। শাকিবের নামেই একটা সিনেমা চলে। রয়েছে তার বিপুল ভক্ত। তাই ঈদে শাকিবের তিনের অধিক সিনেমা মুক্তির রেকর্ড আছে। শাকিবের সিনেমা যা-ই ব্যবসা করুক, কোনো পরিচালক বলেন ফ্লপ হয়েছে। এবার মুক্তি পেয়েছে মাত্র ১টি চলচ্চিত্র। ফলে তা নিয়ে ভক্তদের আগ্রহ বাড়াবাড়ি রকমেরই হবে— তা স্বাভাবিক। মজার বিষয় হলো, শাকিব-অপুর ‘লাভ ম্যারেজ’ সিনেমা মুক্তির প্রথমদিনের অবস্থা দেখে তুলনা করা হচ্ছে তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত এবং অঞ্জু ঘোষ ও ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনীত ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র সঙ্গে।
এ শিরোনামে একটি অনলাইনে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে প্রদর্শক-পরিচালকের মন্তব্যও আছে। বলা হচ্ছে প্রথমদিনের ভিড় দেখে মনে হচ্ছে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’কে ছাড়িয়ে গেছে শাহীন সুমনের সিনেমাটি। যদি এ দিনের ব্যবসায় নিয়ে এ অবস্থা হয়, তাহলে সপ্তাহব্যাপী ভিড় হলে তুলনা কোথায় যাবে কেউ জানে না। কারণ সবচেয়ে সফল সিনেমাটির সঙ্গে তুলনা প্রথমদিনেই করা হয়ে গেছে।
সিনেমা হিসেবে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র স্থান বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক উপরে। এর নির্মাণ, কাহিনী, বড় ক্যানভাস, কাহিনীর সামাজিক ভিত্তি, নারী অবস্থানসহ নানা কারণে চলচ্চিত্রটি ক্লাসিক মর্যাদা হয়েছে। তার কোনোটির সঙ্গে নিশ্চয় ‘লাভ ম্যারেজ’র সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে না। তাহলে কিসের ভিত্তিতে?
ব্যবসার ভিত্তিতে! আসলেই কী একদিনের ব্যবসা থেকে সেটা ধারণা করা যাবে! কারণ অনেক সিনেমা প্রথম কয়েকদিন হাউজফুল হলেও মঙ্গলবার থেকে ফাঁকা যায়। এ ছাড়া ‘লাভ ম্যারেজ’ কতটা হাইপ তৈরি করেছে তার কোনো তথ্য নেই।
আবার ব্যবসার কথা চিন্তা করলে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ সারাবছর, এমনকি পরের কয়েকবছরেও প্রদর্শিত হয়েছে। সে সময় দেশে একহাজারের বেশি সিনেমা হল ছিল। এমন কোনো হল ছিল না— যেখানে সিনেমাটি চলেনি। এমনকি একবার প্রদর্শনীর কয়েক মাস আবারো প্রদর্শিত হয়েছে। আবার কোথাও এক-দুইমাস চললেও, বেশির ভাগ শো ছিল হাউজফুল। তা হলে কিভাবে তুলনাযোগ্য। ‘লাভ ম্যারেজ’ যদি দেশের সব হলে চলেও তার সংখ্যা মাত্র তিনশয়ের কাছাকাছি। তিনশ হলে হাউজফুল হলেও তা দিয়ে কি একহাজার হলের সঙ্গে তুলনা চলবে! এ ছাড়া বর্তমানে সিনেমার লাইফটাইম কম, একটা সিনেমা কয়েক সপ্তাহ বাদেই দর্শকের আগ্রহ জাগাতে পারে না। তার প্রধান কারণ একই কাহিনী, একই নায়ক-নায়িকা, একই বাবা-মা ও একই ভিলেন।
এমনকি টিকিটের দামের সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতির তুলনা করলে এ অঙ্ক মোটেও সুখকর নয়। কারণ মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনা করলে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র আয় বাড়বে বৈ কমবে না।
‘বেদের মেয়ে জোসনা’ এমনি এমনি ব্লকবাস্টারের মর্যাদা পায়নি। কারণ এ সিনেমা অনেক মানুষ বারবার দেখেছে, গল্প করেছে— তার সুনাম মুখে মুখে রটে গিয়েছিল। তাদের মনে হয়েছিল এ সিনেমা না দেখলেই নয়। দেখতে না পারায় অভিমান করে অনেকে আত্মহত্যাও করেছেন। ফলে এমন নির্বোধ তুলনা বাংলা সিনেমার জন্য ক্ষতিকর। তার অর্জন ও ঐতিহ্যের প্রতি অবমাননার সামিল। সঙ্গে সঙ্গে শাকিবকেও নিচে নামাবে।