Select Page

‘শনিবার বিকেলে’ ও ‘পাঠান’ একই দিনে, তাতেও খুশি জাজ?

‘শনিবার বিকেলে’ ও ‘পাঠান’ একই দিনে, তাতেও খুশি জাজ?

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে বলিউড সিনেমা ‘পাঠান’ মুক্তিতে কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি মাত্র। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সব পক্ষসহ সরকারের মন্ত্রীও প্রকাশ্যে একমত জানিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে মুখ খুলল সিনেমা হলে প্রজেক্টর থেকে প্রযোজনা, সব ক্ষেত্রে  লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া।

শোনা যাচ্ছে, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাবে জাজ প্রযোজিত ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘শনিবার বিকেল’। একই দিন পর্দায় আসতে পারে শাহরুখ খানের ‘পাঠান’। এমন প্রতিযোগিতায় খুশি বলে জানিয়েছে আব্দুল আজিজের প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে গতকাল ২৮ জানুয়ারি ফেসবুকে প্রকাশিত বিবৃতিটি পড়তে পারেন—

প্রসঙ্গ: পাঠান – বাংলাদেশে মুক্তি ও শিল্পী সমিতি

পাঠান বা ভারতীয় সিনেমা বাংলাদেশে মুক্তি দিলে কী লাভ কী ক্ষতি, তা তুলে ধরছি।

‘পাঠান’ যদি বাংলাদেশে ৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায়, ক্ষতি হবে আমার! কারণ জাজের ‘শনিবার বিকেল’ একইদিন মুক্তি পাবে। তবুও জাজ চায় ‘পাঠান’ মুক্তি পাক। এতে বাংলা সিনেমার জন্য ভাল হবে।

যেমন:

১) অনেক নতুন সিনেমা হল খুলবে। এতে আমরা আমাদের বাংলা সিনেমা মুক্তি দিয়ে বাংলাদেশের প্রযোজকগণ লাভবান হবে। প্রযোজক লাভবান হ’লে আরও বেশি সিনেমা নির্মাণ হবে।

২। হিন্দি সিনেমা চালাতে হ’লে, সব হল কে 5:1 সাউন্ড সিস্টেম করতে হবে। সবাইকে DPC এর অধ্যয়নে আসতে হবে; অন্তত e-cimema করতে হবে। এতে বাংলা সিনেমাগুলো ভালো সিস্টেমে চলবে।

৩। দ্রুত অনেক বেশি সিনেপেক্স তৈরি হবে। আমাদের বিশ্বাস, ভারতীয় সিনেমা আসলে ২০২৪ সালের মধ্যেই ১০০টি সিনেপ্লেক্স হয়ে যাবে। তখন বাংলা সিনেমার প্রযোজকরা ১ সপ্তাহে, তাদের মূলধন ফিরে পাবে। ফলশ্রুতিতে, প্রযোজকরা আরও বেশি সিনেমা নির্মাণে এগিয়ে আসবে। আমাদের সকল শিল্পী ও কলাকুশলী বেশি বেশি কাজের সুযোগ পাবে।

৪। যদি ভারতীয় সিনেমা না আসে, যে হলগুলো আছে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। সিনেপ্লেক্স বাড়বে না। তাহলে, কে বানাবে বাংলা সিনেমা?

৫। বর্তমানে আমাদের সিনেমা বানাতে OTT সেল এর উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ১০০ মাল্টিপ্লেক্স হয়ে গেলে আমাদের OTT এর উপর নির্ভর করতে হবে না, আমাদের হলগুলো যথেষ্ট হবে।

৬। ভারত-পাকিস্তান চিরশত্রু। তারপরও তাদের দেশে ভারতীয় সিনেমা মুক্তি পায়। ফলশ্রুতিতে, সেখানে ৪০০ এর মতো সিনেপ্লেক্স হয়েছে। এখন পাকিস্তানী সিনেমা ১০০ কোটি রুপি ব্যবসা করে। আমাদের দেশে ৪০০ সিনেপ্লেক্স হয়ে গেলে, আমাদের সিনেমাও ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা করবে।

কিন্তু ভারতীয় সিনেমা মুক্তি দিতে হলে কিছু শর্ত প্রযোজ্য। শিল্পী সমিতির লাভের ১০% নেয়ার পক্ষে আমরা না। আমরা মনে করি, ১০% না নিয়ে শিল্পী সমিতির এমন কিছু দাবি করা; যা তাদের শিল্পীদের কাজে দিবে। শিল্পীরা কাজ করলে তাঁদের আর কারো সহযোগিতার প্রয়োজন পড়বেনা। শিল্পী সমিতির যে দাবিগুলো করা উচিৎ।

যেমন:

১। সিনেপ্লেক্স বা সিঙ্গেল স্ক্রিন হোক, সবাইকে কমপক্ষে ৬০% বাংলাদেশী সিনেমার শো রাখতে হবে; আর সর্বোচ্চ   ৪০% বিদেশী সিনেমার শো রাখতে পারবে। এটা হ’তে হবে প্রতিদিনের হিসেবে এবং প্রাইম টাইমে কমপক্ষে ২ টা শো বাংলাদেশী সিনেমা চালাতে হবে। ফলে, সিনেমা হলগুলো

~ সকাল ৯-১২ বিদেশী সিনেমা

~ দুপুর ১২-৩ বিদেশী সিনেমা

~ বিকাল ৩-৬ বাংলাদেশী সিনেমা

~ সন্ধ্যা ৬-৯ বাংলাদেশী সিনেমা

~ রাত ৯-১২ বাংলাদেশী সিনেমা

ফলশ্রুতিতে, ভারতীয় সিনেমার সাথে হল মালিকগণ বাংলাদেশ সিনেমা চালাতে বাধ্য হবে। এতে বাংলাদেশী প্রযোজকরা লাভবান হবে। প্রযোজকেরা লাভ করলে বেশি বেশি সিনেমা নির্মাণ হবে। বেশি বেশি সিনেমা হলে, শিল্পীরা বেশি বেশি কাজ পাবে।

২। যৌথ প্রযোজনা ও বিদেশে শ্যুটিং আগের মতো সহজ করতে হবে। আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন, জাজ মাল্টিমিডিয়া ১৩টি যৌথ সিনেমা বানিয়েছিল। এরমধ্যে শুধু মাত্র ২টি সিনেমাতে ভারতীয় শিল্পী বেশি ছিলো, আর বাকি ৯ টি সিনেমাতে বাংলাদেশী শিল্পী বেশি ছিলো। যেমন ‘অঙ্গার’-এ ভারতীয় শিল্পী ছিলো ৪ জন আর বাকি ২৫ জন ছিলো বাংলাদেশী শিল্পী। ‘নিয়তি’-তে সবাই ছিলো বাংলাদেশী শিল্পী শুধু ছোট ছোট ৩টা চরিত্রে ছিলো ভারতীয় শিল্পী । কিন্তু ২টা সিনেমার জন্য আন্দোলন হয়েছিল কেন?

হয়েছিল এক নায়ক কাম প্রযোজক কাম নেতার জন্য। সে চেয়েছিল, আমরা যেন শাকিব খানের ‘নবাব’ ইদে রিলিজ না দেই, তাহলে সে তার সিনেমা ঈদে দিতে পারবে। আমাদের এমন প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। আমরা রাজি হয়নি। শুরু হয় আন্দোলন। 

এরপর জাজ আর কোলকাতার সাথে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণে যায়নি। এতে কি জাজের কোন ক্ষতি হয়েছে? জাজ জাজের মতন আছে। ক্ষতি হয়েছে এই দেশের শিল্পী ও কলাকুশলীদের!

জাজ আর কখনো কোলকাতার সাথে যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেনা, করলে হলিউডের সাথে করবে। কিন্তু, অন্য প্রযোজকদের জন্য যৌথ প্রযোজনা চালু করা উচিৎ। কিন্তু, বর্তমানে যে শর্ত আছে, সেগুলো শিথিল করতে হবে। কী শিথিল করতে হবে আমরা তা জানি।

৩। যৌথ প্রযোজনা বাড়লে আমদানী এমনিতেই কমে যাবে। দেশী হল এবং শিল্পী ও কলাকুশলীরা উপকৃত হবে।

আশাকরি, শিল্পী সমিতিসহ চলচ্চিত্রের সকল সমিতিগুলো উপড়ের ব্যাপারগুলো অনুধাবন করে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।

(উল্লেখ্য ২০১৯ সাল থেকে পাকিস্তানে থেকে ভারতীয় সিনেমা নিষিদ্ধ। দেশটির ২০০ কোটি রুপি আয়ের প্রথম ছবি ‘দ্য লিজেন্ড অব মওলা জাট’ মুক্তি পায় ২০২২ সালে। এটি ছাড়া কোনো ছবিই ১০০ কোটির ঘর পার হয়নি। তবে ৭৩ কোটি রুপির বেশি আয়ের রেকর্ড পাওয়া যায়। সিনেমাটি ভারতে মুক্তির কথা থাকলেও পরে অনুমতি পায়নি। এ ছাড়া তিন দশক আগে পাকিস্তানে ৯৮১টি সিনেমা হল থাকলেও বর্তমানে এই সংখ্যা ১৩৫।)


মন্তব্য করুন