Select Page

শতভাগ বিনোদনে ঠাসা ব্ল্যাকমেইল

শতভাগ বিনোদনে ঠাসা ব্ল্যাকমেইল

Blackmail (ঘুর্নিঝড়ের কবলে ডুবে আছে পুরো শহর। এর মধ্যেই বেঁচে উঠেছে দুটো তাজা প্রান। জীবন চলার পথে অরিন আর মুসকান পরিনত হয় মহিলা গুন্ডায়।এই দুটো চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছে পূজা আর তিথি। ছবিটি দেখার পর জানতে পারলাম এটি হিন্দী গুন্ডে ছবি থেকে কপি করা হয়েছে, যদিও অনন্য মামুন শুরু থেকেই দর্শকদের এমন মুগ্ধতায় নিয়ে গিয়েছিলেন যে ছবির পান্ডুলিপি কোথা থেকে নকল করা তা নিয়ে ভাবার অবকাশ আমরা পাইনি। বিশেষ করে চমৎকার কিছু সংলাপ চরিত্রেরর মধ্য দিয়ে খুব সাবলীল উপস্থাপন করেছেন পরিচালক।

ব্ল্যাকমেইল চমৎকার সমন্ব্য় করিয়েছে -টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র দুই ধারার শিল্পীদের। এক্ষেত্রে হোটেলের ম্যানেজার চরিত্রে সোহেল রশিদের নাম উল্লেখ না করলেই নয়। তাকে আমি চিনেছি একজন পরিশুদ্ধ লেখক এবং নাটকের অভিনেতা হিসেবে। কিন্তু পূর্নদৈর্ঘ্য বাংলা ছবিতে এমন নেগেটিভ চরিত্রে তার সাবলীল অভিনয় আরো বেশি মুগ্ধ করেছে। টিভি নাটকের আর একজন অভিনেত্রী যে কিনা দাদা ভাইয়ের বোনের চরিত্রে অসাধারন প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে। এই দুজন বাংলা ছবির সম্ভাবনাময় ভিলেন –এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

এবার দেখা যাক ছবিতে কি আছে। একটি পুরোদস্তর বাংলা ছবি হবার জন্যে যা যা দরকার তার সবটাই দিয়েছেন অনন্য মামুন। একশন, গানের দৃশ্য, সংলাপ, অভিনয়ের ভেরিয়েশন, চরিত্রের আচমকা পরিবর্তন-এক কথায় বলা যায় এক দমে শেষ করে নেওয়ার মতোন একটি ছবি। অনেক সময় প্রেমের দৃশ্য দেখলে আমাদের একঘেঁয়ে মনে হয়, কিন্তু এই ছবির গান গুলো এমন সময় মতোন প্রেজেন্ট করা হয়েছে যে মনেই হয়েছিল এখানে গান হলে ভালো হতো। তবে মৌসুমী এবং ববিকে সমান তালে উপস্থাপন করতে গিয়েও ববিকে মনে হয়েছে রোমান্টিক দৃশ্যে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এর মূল কারন কি শুধুই রোমিও তাকে ভালোবেসেছে বলে নাকি ববি সিনিয়র নায়িকা বলে। এখানে একটা কথা উল্লেখ না করলেই নয় যে মৌসুমী বাংলা ছবিতে নতুন হলেও অভিনয় দক্ষতায় কিন্তু ববির চেয়ে অনেক মেধাবী। একশন দৃশ্যে তার শারীরিক গঠন অনেক বেশি মাত্রায় সাপোর্ট দিয়েছে।

hot photos from blackmail bangla film with bobby moushumi hamid

নারীর শরীর দেখিয়ে অথবা পুরুষকে প্রাধান্য দিয়ে ছবির মার্কেটিং আর কতো কাল হবে এই দেশে ? পুরো ছবি দেখলেই বোঝা যায় এখানে রোমিওর কোন কেরামতি নেই, সব কেরামতি নারী চরিত্রকে ঘিরে

অন্যদিকে ববিকে রোমান্টিং দৃশ্যেই বেশি ভালো লেগেছে, মারামারির দৃশ্যে খুব একটা মানানসই লাগেনি। মিলনের সাথে মৌসুমীর আরো একটা গান হলে সমান সমান লাগতো, আগাগোড়াইতো তারা সমানে সমানে ছিল। সে যাই হোক গানের ক্ষেত্রে যে সাহসিকতার পরিচয় অনন্য মামুন দিয়েছেন তা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। একটুও ভাল্গার মনে হয়নি –“তোকে ছাড়া আর ভাল্লাগেনা…। “গানটি ইউটিউবে খুঁজে পাবো বলে আমার বিশ্বাস। এখন এই দুই সিংহীর মাঝখানে মিলন কে কি আদৌ সিংহের মতোন মনে হয়েছে মিলন অর্থাৎ রোমিওর উপস্থিতি?- তা নিয়ে আমার মনে শংসয় আছে। কারন মিলন একজন দক্ষ অভিনেতা, কিন্তু বানিজ্যিক ছবির ফুল প্যাকেজ নায়ক হবার মতোন যোগ্যতা তার আছে কিনা তা ভাব্বার বিষয়। আর মৌসুমী হামিদের সাথে তার বয়সের পার্থক্য ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।

এখন একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। কমার্শিয়াল ছবি করতে গেলে পোশাক আশাকেও অনেক আধুনিক হতে হয়। আর আধুনিক হবার মানেই যে খোলা মেলা কাপড় বা সর্বদা টাইট শার্ট প্যান্ট পড়তে হবে এমন কোন মানে নেই। এই ছবিতে যিনি চত্রিত্রের অংগস্বজ্জা করেছেন তিনি লক্ষ করলেই দেখবেন ছবির শেষ দৃশ্যে দাদাভাইয়ের মৃত্যূর প্রতিশোধ নিতে মেয়েটি তার গায়ের শাড়ি খুলে ফেলে। ভেতরের যে কাপড়টি বেরিয়ে আসে তা দেখার জন্যে আমরা প্রস্তুত ছিলাম না মোটেও। মেয়েটি যদি মোটা না হয়ে একদম স্লীম হতো বিষয়টা চোখে লাগতো না, সে কেবল উতড়ে গেছে তার অভিনয় গুণে। আবার অন্যদিকে মৌসুমীর গায়ের রঙ বেশ কালো। সে জন্য তাকে তার সাথে মানিয়ে যায় এমন পোশাক পড়ানো দরকার মনে হয়েছে। টাইট গেঞ্জি আর জিন্সের মাঝখানে মেদ সর্বস্ব পেট দেখতে কারো ভালো লাগবে না নিশ্চইই। যদি নকল করতেই হয়, পুরোটা করাই ভালো। শিল্পা-শেঠি বা প্রিয়াংকা চোপড়ার চেহারা লাগেনি দর্শকের মন জয় করতে, কেবল অভিনয়ের প্রতি যত্শীলতা আর নিজের ফিগাররের প্রতি সচেতনতা থাকলেই যথেষ্ট।
মিশা সওদাগরের কথা আর লিখবো না। কারন তাকে নিয়ে এতো বেশি প্রশংসা করেছি যে এখন নতুন কোন শব্দ পাচ্ছি না। তাকে ছাড়া একটা তিন ঘন্টার ছবি দেখা এখন সত্যি অনেক কঠিন কাজ বলে আমার মনে হয়। সে যাই হোক, ছবির গল্প নকল হোক আর আসল, পরিচালক আমাদের কোথাও দম নেওয়ার সুযোগ দেন নি। এক কথায় পুরো পয়সা উশুল করেই ঘরে ফিরেছি। আর মনে মনে গাইছি-আইসক্রীমের মতো আমার ভীষন কুল…তোর সাথে প্রেম করিতে হবেনারে ভুল।

পরিশেষে আমার বিরাট অভিযোগ আছে ব্ল্যাকমেইল ছবির পোষ্টার নিয়ে। এ পর্যন্ত যতোগুলো পোষ্টার দেখলাম সব গুলোতেই মিলনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আর মৌসুমী এবং ববি দাঁড়িয়ে আছে দুই পাশে। একটা ছবিতেতো রীতি মতোন অশ্লীলভাবে নায়িকার ব্যাকসাইড দেখানো হয়েছে। কিন্তু কেন? নারীর শরীর দেখিয়ে অথবা পুরুষকে প্রাধান্য দিয়ে ছবির মার্কেটিং আর কতো কাল হবে এই দেশে ? পুরো ছবি দেখলেই বোঝা যায় এখানে রোমিওর কোন কেরামতি নেই, সব কেরামতি নারী চরিত্রকে ঘিরে। তারপরো কেন এমন অবিবেচক পোস্টার লাগানো হচ্ছে যত্র তত্র? এতে ছবির মান কমে, শরীর দেখিয়ে দর্শক টানতে চাওয়ার দিন কবে যে শেষ হবে তা কে জানে।


Leave a reply