লিডার আমিই বাংলাদেশ: এক সিনেমায় অনেক কিছু, এটাই ঝামেলা
সেট বা লোকেশন তিন রকম হয়। একটা প্রাকৃতিক, যেখানে সবকিছু প্রাকৃতিকভাবেই প্রস্তুত থাকে। অর্থাৎ পুরোপুরি বাস্তব। একটা ডামি, যেখানে কোনো রকম একটা কিছু থাকে। তার পুরোটাই কাল্পনিক, কখনো ভালো কখনো হাস্যকর। আরেকটা বাস্তবতার খুব কাছাকাছি। অর্থাৎ সবকিছুই তৈরি করা অথচ মনে হচ্ছে সত্যিকারের কোনো লোকেশন।
শুরুতে ভালো ব্যাপারগুলো আলাপ করি
‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’ সিনেমার সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক হচ্ছে মহল্লার সেট। কাছাকাছি সময় বাদ, দূর অতীতেও এতটা বাস্তবসম্মত সেট কোনো সিনেমায় দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। কাদায় ভরা মহল্লার রাস্তা, রাস্তার দূর্ভোগ সবকিছুই বাস্তবসম্মত ছিল।
সিনেমার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, স্ক্রিন কখনো খালি বা স্থির ছিল না। মানুষ ও যানবাহনের ছোটখাটো পাসিং শটগুলো পুরোটা সময় বাস্তবতার অনুভুতি দিয়েছে। যেন চোখের সামনে মহল্লা দেখছি। উড়াধুরা ফাইট অনুপস্থিত থাকায় ভালো লেগেছে। আবার ভিলেনের সঙ্গে নায়কের মুখোমুখি হবার প্রতিটি দৃশ্য চমৎকার। কারণ আগের দৃশ্যগুলোতে প্রেক্ষাপট প্রস্তুত করা ছিল। ফলে হলে শিস ও তালি দুটোই বেজেছে।
ইনডোর-আউটডোর সব লোকেশনই খুব খুব ভালো। শাকিবের অতি সাধারণ কস্টিউম ভালো লেগেছে। অন্যদিকে বুবলীর চরিত্রানুযায়ী বিরক্তিকর কস্টিউমও মানানসই।
সিনেমার আরো একটি দুর্দান্ত ব্যাপার হচ্ছে, অনেক অনেক চরিত্র ছাড়াও নানাভাবে প্রায় শ’খানেক আর্টিস্ট কয়েকবার একত্রিত হলেও কোনো ফলস লুক বোধহয় নাই। অন্তত আমার চোখে পড়েনি। এই অসাধ্যটা কীভাবে সাধন করেছে, তা পরিচালকই জানে।
মন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের কথপোকথনগুলো মজার ছিল। অন্যদিকে শাকিবের সঙ্গে কয়েকবার দেখা হওয়া পুলিশ কর্মকর্তার অভিনয় আলাদাভাবে চোখে পড়েছে।
গল্পসহ কিছু সংলাপ ভালো ছিল। ক্যামেরা-ফ্রেমিং সহজসরল ও উত্তম।
এবার ভালো না লাগা ব্যাপার
টাইটেলে ‘কথা আছে’ গানটা ব্যবহার হওয়ায় গানটা টিকে গেছে। কিন্তু শেষের গানটা অপ্রয়োজনীয়।
অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে গল্পটি নির্মাণ করায়, ব্যাপারগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও সিনেমাটা মার খেয়েছে এই একটা মাত্র পয়েন্টে। এক সিনেমায় এতগুলো বিষয় আনা ঠিক হয়নি। সর্বোচ্চ তিনটা বিষয় নিয়ে গল্প তৈরি হলে স্ক্রিন পুরোদমে জমজমাট হতো। প্রথমার্ধ কয়েকটা লুপহোলে আটকে না গেলে টানটান গল্প পাওয়া যেতো।
সিনেমাটির মূল বিষয় হচ্ছে
আমরা সবাই রাজা। নাগরিক কীভাবে সরকার হয়ে উঠতে পারে তা দেখানো হয়েছে। তবে আগের বাক্য দুটো পড়ে ম্যাড়ম্যাড়ে আর্ট ফিল্ম ভাবার প্রয়োজন নেই। মাসালা ফর্মুলাতেই এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের দুর্নীতি, সড়কে ভিআইপি তাণ্ডব, ভিক্ষা বাণিজ্য, হাসপাতালের দুর্নীতি ও অবৈধ বাণিজ্য, ঘুষ, ছাত্র রাজনীতি ইত্যাদি নানা বিষয় দেখানো হয়েছে সিনেমাটিতে।
শেষ পরিণতি
জনতাই সব শক্তির উৎস। জনতা, রাজনীতি ও প্রশাসন যখন ঐক্যেবদ্ধ হয়, তখন কোনো অপশক্তিই টিকে থাকতে পারে না।
শেষ কথা
তরুণ নির্মাতা তপু খানের প্রথম সিনেমার এটি। তার ওপর শাকিব খানকে নিয়ে সমাজ সচেতনতামূলক মাসালা সিনেমা। শাকিবকে তার ঘরানার বাইরে আনা চাট্টিখানি ব্যাপার না। এরও বাইরে সিনেমাটির শুটিং শুরু হবার পর থেকে শেষ পর্যন্ত যত মহাতাণ্ডব এবং বিপর্যয় গিয়েছে শাকিব ইস্যুতে, সেগুলো সামাল দিয়ে সুস্থভাবে সিনেমাটি মুক্তি দিতে পারাটা অনেক বড় অর্জন ও বিজয়। তপু খান পাগল হয়ে মানসিক হাসপাতালে না গিয়ে কীভাবে পুরো ব্যপারটায় উৎরে গেল, সে ইতিহাস কখনো জানা গেলে মন্দ হতো না। হয়ত সেটাই আরেক সিনেমার কাহিনি।
নবীন, তরুণ পরিচালক হিসেবে, তার অভিষেক সিনেমাতে টুকটাক যে অতৃপ্তিগুলো রয়েছে, দর্শক হিসেবে চাইলেই সেসব ব্যপারে ছাড় দেয়া সম্ভব। কারণ অভিজ্ঞরা এখনো যা করছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ভালো সিনেমার নির্মাণ করেছে তপু খান। সত্যিই সত্যিই এটি একটি সাহসী সিনেমা।
তপু খানের আগামী সিনেমার অপেক্ষায় রইলাম।